বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বপ্রথম পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। এই দ্বীপ পুঞ্জটি সেকাল থেকে একালে জন্ম দিয়েছে কত রথী-মহারথী ক্রিকেটারদের। যদিও দলগত ভাবে বর্তমানে ক্যারিবিয়ানদের পারফরমেন্স খুব একটা সুখকর নয়। তাই বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এখন আর ক্রিকেটার তৈরি হচ্ছে না সেকথা বলা যাবে না। দেশটির কত ক্রিকেটার এখনো দুনিয়ার নানা প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়াচ্ছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ গুলোতে ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের দলে নেয়ার জন্য নিলামে রীতিমত লড়াই করে দলগুলো।
তবে অনেক বছর ধরে চলতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেটারদের মধ্যকার দ্বন্দের কারণে অনেক নামী ক্রিকেটারকেই মেরুণ জার্সি গাঁয়ে খেলতে দেখা যায় না। বোর্ডের সাথে নানাবিধ সমস্যার কারণে তারা দেশের হয়ে খেলতে তেমন আগ্রহ দেখান না। কিছু ক্রিকেটার তো দেশ ছেড়েই চলে গিয়েছেন খেলার জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজে জন্ম নিয়ে পরবর্তীকালে খেলেছেন অন্য কোনো দেশের হয়ে।
- জোফরা আর্চার (ইংল্যান্ড)
বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ড দলের স্পিড স্টার। অথচ এই পেস বোলারের জন্ম বার্বাডোজে। ২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ইংল্যান্ডকে তাঁদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে কিছু বড় শট খেলার জন্যও বেশ পারদর্শী এই পেসার।
- ক্রিস জর্ডান (ইংল্যান্ড)
জোফরা আর্চারের বোলিং পার্টনার জর্ডানেরও জন্ম বার্বাডোজে। ৩২ বছর বয়সী এই ডান হাতি পেস বোলারও ব্যাট হাতে শট খেলতে পারেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ৮ টি টেস্ট,৩৪ টি ওয়ানডে,৫৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।
- গ্ল্যাডস্টোন স্মল (ইংল্যান্ড)
ইংলিশদের হয়ে প্রায় ৬ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন এই ফাস্ট বোলার। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে তিনি ১৭ টি টেস্ট ও ৫৩ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। তাঁর জন্মও আর্চার,জর্ডানদের মত বার্বাডোজেই।
- রোল্যান্ড বুচার (ইংল্যান্ড)
বার্বাডোজে জন্ম নেয়া রোলেন্ড বুচার ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র তিনটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। মজার বিষয় হচ্ছে এই লেগ স্পিনার ইংল্যান্ডের যে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তাতে একটি বল ও করেননি। তবে ব্যাট হাতে তিনি মোট ৫৮ রান করেছিলেন। তাঁর প্রসঙ্গে একটা কথা না বললেই নয়, উয়েফার কোচিং লাইসেন্স পাওয়া একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার তিনি।
- ক্রিস লুইস (ইংল্যান্ড)
ক্রিস লুইসের জন্ম গুয়ানার জর্জটাউনে। ডান হাতি এই পেস বোলার ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। তিনি ইংলিশদের হয়ে ৩২ টি টেস্ট ও ৫৩ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন। এই পেসারের ঝুলিতে রয়েছে ৯৩ টি টেস্ট উইকেট এবং ৬৩ টি ওয়ানডে। তবে, ক্যারিয়ার শেষ করে তিনি অবশ্য বিপথগামী হয়েছেন। চোরাকারবারি হিসেবে জেলও খেটেছেন।
- মন্টে লিঞ্চ (ইংল্যান্ড)
মন্টে লিঞ্চও গায়ানায় জন্ম নেয়া আরেকজন ক্রিকেটার যিনি পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। তবে তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েই খেলেছেন। তবে মাঝে এই স্পিনার ইংল্যান্ডের হয়ে ১৯৮৮ সালে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন।
- নরম্যান কাওয়ান্স (ইংল্যান্ড)
জ্যামাইকান এই পেস বোলার ইংল্যান্ডের হয়ে ১৯টি টেস্ট ও ২৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। টেস্টে তাঁর দুই বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তিও রয়েছে। কাওয়ান্স তাঁর ক্যারিয়ারে ৫১ টি টেস্ট উইকেট এবং ২৩ টি ওয়ানডে উইকেট নিয়েছেন।
- স্যামি গুইলেন (নিউজিল্যান্ড)
উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান স্যামি গুইলেন প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে শুরু করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েই। ১৯২৪ সালে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার পরবর্তীকালে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান। নিউজিল্যান্ডের হয়ে পরে টেস্টও খেলেন তিনি। তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে মোট ৮ টি টেস্ট খেলেন এবং তাঁর সংগ্রহ মোট ২০২ রান।
- জেভিয়ার মার্শাল (আমেরিকা)
আরেকজন ক্যারাবিয়ান ক্রিকেটার যিনি প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেন তবে পরবর্তীতে আমেরিকায় পাড়ি জমান। জ্যামাইকান এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান আমেরিকার হয়ে ১৩ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন।
- ক্লেটন ল্যামবার্ট (আমেরিকা)
১৯৬২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারবাইসে জন্ম নেন এই ক্রিকেটার। বাঁ-হাতি এই অলরাউন্ডার মূলত তাঁর দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েই অধিকাংশ ম্যাচ খেলেছেন তবে তিনি পরবর্তীকালে আমেরিকার হয়েও ক্রিকেট খেলেন। ৪২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার হয়ে ক্রিকেটে ফেরেন।