প্রত্যেকে আমরা পরের তরে

ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ক্রিকেট ইতিহাসে দুর্দান্ত স্পোর্টসম্যানশিপের উদাহরণ কম নয়। মাঠে এবং মাঠের বাইরে এমন অনেক ঘটনাই আছে যেখানে ক্রিকেটাররা স্পোর্টসম্যানশিপ দেখিয়েছে। শচীন টেন্ডুলকার থেকে রাহুল দ্রাবিড় – ভারতীয় ক্রিকেটারদের স্পোর্টসম্যানশিপের ঘটনাও কম নয়। ক্রিকেট মাঠে অনেকবারই প্রতিপক্ষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু ভারতীয় ক্রিকেটার। তেমনই কিছু ঘটনা আজকে জানবো:

  • ‘স্কটিশ’ দ্রাবিড়

২০০৩ সালে রাহুল দ্রাবিড়কে স্কটল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। কাউন্টির আসরে তখন অংশ নিতো স্কটল্যান্ড, আর সেখানে বিদেশি খেলোয়াড় রাখার সুযোগ ছিল। মূলত দলকে টেনে তুলতে শচীন টেন্ডুলকারকে চেয়েছিল স্কটিশরা।

তবে, ভারতের কোচ জন রাইট শচীনের জায়গায় দ্রাবিড়কে পাঠানোর কথা জানান। স্কটিশদের অনুরোধ মেনে নেন দ্রাবিড়। স্কটল্যান্ডের জার্সি গায়ে ষাটের বেশি গড়ে ৬০০ রান করেন তিনি। এরপর আবার ফিরে আসেন ভারতের জার্সি গায়ে জড়াতে। পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সফরের একটা ম্যাচে তিনি খোদ পাকিস্তানের বিপক্ষেও স্কটল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামেন।

  • বাংলাদেশের অধিনায়কের ভূমিকায় ধোনি

অধিনায়ক হিসেবে বুদ্ধিমত্তা কিংবা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে মহেন্দ্র সিং ধোনির তুলনা হয়না। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে এক প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাট করার সময় প্রতিপক্ষের ফিল্ড সেট করতে সাহায্য করেছিলেন ধোনি।

বাংলাদেশ বনাম ভারতের ম্যাচ চলছিল। ইনিংসের ৪০ তম ওভারে তখন ব্যাটিংয়ে ধোনি। হুট করে বোলারকে থামিয়ে দিয়ে একজন ফিল্ডারকে স্কোয়ার লেগে আসতে বললেন। ধোনির প্রতি বাংলাদেশ দল অবশ্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে।

ওই ম্যাচে ৭৮ বলে ১১৩ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন ধোনি। বাংলাদেশকে ওই ম্যাচে ৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় ভার‍ত। খানিক সময়ের জন্য বাংলাদেশের অধিনায়কের ভূমিকায় আসলেও তাতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়নি।

  • দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে মানদ্বীপ সিং

২০১৫ সালে ভারত এ দলের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা এ দলের হয়ে ফিল্ডিং করেন ভারতীয় ক্রিকেটার মানদ্বীপ সিং। দক্ষিণ আফ্রিকা এ দল ও ভারত এ দলের সেই ম্যাচে প্রোটিয়াদের চার ক্রিকেটার অসুস্থ হয়ে পড়ায় মানদ্বীপ সিংকে দিয়ে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ফিল্ডিং করায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

ওই ম্যাচে অবশ্য আফ্রিকার বিপক্ষে সহজ এক জয় পায় ভার‍ত। উন্মুক্ত চাঁদ ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল ওপেনিং জুটিতে করে ২১৯ রান। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকান আগারওয়াল। দুই তারকার ব্যাটিংয়ে আট উইকেটের বড় জয় পায় ভারত।

  • দ্রাবিড়ের টোটকায় ইউনুসের পালটে যাওয়া ক্যারিয়ার

২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চলাকালীন রাহুল দ্রাবিড়ের রুমে যান পাকিস্তানি তারকা ইউনুস খান।। দ্রাবিড়ের কাছে ৫ মিনিট সময় চান ইউনুস। সেখানে দ্রাবিড়ের কাছে থেকে কিছু পরামর্শ নেন এই পাক ক্রিকেটার। সেখান থেকে না-কি বদলে যায় ইউনুসের ক্যারিয়ার।

ইউনুস বলেন, ‘আমি দ্রাবিড়ের কাছে যেয়ে ৫ মিনিট চেয়েছিলাম। তখন আমি জুনিয়র ক্রিকেটার। দ্রাবিড় আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমি তাঁকে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম, সেগুলোর কারণে আমার ক্রিকেটে অনেক পরিবর্তন আসে।’

২০১২ সালে দ্রাবিড় অবসরে যান। ইউনুস খান অবশ্য খেলে গেছেন ২০১৭ অবধি।

  • পাকিস্তানের হয়ে অভিষিক্ত শচীন

১৯৮৯ সালে নিজের অভিষেক সিরিজে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পাকিস্তানি বোলারদের উপর দাপটে দেখান কিংবদন্তি তারকা শচীন টেন্ডুলকার। তবে অভিষেকের আগে পাকিস্তানের হয়ে একবার ফিল্ডিং করেছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে ভারতের বিপক্ষে এক টেস্টে পাকিস্তানের হয়ে ফিল্ডিং করেন শচীন।

দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটার আব্দুল কাদির ও জাভেদ মিঁয়াদাদ মাঠের বাইরে যাওয়া বদলি খেলোয়াড় হিসেবে শচীনকে অনুরোধ জানানো হয় ফিল্ডিংয়ের জন্য। এরপর খানিক সময়ের জন্য পাকিস্তানের হয়ে ফিল্ডিং করেন শচীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link