নিউ রোড, ওরচেস্টার!
এই মাঠ সাক্ষী হয়েছে বহু ইতিহাসের। সেই ইতিহাসের পটভূমি খুঁজতে বসলে প্রথমেই আসবে ডন ব্র্যাডম্যানের নাম। টেস্ট ক্রিকেটের অমানবিক গড়ের ধারক এই মাঠেই চার ইনিংসে চার সেঞ্চুরি করেছিলেন। বিশ বছর ধরে যেটা কিনা এখনও একটা রেকর্ড হয়েই আছে। উস্টারশায়ার ক্রিকেটের এই মাঠ কিন্তু কিংবদন্তির আনাগোণাও কম দেখেনি। ট্রেড আর্নল্ড থেকে মঈন আল- মাঝে কত মহীরুহই তো এসেছে, চলেও গেছে! তবে আজকের এই গল্পটা এসব নিয়ে নয়!
১৯২৪ সালের কথা। উস্টারশায়ারের জন্যে মৌসুমটা একেবারেই ভাল যাচ্ছিল না। ১৪ ম্যাচ খেলে চার জয়, পয়েন্ট টেবিলের একেবারে তলানীর জায়গাটাও ১৪ নম্বরে মিলেছে ঠাই। তবে সেবার উস্টারশায়ারে খেলতে আসা নর্দাম্পটনশায়ারের অবস্থা ছিল উস্টারের চাইতেও বাজে। ১৭ দলের খেলাতে তারা ছিল শেষের দিক দিয়ে দ্বিতীয়, ১৬ তম!
মোদ্দা কথা, আগস্টে উস্টারশায়ার আর নর্দাম্পটনশায়ার ম্যাচটা ছিল একেবারে পয়েন্ট টেবিলের তলানীর দুই দলের লড়াই।
ম্যাচের প্রথম দিনেই ছিল বেরসিক বৃষ্টির বাঁধা। সে বাধা এতই তীব্র যে প্রথম দিনের খেলা শেষে স্কোরবোর্ডে উঠতে পেরেছে মাত্র এক রান। তা প্রথম দিনের বাঁধার পর আশা ছিল, দ্বিতীয় দিনে অন্তত খেলা মাঠে গড়াবে। কিন্তু ম্যাচের পরদিন রবিবারও যখন বৃষ্টি থেমে যাওয়ার কোন নামগন্ধ পাওয়া গেল না, খেলা দেখতে আসা দর্শকেরা তখন প্রকৃতির উপর বেশ বিরক্তই।
দর্শকদের বিরক্তি কেটে গেল একটু পরেই, বৃষ্টি থেমে গেল। খেলাও মাঠে গড়াল। নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে বোলিংয়ে নামলেন অ্যালবার্ট থমাস আর ভ্যালেন্স জুপ। উস্টারশায়ারের হয়ে ক্লিফ উইলসনের সাথে ব্যাটিংয়ে এলেন হামফ্রে গিলবার্ট। কিন্তু সেখানে আবার বাধল বিপত্তি। খেলোয়াড়েরা মাঠে নামা মাত্র আবার শুরু হল বৃষ্টির ঝাপটা।
বৃষ্টি শুরু হলে কি হবে, আম্পায়ার খেলা থামানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন না একদমই। ঠিক সেসময় এক অদ্ভুত কান্ড ঘটে গেল। নর্দাম্পটনশায়ার বোলারের করা একটি বল গিলবার্ট লেগ সাইড দিয়ে বের করে দিলেন, কিন্তু সেটা বাউন্ডারিতে গেল না। আবার সেটা ধরতেও কোন ফিল্ডার গেল না! আচমকা নর্দাম্পটনশায়ারের খেলোয়াড়েরা মাঠ ছেড়ে প্যাভিলিয়নের দিকে দৌড় দিলেন। মাঠে তখন শুধুই আম্পায়ার আর উস্টারশায়ারের দুই ব্যাটসম্যান।
উস্টারশায়ারের দুই ব্যাটসম্যান তখন আরো আকস্মিক এক কাজ শুরু করলেন, আম্পায়ার বেল ফেলে না দেওয়া অবধি দৌড়াতে থাকলেন!
এই দুই ব্যাটসম্যান ঠিক কতরান দৌড়ে নিয়েছিলেন তা অবশ্য ঠিক করে বলা যায়না, কিন্তু পুরো দৌড়টাই তাদের বৃথা গেছিল। কেননা আম্পায়ার থমাস ফ্লাওয়ার আর জন মস উস্টারশায়ারকে মাত্র দুই রানের বেশি দেননি!
সে ম্যাচে গিলবার্ট করেছিলেন ৬ রান। উস্টারশায়ারের স্কোরবোর্ডে ছিল ১৭৬ রান। ব্যাট করতে নেমে নর্থানেরা অল-আউট হয়ে গেছিল ১২৪ রানেই।
স্কোরকার্ড
উস্টারশায়ার: ১৭৬ (ভ্যালেন্স জুপ ৩-৬০, অ্যালবার্ট থমাস ৫-৪২) ও ১৬৯ (ফ্রেড রুট ৬০, ভ্যালেন্স জুপ ৪-৪৫)
নর্দাম্পশায়ার: ১২৪ (ফ্রেড রুট ৫-৩৬) ও ১৬৬-৬ (ক্লাউড উলি ৫১, ক্লিফ উইলসন ৩-৪৩)
ঠিক ৫০ বছর পর এরকম দৌড়ের আরেকটা ঘটনা ঘটে ১৯৭৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে। রয় ফ্রেডেরিকসের বলে জেফ থমসন একটা শট খেলেন, সবাই ভেবেছিল এটা ক্যাচ হয়েছে। কিন্তু আদতে ফিল্ডারেরা বল খুজেই পাচ্ছিল না। উইকেটে থাকা ডেনিস লিলি আর থমাস দুই জনেই তখন দৌড়াতে থাকলেন। লিলি পরে বলেছেন তারা দুই জনে দৌড়ে ১৭ রান নিয়েছিলেন, কিন্তু এবারও ‘বেরসিক’ আম্পায়ার দু’জনের দৌড়ের মর্ম বোঝেনি, দিয়েছিল মাত্র দুই রান!
ঠিক যেমনটা ঘটেছিল ৫০ বছর আগে!