ধোনির সমসাময়িকদের আক্ষেপনামা

তাঁর সাথে অভিষিক্ত হওয়া বাকি পাঁচজন কোথায়? ক্যারিয়ারে তাদের অর্জন কি? আজকের আলোচনাটা মূলত তাদের নিয়েই। ধোনির সাথে অভিষিক্ত সেই পাঁচজনের কেউই লম্বা ক্যারিয়ার গড়তে পারেননি। কেউই নিজেকে নিতে পারেননি সেরাদের তালিকায়।

২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। একই বছর ভারতীয় জার্সিতে ক্যারিয়ার শুরু করেন আরও পাঁচ ক্রিকেটার। এরপর ১৫ বছরের লম্বা ক্যারিয়ার শেষে ধোনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন সর্বকালের সেরা অধিনায়কের একজনে! জিতেছেন তিনটি আইসিসি ট্রফি। শূন্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে ধোনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন সাফল্যের চূড়ায়।

কিন্তু তাঁর সাথে অভিষিক্ত হওয়া বাকি পাঁচজন কোথায়? ক্যারিয়ারে তাদের অর্জন কি? আজকের আলোচনাটা মূলত তাদের নিয়েই। ধোনির সাথে অভিষিক্ত সেই পাঁচজনের কেউই লম্বা ক্যারিয়ার গড়তে পারেননি। কেউই নিজেকে নিতে পারেননি সেরাদের তালিকায়।

  • ইরফান পাঠান

২০০৩-০৪ মৌসুমে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে টেস্ট অভিষেক হয় সাবেক ভারতীয় অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান। এরপর ২০০৪-এর জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্নে ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হন তিনি। অবশ্য রঙিন পোশাকের অভিষেকটা মোটেও স্বরণীয় করতে পারেননি ইরফান। ১০ ওভারে ৬১ রানের বিনিময়ে কোনো উইকেট নিতে পারেননি তিনি।

এরপর বেশ কয়েক বছর তিনি বল হাতে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স করেন। দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে শিকার করেন টেস্ট হ্যাটট্রিক! সবকিছুই বেশ ভাল চলছিল! স্যুইং ভেলকিতে মুগ্ধও করেছিলেন সবাইকে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনযোগ দিতে গিয়ে বোলিং পারফরম্যান্স ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে থাকে। এরপর একটা পর্যায়ে বোলিংয়ের সেই ধারটাও হারিয়ে ফেলেন ইরফান। পরবর্তীতে দল থেকেও বাদ পড়েন। সবশেষ ২০১২ সালের অক্টোবরে ভারতের হয়ে খেলেছিলেন তিনি।

  • রোহান গাভাস্কার 

আগ্রাসী বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান এবং পার্ট টাইম স্পিন বোলার হিসেবেই পরিচিত রোহান গাভাস্কার। বাবা ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার হলেও নিজেকে সেই পর্যায়ে নিতে পারেননি রোহান। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে জায়গা করে নেন রোহান।

ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপুটে ব্যাটিং করলেও জাতীয় দলে সেটার বিন্দুমাত্র প্রমাণ করতে পারেননি। অপরাজিত ৫৪ রানের এক ইনিংস ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অর্জনটা শূন্য। রোহান ভারত জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ১১ টি ম্যাচ। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যান তিনি। অবসরের পর ধারাভাষ্য কক্ষে যোগ দেন তিনি। ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা বাবার মত না হলেও, ধারাভাষ্যে তিনি বাবার মতই দারুণ।

  • রমেশ পাওয়ার

ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন অফ স্পিনার রমেশ পাওয়ার। ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ছিলেন অনবদ্য। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতে রান করায় ছিলেন পারদর্শী। মূলত অলরাউন্ডার হিসেবেই খেলতেন তিনি। তবে জাতীয় দলে ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি রমেশ।

বল হাতে ঈর্ষনীয় পারফরম্যান্স করলেও ফিল্ডিংয়ে দূর্বলতা আর ইনজুরিতে খুব বেশি সময় ভারতের হয়ে খেলতে পারেননি তিনি। অবশ্য সে সময় অনিল কুম্বলে, হরভজন সিংরা থাকায় খুব একটা সুযোগও হয়নি তাঁর। ভারতের হয়ে দুই টেস্ট ও ৩১ ওয়ানডে খেলার সুযোগ পান তিনি।

  • দীনেশ কার্তিক

মহেন্দ্র সিং ধোনির অভিষেকের আগে ভারতীয় দলে ভাল একজন উইকেটরক্ষকের প্রয়োজন ছিল। উইকেটের পেছনে দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ধরার জন্য সে সময় দীনেশ কার্তিক বেশ পারফেক্ট ছিলেন। ব্যাটিংয়ে প্রতিভা আর স্ট্রোকের জন্য কার্তিককেই এই পজিশনে বিবেচনা করা হচ্ছিল।

তবে জাতীয় দলে আসার পরই টানা পারফর্ম করতে না পারার কারণে দলে থিতু হতে পারেননি কার্তিক। এর মাঝে ধোনি নিজেকে প্রমাণ করে ফেলেছিলেন তিনিই উইকেটরক্ষক হিসেবে বেশি যোগ্য। যার দরুন কার্তিক সুযোগ পেলেও হতাশাজনক ব্যাটিংয়ের কারণে বাদ পড়ে যান। ধোনি থাকায় দলে নিয়মিত হয়ে উঠতে পারেননি আর কখনোই।

  • যোগিন্দর শর্মা

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মিসবাহ উল হককে শেষ উইকেটে আউট করে ভারতকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন পেসার যোগিন্দর শর্মা। তখন উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো ছিলেন ধোনি। এমনকি ধোনির সাথে একই ম্যাচে ক্যারিয়ার শুরু করেন জোগিন্দর।

তবে এরপর আর মাত্র দুই ম্যাচে খেলার সুযোগ পান তিনি। জোহানেসবার্গে মিসবাহকে আউট করা ওই বলই ছিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাঁর শেষ বল। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কিছু সময় খেলা চালিয়ে যান তিনি। তবে, এখন তিনি পুরোদস্তর একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...