একসময় রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভবিষ্যত ভাবা হতো তাঁকে। এনামুল হক বিজয়ের বয়স তখন ১৬ বছরও পেড়োয়নি যখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিভা নিয়েও কোন সংশয় ছিল না। মাত্র বিশ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেও বড় স্বপ্নই দেখিয়েছিলেন। তবে এরপর শুধুই পিছন পানে ছুটে চলার গল্প।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথমদিককার তারকা তিনি। এনামুলদের হাতে ধরেই এই ফরম্যাটটায় উপরে উঠতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ভরসার প্রতিদানও দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ কিছু ইনিংস খেলেছিলেন। তবে এরপর আর সেই এনামুলকে কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এনামুল একসময় হারিয়েই গেলেন। যদিও ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি মাচে ৫১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
ক্যারিয়ারের শুরুতে তামিমের ওপেনিং পার্টনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিতই করে ফেলেছিলেন প্রায়। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়ে গিয়েছিলেন। এরপর আরো দুটি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন খুব দ্রুতই। তবে এরপর আর ওয়ানডে ফরম্যাটে সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ৩৮ ম্যাচে ৩০ ব্যাটিং গড় নিয়েই থেমে আছে বিজয়ের ক্যারিয়ার।
এনামুল হকের মূল সমস্যাটা ধরা পড়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ কিছুদিন খেলে ফেলার পর। মূলত ফুটওয়ার্কেই পিছিয়ে পড়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান। বলের লাইনে যেতে অনেক দেরি করে ফেলতেন। ফলে একসময় বিজয়ের ব্যাট থেকে আর বড় ইনিংস আসতো না বললেই চলে। স্বাভাবিক ভাবেই সৌম্য, লিটনদের কাছে জায়গা হারান।
এরপর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বলতে এক বিপিএলেই বিজয়ের প্রমাণ করার সুযোগ। তবে এখানেও সেই একই সমস্যা। নিজের ফুটওয়ার্কের দুর্বলতাটা এখানেও ঘাটতে পারেননি। ফলে এই লিগেও খুব একটা সাফল্য পাননি কখনোই। এবারের আসরও বিজয় শুরু করেছিলেন বিজয়ের মত করেই। একেবারেই সাদামাটা।
সিলেট সানরাইজার্সের হয়ে প্রতি ম্যাচেই ওপেন করছেন তিনি। তবে মিরপুরে মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে ৪৫ রান করেন। ৪৫ বলে ৪৫ রানের সেই ইনিংসে সিলেট জয়ও পেয়েছিল। তবে আজ আবার চট্টগ্রামে শুরুর দিকের এনামুলকেই যেন মনে করিয়ে দিলেন।
লম্বা চুলের এক স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। ক্যাপ পরে উইকেটের চারপাশে দারুণ সব শট খেলছেন। যেন নিজের ফুটওয়ার্কের দুর্বলতাটা ভুলেই গেলেন। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে বোলারদের জন্য একেবারে দুঃস্বপ্নে পরিণত হলেন।
দলকে জেতাতে না পারলেও ৪৬ বলে ৭৮ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেছেন। ১৬৯.৯৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা এই ইনিংসটিতে ছিল ৯ টি চার ও ৩ টি ছয়। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির বলে নিজের উইকেট দিয়ে আসেন এই ব্যাটসম্যান। এই পেসারের হ্যাটট্রিকেই শেষ হয় সিলেটের ম্যাচ জয়ের আশা। তবুও, ম্যাচটাকে মনে রাখতে পারেন বিজয়। কে জানে, এখান থেকেই হয়তো নিজেকে পাল্টে ফেলার সূচনাটা করলেন তিনি।