খাজা নাফে। অখ্যাত, অচেনা ২২ বছরের তরুণ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। এমনকি লিস্ট এ ক্রিকেটও খেলেননি। এতো ‘না’-এর মাঝেই পাকিস্তান ক্রিকেটে হঠাৎই আলোচনায় এসেছেন এ তরুণ ব্যাটার। কেননা, খাজা তাণ্ডবেই চলতি পিএসএলে গত ম্যাচে জয় পেয়েছে কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্স। লাহোর কালান্দার্সের ১৮৭ রানের সংগ্রহও ম্লান হয়েছে খাজার ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো ৩১ বলে ৬০ রানের ইনিংসে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই অচেনা তরুণ? ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনো রকম পারফর্ম না করেও কীভাবে পিএসএলের মতো শীর্ষ লিগে সুযোগ পেলেন? চমকে যাওয়ার মতো তথ্য হলো, খাজা নাফের স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেকের মঞ্চটা ছিল বিপিএল।
গত বছরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু। মূলত খাজা নাফের ব্যাটিংয়ের বেশ কিছু ভিডিও নজরে পড়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। আর তাতেই কোনোরকম ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিপিএলে সুযোগ পেয়ে যান তিনি।
ভিনদেশে টুর্নামেন্ট খেলতে এসে অবশ্য স্মরণীয় কিছু করে দেখাতে পারেননি। ৩ ম্যাচ সুযোগ পেয়ে করেছিলেন মোটে ১৩ রান। তবে বাংলাদেশ তাঁর কাছে স্মৃতিপূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে। পাকিস্তান থেকে সেবার বাংলাদেশে আসার সময় একটি মাত্রই ব্যাট এনেছিলেন খাজা নাফে।
দুর্ভাগ্যবশত, সেই ব্যাটটিও ভেঙে যায় টুর্নামেন্টের মাঝপথে। ব্যাটশূন্য খাজাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের আফিফ হোসেন ধ্রুব। টাইগার এ ক্রিকেটার সে সময় উপহার হিসেবে খাজাকে একটি ব্যাট দিয়েছিলেন।
তরুণ এ ব্যাটার সেই আতিথিয়তা পরবর্তীতে কৃতজ্ঞভরে প্রকাশ্যেও এনেছিলেন। বিপিএলে ব্যাট হাতে ভাল সময় না কাটালে খাজা নাফের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ ছিল সব সময়ই স্মৃতির প্রথম সারিতে। কারণ তাঁর শুরুটা যে হয়েছিল এই দেশ থেকেই। এরপর পেরিয়ে গেছে এক বছর। বিপিএলে আর সুযোগ হয়নি এ ব্যাটারের। তবে ঠিকই সুযোগ পেয়ে যান পিএসএলে।
আর সেই সুযোগ পেয়েই করলেন বাজিমাত। রোমাঞ্চে পূর্ণ ম্যাচটা কোয়েটাকে জেতালেন একক আধিপত্যেই। দেখে যেন বুঝার উপায়ই নেই, এই ব্যাটার পাকিস্তানের মাটিতে সবেমাত্র ২ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। খাজা নাফের পিএসএলে দল পাওয়ার ক্ষেত্রে দারুণ কোনো পারফর্ম্যান্স ছিল, এমনটি নয়।
তবে কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্সেরর থ্রো ডাউন স্পেশালিস্ট লিয়াকত আলী খান আবার খাজার কোচ ছিলেন। আর এই যোগসূত্রেই তিনি পিএসএলে সুযোগ পেয়ে যান। বাকিটা তো ইতিহাস।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের আগেই এ ব্যাটার নিজেকে চিনিয়ে ফেললেন পিএসএলের মঞ্চে এসে। ভবিষ্যতে পাকিস্তানের হয়েও নিশ্চয়ই এমন একটা মঞ্চ তৈরি করতে চাইবেন এ ব্যাটার।