ভারতের সুধীর কিংবা পাকিস্তানের জলিল চাচা – আইকনিক সাপোর্টার; ক্রিকেটাররা যখন মাঠ মাতায়, গ্যালারিতে তখন গলা ফাটান তাঁরা। লাল-সবুজের বাংলাদেশেও আছে এমন ক্রিকেট পাগল, তিনি শোয়েব আলী; টাইগার শোয়েব নামে যাকে চিনে পুরো বাংলাদেশ।
বাঘের বেশে বাংলাদেশের সব খেলায় মাঠে হাজির হন শোয়েব আলী। ফলে স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকের মাঝেও আলাদাভাবে চোখে পড়ে তাঁকে। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য তামিম ইকবালের অবসর, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়ার ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি।
ফরিদপুরে জন্ম নেয়া টাইগার শোয়েবের বাবা একজন ইমাম। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠলেও ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। জয়-পরাজয় কিংবা ফরম্যাট কোনটা নিয়েই ভাবতেন না তিনি; বাংলাদেশের খেলা হলে দেখতে বসে যেতেন। এমনকি সারা দিনব্যাপী টেস্ট ম্যাচ দেখতেও ক্লান্ত হন না এই ভক্ত।
ক্রিকেটের প্রতি শোয়েব আলীর এই ভালবাসা নেশাতে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে। বিশেষ করে ২০০৩ সালে মুলতানে বাংলাদেশের সেই বেদনাময় পরাজয় মেনে নিতে পারেননি তিনি; মনে হয়েছিল গ্যালারিতে বসে চিৎকার করলে হয়তো দুঃখ কমতো, ক্রিকেটাররাও খারাপ সময়ে সমর্থন পেতেন।
সেই ভাবনা থেকে গ্যালারিতে আসা যাওয়া শুরু হয় শোয়েব আলীর। তবে খেলোয়াড়দের চোখে পড়ার জন্য নতুন বুদ্ধি করেন তিনি। শরীরে জাতীয় পতাকার রং করে মুখে বাঘের মুখোশ এঁকে স্টেডিয়ামে চলে আসেন শোয়েব। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো টাইগার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। আর সেবারই বিশ্বকে চমকে দিয়ে দুই বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলঙ্কা ও ভারতকে ছিটকে দিয়ে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ।
ক্রিকেটের প্রতি শোয়েব আলীর প্রেম ভাষায় পুরোপুরি প্রকাশ করা যায় না। অসুস্থতা নিয়েও তিনি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছেন, প্রবল শীতের দিনেও খালি গায়ে বসে ছিলেন। পেশায় গাড়ি মিস্ত্রী হওয়ায় আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই বললেই চলে, তবু খেলা দেখার ব্যাপারে আপোস করেননি।
ভাল সময়ে তো সমর্থনের অভাব হয় না। তামিম, সাকিবরা চার-ছয় মারলে কিংবা তাসকিনরা উইকেট পেলে পুরো স্টেডিয়াম ফেটে পড়ে উল্লাসে। কিন্তু যখন টাইগার ব্যাটাররা আউট হন কিংবা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখান তখন চুপসে যায় সবাই। সেই চাপের মাঝেই শরীরের সব শক্তি দিয়ে চিৎকার করেন টাইগার শোয়েব; চেষ্টা করেন ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করতে।
তাইতো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে আত্নার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে শোয়েব আলীর। সেজন্যই হয়তো তামিম ইকবালের অবসরের ঘোষণায় বুক চাপড়ে কেঁদেছিলেন শোয়েব, মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়াতেও পেয়েছেন দুঃখ। যদিও কারো কারো কাছে এসব অতিরঞ্জিত, অতিআবেগ।
দুই একটা বিতর্ক সবারই থাকে; তামিম-মাহমুদউল্লাহ ইস্যুতে শোয়েবের আচরণ সবার মন মতো নাই হতে পারে; যুক্তির বিচারে অযৌক্তিকও বলা যায় হয়তো – কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি শোয়েবের প্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না; স্রেফ নি:স্বার্থ ভালবাসার টানেই গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্বের জানান দেন তিনি।