ডাকনামটা ‘বিফি’ হলেও লোকটার ভালো নাম স্যার ইয়ান টেরেন্স বোথাম। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার। প্রতিপক্ষকে ব্যাট কিংবা বল হাতে একাই ধসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন এই ইংলিশ তারকা। ব্যাটিং, বোলিং – দুই বিভাগেই সমানতালে পারফর্ম করতে পারতেন। তর্ক সাপেক্ষে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারও মানা হয় বোথামকে।
বাইশ গজের এই বেপরোয়া ক্রিকেটার ছিলেন মাঠের বাইরেও ব্যাড বয়। তাঁর জাদুকরী ক্যারিয়ারের পাশাপশি তিনি বিতর্কিত আচরণের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। আর এগুলো তাঁর ক্যারিয়ারকে প্রভাবিত করেছিল। একবার তো ১৯৮৪ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে গাঁজা গ্রহণ করার অপরাধে ১৯৮৬ মৌসুমে তাঁকে দুই মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বোথাম ক্যারিবিয়ান সফরের পরই গাঁজা সেবনের কথা স্বীকার করেছিলেন।
সেই দিনগুলিতে ক্রিকেটভক্ত ও ক্রিকেটবোদ্ধারা খেলোয়াড়দের আচরণ এবং মাঠের বাইরে তাদের কর্মের উপর অনেক ফোকাস করতেন। স্বাভাবিকভাবে ইয়ান বোথাম গাঁজার ঘটনা ঘটিয়ে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছিলেন। এমনকি সংবাদপত্র এবং টিভি সাংবাদিকরা বোথামের উপর চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং তাঁকে আজীবন নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ইয়ান বোথাম যখন নিষিদ্ধ হয়ে মাঠের বাহিরে ছিলেন, সেই দুই মাসেই ইংরেজরা ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ হেরে গিয়েছিল। সংকটে পড়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড দলের অবস্থান। তারপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সাথে সাথে বোথাম দলীয় একাদশে প্রত্যাবর্তন করেন।
ঠিক সেই সময়ে, ইয়ান বোথামের টেস্ট উইকেট সংখ্যা ছিল ৩৫৪ টি। যা বিশ্ব রেকর্ডধারী ডেনিস লিলির থেকে মাত্র এক কম। ওভালে এটি ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের তৃতীয় এবং শেষ টেস্ট। যেখানে ইংল্যান্ড ইতোমধ্যেই ০–১ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে ছিল।
১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট তৃতীয় টেস্টটিতে টসে জিতে ইংরেজরা বোলিং এর সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাটিংয়ে নেমে নিউজিল্যান্ডের ওপেনার জন রাইট এবং ব্রুস এডগার ঝামেলা ছাড়াই ব্যাট করেন এবং প্রথম উইকেটে ১৭ রান যোগ করেন। তখন অধিনায়ক মাইক গ্যাটিং বোথামের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন। প্রায় ৬৩ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর, ইয়ান বোথাম তাঁর প্রত্যাবর্তিত ওভারের প্রথম ডেলিভারিতেই উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এডগারের ব্যাটের প্রান্তে লেগে বলটি স্লিপে গ্রাহাম গুচের কাছে উড়ে যায় এবং তিনি আনন্দের সাথে ক্যাচটি তুলে নিয়েছিলেন। বোথামের জন্য টেস্ট ক্রিকেটে তা দুর্দান্ত ফিরে আসা ছিল। গুচ তখন চিৎকার করে বোথামকে বলেছিলেন, ‘বিফি, তোমার জীবনের চিত্রনাট্যগুলো কে লেখে?’
বোথাম তাঁর ১০২ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩৮৩ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড করেন। এবং টেস্টে তাঁর রানসংখ্যা ৫২০০। আবার ১১৬ টি ওয়ানডে ম্যাচে তিনি ১৪৫ টি উইকেট ও ২১১৩ রান করেছেন।
মাঠের ‘ভাল ক্রিকেটার’ অথচ মাঠের বাইরের ব্যাডবয় বোথামের জীবনে আরও কলঙ্ক ছিল। তিনি তাঁর স্ত্রী ক্যাথি বোথামের সঙ্গে প্রতারণা করে নিন্দিত হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান ওয়েট্রেস কাইলি ভেরেলসের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। ওদিকে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে কাইলিকে বিয়ে করার কথা দিয়ে সে কথারও বরখেলাপ করেছিলেন তিনি।
ব্যক্তিজীবনকে উপেক্ষা করে যদি কেবল ক্রিকেটার ইয়ান বোথামের দিকে আলোকপাত করা যায়, তবে একজন অসাধারণ ক্রিকেটারের সন্ধান পাওয়া যাবে। আবার কে জানে, ব্যক্তিগত বিতর্কিত জীবনটা না থাকলে, বোথাম হয়তো আজকের গ্রেট ইয়ান বোথাম হতেই পারতেন না!