বিশ্বকাপ জয়ের চক্রপূরণ হল অস্ট্রেলিয়ার। ওয়ানডে বিশ্বকাপে তাঁরা অজেয় দল। ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ – পাঁচবার জিতেছে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের শিরোপা। তবে, এতদিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপাটা অধরাই ছিল। মরুর বুকে সেই অধরা স্বপ্ন ধরা দিল অজিদের। প্রথমবারের মত কোনো অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের হাতে উঠলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা।
মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অজিদের পারফরম্যান্স যেমন আলেচিত হল, তেমনি মাঠের বাইরেও তাঁরা আলোচনার ঝড় তুলল। বিশেষ করে বিশ্বকাপ জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার উদযাপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক রকম আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
১৪ নভেম্বর রোববার রাতে, দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া দল আট উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় প্রতিবেশি দেশ নিউজিল্যান্ডকে। নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ১৭৩ রানের লক্ষ্যে তাঁরা মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ও সাত বল বাকি থাকতেই পৌঁছে যায় জয়ের দুয়ারে।
ফাইনালের এই জমজমাট ম্যাচ শেষে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপের অফিসিয়াল ফেসবুক ও টুইটার পেজ থেকে শিরোপা বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের উল্লাসের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, দলীয় ছবি তোলার পরে বিচিত্র এক কায়দায় দলের সবাই এক হয়ে জয় উদযাপন করছেন।
সেখানে, হঠাৎ পা থেকে জুতো খুলে তাঁর মধ্যে বোতল থেকে বিয়ার ঢালেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ও সেমিফাইনালের নায়ক ম্যাথু ওয়েড। তারপর জুতো থেকেই সেই বিয়ার পান করলেন।
এরপর তাঁর দেখা দেখি একই কাজ করতে দেখা যায় অলরাউন্ডার মার্কাস স্টোয়িনিসকেও। তিনি নিজের নয়, বরং সতীর্থ ওয়েডের জুতো থেকেই বিয়ার পান করেন। এখানেই শেষ নয়, এরপর একে একে বেশ কয়েক জন ক্রিকেটারকে সেটা করতে দেখা যায়।
টুর্নামেন্ট জিতলে বা বড় কোনো ম্যাচ জিতলে, বা অ্যাশেজের মাঠের মধ্যে অনেক দলকেই বিয়ার বা শ্যাম্পেইন খেতে দেখা যায়। শ্যাম্পেন ছিটিয়ে উদযাপন করাও খেলাধুলার জগতে খুব পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু, সরাসরি জুতা থেকে বিয়ার খাওয়ার ঘটনা এর আগে দেখা যায়নি।
এখন প্রশ্ন হল, এই অদ্ভুত উদযাপনের কারণ কি? এভাবে জুতার মধ্যে বিয়ার ঢেলে খেয়ে কেন উল্লাস করলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা? যতদূর বোঝা গেল, অস্ট্রেলিয়াতে এই ধরনের উদযাপন নাকি খুব জনপ্রিয়। একে বলা হয় ‘শুয়ি’। শু মানে জুতো, সেখান থেকেই এসেছে শুয়ি।
অস্ট্রেলিয়ানরা মনে করে, এভাবে জুতো থেকে বিয়ার পান করে উল্লাস করলে অশুভ সময় দূরে চলে চায়, আর কোনো সৌভাগ্যের খবর আসে। এখানেই শেষ নয়, তাঁরা মনে করে কোনো নারীর জুতো থেকে শ্যাম্পেন পান করলে সেটা আরো বেশি সৌভাগ্যজনক।
যদিও, এই উদযাপনের রীতি প্রথম চালু হয় আমেরিকার শিকাগোতে, এভারলে ক্লাবে। সেটা ১৯০২ সালের ঘটনা। জনপ্রিয়তা পায় অস্ট্রেলিয়ায়। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান মটোজিপি রেসার জ্যাক মিলারও জুতো থেকে শ্যাম্পেন পান করে জয় উদযাপন করেছিলেন।
বুঝুন অবস্থা! প্রশ্ন থাকছেই – এই উদযাপনে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা বিধি কি আদৌ মানা সম্ভব?
অথচ, এই অস্ট্রেলিয়ান দলটাই সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে স্বাস্থ্যবিধির একগাদা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)। এমনকি দলের স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া প্রটোকল মেনে মাঠের মধ্যে কোনো খাবার গ্রহণ থেকে বিরত ছিল তাঁরা। একই নিয়ম মানতে হয়েছিল বাংলাদেশ দলকে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রোল অব অনার
- ২০০৭ সাল: চ্যাম্পিয়ন ভারত, রানার আপ পাকিস্তান
- ২০০৯ সাল: চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান, রানার আপ শ্রীলঙ্কা
- ২০১০ সাল: চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, রানার আপ অস্ট্রেলিয়া
- ২০১২ সাল: চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, রানার আপ শ্রীলঙ্কা
- ২০১৪ সাল: চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা, রানার আপ ভারত
- ২০১৬ সাল: চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, রানার আপ ইংল্যান্ড
- ২০২১ সাল: চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, রানার আপ নিউজিল্যান্ড