বিপিএল কেন অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের চেয়ে পিছিয়ে?

ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট নিয়ে পুরো বিশ্বে যেভাবে বিপ্লব শুরু হয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও মিলছে না মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। দেশের একমাত্র ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বয়স এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এমন বেহাল দশার কারণ কী?

ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট নিয়ে পুরো বিশ্বে যেভাবে বিপ্লব শুরু হয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও মিলছে না মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। দেশের একমাত্র ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বয়স এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এমন বেহাল দশার কারণ কী? অন্যান্য দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সাথে কেন পেরে ওঠে না বিপিএল? একই রকম প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন ধরন। তবে গলদটা একটা জায়গাতেই; বিপিএল নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট সংস্থার পরিকল্পনাহীনতা ও অদূরদর্শিতা।

বিপিএলে প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ হয় একটা দল গড়তে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে যারা দল গড়ে তাদের খরচ আরও বেশি। কিন্তু টুর্নামেন্টে শক্তিমত্তায় পার্থক্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবার লাভের খাতাটাই যেন শূন্যে গড়ায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, দিনশেষে শিরোপাজয়ী দলকে নিয়ে সবার ব্যস্ততা থাকলেও, ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মূল ব্যস্ততা শুরু হয় বিপিএল শেষের পর। কারণ কীভাবে লাভের খাতায় একটা অঙ্ক বসানো যায় সেটি নিয়েই যে তাদের বসতে হবে।

এ কথা এক প্রকার সত্যই যে, খেলাটা ক্রিকেট হলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট মানেই ব্যবসা। সেই ব্যবসা আর যাইহোক লোকসান করতে চান না কেউ। তাই বড় বিনিয়োগের প্রণোদনাও তো অনুমিতভাবেই চাইবেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু জন্মলগ্ন থেকেই বিপিএলের মডেলটাই এমন যে, ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে রেভিনিউ শেয়ার করে না বিসিবি।

২০১৯ সালে একবার এমন একটা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। কিন্তু কোনো লাভই হয়নি। উল্টো সে সময়ের বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য জালাল ইউনুসের দাবি করেছিলেন, এ আয় যদি তাঁরা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করেন পরের বছর টুর্নামেন্ট আয়োজন করাই কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রশ্নটা হচ্ছে, বিপিএল যদি দলগুলোর জন্য লস প্রজেক্টই হয়, তাহলে অন্যান্য ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলো কীভাবে এত সফল? এ ক্ষেত্রে আইপিএলের উদাহরণ টেনে আনাটাই শ্রেয়।লোকসান আইপিএলের দলগুলোকেও শুরুর দিকে গুনতে হয়েছে। প্রথম আসরে যেমন কেবল কলকাতা নাইট রাইডার্সই লাভের মুখ দেখেছিল। দীর্ঘ মেয়াদে লাভের ভালো সম্ভাবনা থাকলে স্বল্পমেয়াদের লোকসান মেনে নিতে রাজি থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যে সুবিধা পায়, বিপিএলে তেমনটা নয়।

আইপিএলের আয়ের উৎস মূলত স্পনসরশিপ, গ্রাউন্ড স্পনসরশিপ, টিভি সত্ত্ব, টিকিট মানি। আয় ভাগাভাগি হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে। আইপিএলের প্রথম মৌসুমে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ৮০ শতাংশ লাভের ভাগ দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। পরে সেটি ৬০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। সে হিসেবেই প্রতিটি দল প্রায় ১৫০ কোটি রুপি লাভের ভাগ পায়।

আইপিএলের একটি আয়ের বড় উৎস টিভি স্বত্ব। যেমন ২০২৩-২০২৭ মেয়াদে ভায়াকম-১৮ আইপিএলের টিভি স্বত্ব পেয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি রুপির বিনিময়। অর্থাৎ প্রতি ম্যাচের মূল্য প্রায় ১০০ কোটিরও বেশি। ২০০৮ সালে আইপিএল শুরু হওয়ার পর বিসিসিআই ১০ বছরে আয়করই দিয়েছে ৩৫০০ কোটি রুপি। আয় করেছে ১২ হাজার কোটি রুপিরও বেশি।

ভারতের এই বিশাল বাজারের তুলনায় বিপিএল এক অর্থে কিছুই নয়। বিপিএল থেকে বিসিবির আয় ৫০ কোটিও নয়। কিন্তু বিপিএলের পর শুরু হয়ে পিএসএলের গত আসরে পিসিবি আয় করেছে ৫ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি। যেখান আইপিএল আয় করেছে ৯২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি। এই অঙ্কটাই বলে দিচ্ছে তথাকথিত দ্বিতীয় সেরা লিগ দাবি করলেও বিপিএলের অবস্থান আদতে তলানিতে।

মূলত, বিসিবির পরিকল্পনাহীনতা, দীর্ঘমেয়াদী ভাবনার অভাবে বিপিএল শেষ পর্যন্ত ক্রীড়াসূচির একটা অংশ হয়ে রয়েছে। একটা ব্র্যান্ড হতে পারেনি। যেটা বিপিএলের অনেক পরে এসেও অনেকগুলো লিগ করে দেখিয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই মুহূর্তে বিপিএলের উত্থান কি আর সম্ভব? মূলত এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ একমাত্র বিসিবিই দিতে পারে। তবে সমাধান পথ হিসেবে তাদের আদতে সদিচ্ছা আছে কিনা সেটি নিয়েও সন্দেহ আছে।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...