দশ নম্বরই পেতে পারতেন।
প্রিয়তম বন্ধু নেইমার নিজের শরীর থেকে প্রিয় ১০ নম্বর জার্সিটা খুলে দিতে চেয়েছিলেন। মেসির জন্য প্রাণ দিতে পারেন; আর তো একটা নম্বর!
কিন্তু লিওনেল মেসি ১০ নম্বর নিলেন না।
এরপর পিএসজি ১৯ নম্বরের প্রস্তাব সামনে এনেছিলো। এটা মেসির বেশ প্রিয় একটা জার্সি। এক সময় বার্সেলোনাতেও ১৯ নম্বর ছিলেন। আর্জেন্টিনাতেও ১৯ নম্বর পরতেন। এই ১৯ নম্বর পরে রোনালদিনহোর সাথে বার্সায় এবং রিকেলমের সাথে আর্জেন্টিনায় কত স্মৃতি। কিন্তু স্মৃতির পরোয়া করলেন না মেসি। ১৯ নম্বরকেও ‘না’ বলে দিলেন।
তাহলে? উপায়?
মেসি বললেন-আমাকে ৩০ নম্বর দিন।
সে এক বিশাল হ্যাপার। ফরাসি লিগের নিয়ম অনুযায়ী ৩০ হলো রিজার্ভ গোলরক্ষকের জার্সি। অনেক কাণ্ড করে পিএসজি সেটাই ম্যানেজ করলো। এবং শেষ পর্যন্ত এই ৩০ নম্বর জার্সি পরেই প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের হয়ে দুনিয়ার সামনে এলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।
কিন্তু কেনো? মেসির এই ৩০ নম্বরের প্রতি এতো টান কেনো?
সারা দুনিয়ায় মাঝমাঠের সেরা খেলোয়াড়ের টান থাকে মূলত ১০ নম্বরের দিকে। মেসি নিজেও ১০ নম্বর হিসেবে পাকা ছিলেন। বার্সেলোনায় গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ১০ নম্বর পরছেন। আর্জেন্টিনাতেও রিকেলমের পর থেকে তিনি ১০ নম্বর পরে আসছেন। পেলে, ম্যারাডোনাও সারা জীবন ১০ নম্বর পরেছেন। ফলে সেরাদের ১০ নম্বর জার্সির প্রতি একটা টান থাকেই। আর মেসির তো অভ্যস্থতারও একটা ব্যাপার আছে। তাহলে তিনি ১০ ছেড়ে ৩০ কেনো নিলেন?
কারণ, এটা মেসির শুরুর বেলার জার্সি নম্বর।
মেসি যখন পিএসজিতে আসতে রাজি হলেন, নেইমার নাকি সরাসরি তাকে বলেছিলেন, তিনি ১০ নম্বর জার্সি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছেন। কিন্তু মেসি তক্ষনাৎ তাকে ‘না’ বলে দিয়েছেন। এরপর ১৯ নম্বরকেও ফিরিয়ে দিয়ে নিয়েছেন এই ৩০ নম্বর।
কারণ, এই ৩০ নম্বর জার্সি পরেই ইতিহাসের শুরু করেছিলেন মেসি।
লা মাসিয়া থেকে প্রমোশন পেয়ে যখন প্রথম বার্সেলোনা মূল দলে এলেন, তখন তার জার্সি নম্বর ছিল ৩০। আর এই জার্সি পরেই তার বিশ্বজয়ের শুরু। তখন ওই ৩০ নম্বর জার্সিটা মেসির কল্যানে আইকনিক নম্বরে পরিণত হয়েছিলো। ওটা পরেই তিনি পিচ্চি ছেলেটা থেকে সর্বকালের সেরা হওয়ার পথে হেটেছেন।
বোঝাই যাচ্ছে, পিএসজিতে খেলাটাকে নতুন একটা শুরু হিসেবে নিচ্ছেন লিওনেল মেসি।
মেসির এক ক্লাবে খেলা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তিনি আরেক ক্লাবে, আরেক দেশে কখনো নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন কি না; এ নিয়ে অনেকবার তাকে খোচা দেওয়া হয়েছে। ফলে বার্সেলোনা ছেড়ে এখন মেসিকে নিজেকে প্রমানের কিছুটা ব্যাপার তো রয়েই গেছে। এখন তাকে আসলে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।
বার্সায় জেতা ৩৫ টা ট্রফি হয়তো তার হয়ে কথা বলবে। কিন্তু নতুন ক্লাবে মেসি-সূলভ কিছু করতে না পারলে আবার প্রমাণ হয়ে যাবে যে, সমালোচকরাই সত্যি ছিলেন। তাই তাকে শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে। যেনো লা মাসিয়া থেকে এলেন বার্সেলোনায়; তেমনই বার্সেলোনা থেকে এলেন পিএসজিতে।
ফলে নতুন শুরুর সময় মেসির চাই সেই নম্বরটা। এই যাত্রায়ও তার চাই সেই পুরোনো সঙ্গীকে। ৩০ নম্বরেই তো তিনি নিজেকে আবার প্রমাণ করবেন।
মেসিকে এই ৩০ নম্বর জার্সি দিতে অবশ্য পিএসজি কতৃপক্ষর কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। তাদের এ জন্য ধরনা দেওয়া লেগেছিলো লিগ-ওয়ান কমিটির কাছে। যেহেতু এটা রিজার্ভ গোলরক্ষকের নম্বর, তাই কতৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি লেগেছে এ ক্ষেত্রে।
তবে পিএসজির এই ঝামেলাটা বৃথা যায়নি। জার্সি নম্বর যাই হোক না কোনো, তারা ইতিমধ্যে ব্যবসার থলি খুলে ফেলেছে। গতকাল মেসিকে আনুষ্ঠানিক উন্মোচনের সাথে সাথে পিএসজি তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে মেসির জার্সি বিক্রি শুরু করেছিলো। এমনিতে পিএসজির জার্সির নিয়মিত দাম ১০৭.৯৯ ইউরো; আমাদের প্রায় ১১ হাজার টাকা। মেসির ব্রান্ড ভ্যালুর কারণে দাম বাড়িয়ে দেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। দাম রাখা হয়েছিলো ১৫৭.৯৯ ইউরো; আমাদের টাকায় প্রায় ১৬ হাজার টাকা।
সেটাও মোটেও বেশি ছিলো না মেসিভক্তদের জন্য। কী হয়েছে জানেন?
আড়াই লাখ পিস জার্সি স্টকে রাখা হয়েছিলো। মাত্র ৩০ মিনিটে সব জার্সি বিক্রি হয়ে গেছে। এখন শুধু মেসির জার্সি বানানোর জন্য পিএসজির কারখানা খুলতে হবে আর কী!
নয়া ৩০ নম্বরের জাদু আর কী!