‘বিশ্বকাপ একটি মেগা-ইভেন্ট। এখানে আপনাকে প্রতিটি দলের সাথে খেলতে হবে সমপরিমাণ মনোযোগ, গুরুত্ব এবং তীক্ষ্ণতার সমন্বয়ে।’ – এমনটাই অভিমত পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ সাকলাইন মুশতাকের। অবশ্য তিনি কথাটি বলেছেন বিশ্বকাপের তাঁদের তৃতীয় ম্যাচকে ঘিরে। যেখানে তাঁরা মুখোমুখি হবে আফগানিস্তানের। ইতিমধ্যে আফগানিস্তান পেয়েছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘ডার্কহর্স’ খেতাব। তাঁদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে যে পাকিস্তান যথেষ্ট পরিমাণ সতর্ক সেই আভাসই দিলেন সাবেক স্পিন কিংবদন্তি সাকলাইন মুশতাক।
চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছে পাকিস্তান। নিজেদের চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারতকে হারিয়েছে তাঁরা দশ উইকেটে। ইতিহাস গড়া জয়। এর আগে পাকিস্তান কখনোই আইসিসির বৈশ্বিক আসরে জয় পায়নি ভারতের বিপক্ষে। বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের অনবদ্য ব্যাটিং নৈপুণ্যে ভারতের বিপক্ষেই বিশাল জয় নিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান।
সেই ঐতিহাসিক জয়ের মোমেন্টাম ধরে রেখে পাকিস্তান তাঁদের গ্রুপে থাকা আরেক শক্তিশালী দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও তুলে নিয়েছে পাঁচ উইকেটের আরেক বড় জয়। এতে করে প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই ইতিমধ্যে তাঁরা সেমিফাইনালের পথে এক পা দিয়ে রেখেছে। ‘প্রথম দুই ম্যাচ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস আমাদেরকে আগামী ম্যাচগুলোতেও নিজেদের উপর ভরসা রাখতে সহয়তা করবে।’, বলেন সাকলাইন মুশতাক।
বিশ্বকাপের আগে বেশকিছু দল পাকিস্তানের সাথে সিরিজ বাতিল করে। এতে করে পাকিস্তান দর্শক-সমর্থক থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের মধ্যে এক চাপা জেদ জমে গিয়েছিল। নিজেদেরকে সেরা প্রমাণের একটা বিশাল বড় মঞ্চ হয়ে সামনে এসেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। পাকিস্তান নিজেদের সবটুকু দিয়ে নিজেরদের সামর্থ্য প্রমাণের চেষ্টা করে ষোল আনাই সফল। এই বিষয়ে তাঁদের অন্তর্বর্তীকালীন বোলিং কোচ মুশতাক আরো বলেন, ‘ছেলেরা তাঁদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে প্রথম দুই ম্যাচে জয় তুলে নিতে।’
স্বভাবতই নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে গ্রুপে থাকা অপেক্ষাকৃত সেরা দুই দলকে হারানোয় খেলোয়াড়দের মধ্যে আলাদা এক উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। তাতে পরবর্তী ম্যাচ গুলোতে হোচট খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। সেই সম্ভাবনা থেকেই দলকে সাবধান করেছেন কোচ থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্টে থাকা সকলে। তাছাড়া অধিনায়ক বাবর আজমও দলকে জয় উদযাপন করার পাশাপাশি খুব বেশি উৎফুল্ল না হতেও অনুরোধ জানিয়েছেন ইতোমধ্যেই। দলের সবার কাছেই হয়ত ম্যাসেজটা স্পষ্ট। পাকিস্তান এবার খেলবে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে।
পাকিস্তানের তৃতীয় প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান অত্যন্ত ভয়ানক এক দল। অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁরা আনপ্রেডিক্টেবল। তাঁদের রয়েছে বিশ্বমানের স্পিনার। রশিদ খান, মুজিব উর রহমানের মত স্পিনিং জুঁটি, যারা কিনা ধ্বসিয়ে দিতে পারেন যেকোন শক্তপোক্ত ব্যাটিং লাইনআপ। তাছাড়া মোহাম্মদ নবীর মতো একজন অভিজ্ঞ অধিনায়ক রয়েছেন যিনি কি না বল হাতেও হয়ে উঠতে পারেন বিধ্বংসী। যার প্রমাণ স্কটল্যান্ড ম্যাচ। সেই ম্যাচে মুজিব-রাশিদ জুঁটির সাথে অসহায় আত্মসমর্পণ করে ১৩০ রানের পাহাড় সমান পরাজয় বরণ করতে হয় স্কটিশদের।
বোলিং ছাড়াও আফগানদের ব্যাটিং সমীহ করবার জন্যে যথেষ্ট। তাঁদের রয়েছে হযরতুল্লাহ জাজাই, নাজিবুল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ শাহজাদের মতো মারকুটে ব্যাটার। যাদের পেশিশক্তি রানের বন্যা বইয়ে দিতে পারে। তাঁদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ সমীহ করে পাকিস্তান কোচ সাকলাইন মুশতাক বলেন, ‘তাঁদের বোলিং আক্রমণ অসাধারণ, বিশেষ করে তাঁদের স্পিনাররা একটু বাড়তি প্রশংসা পাবার যোগ্য। তাছাড়া তাঁরা ঠিক তাঁদের মতো ব্যাটিং করতে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে। সত্যি বলতে তাঁরা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। এধরণের দল খুব বেশি ভয়ংকর।’
তাই পাকিস্তান আফগানিস্তানকে সমীহ করেই মাঠে নামবে। তাছাড়া পাকিস্তান কোনভাবেই তাঁদের মোমেন্টাম নষ্ট করতে চাইবে না। তাই দলের পক্ষ থেকে আফগানিস্তান ম্যাচকে ঘিরে কোন পরিবর্তন হবার ইঙ্গিত মেলেনি। বরং কোচ মুশতাক বলেছেন, ‘আমরা কোন দলের বিপক্ষে খেলছি সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। হতে পারে সে দল আফগানিস্তান কিংবা অন্য কেউ। তবে আমাদের আশানুরুপ ফলাফল পেতে হলে নিজেদের মাইন্ডসেট এবং পরিকল্পনা ঠিক রেখে কোয়ালিটি ক্রিকেট খেলতে হবে, যেমন ক্রিকেট পাকিস্তান সচারচর খেলে থাকে।’
তাছাড়া আফগানিস্তান বেশ সমীহ পাচ্ছে পাকিস্তানের। মুশতাক বলেন, ‘আমি মনে করি তাঁরা যথেষ্ট শক্ত প্রতিপক্ষ। তাঁদের বিপক্ষে আগাম কোন চিন্তাভাবনা পোষণ করা বেশ দুস্কর। তাঁদের বিপক্ষে খুব সহজেই জয় পেয়ে যাবো তা বলতে পারছি না।’
আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচটি জিতে গেলে পাকিস্তানের সেমিফাইলান একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যাবে। কেননা তাঁদের পরবর্তী দুই প্রতিপক্ষে স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া। যারা কি না গ্রুপ-২ এর অপেক্ষাকৃত দূর্বল দল। তাঁদের বিপক্ষে জয় পেতে খুব একটা বেগ পোহাতে হবে না ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের। সেই ম্যাচগুলোতে আসতে পারে বেশকিছু পরিবর্তনও। তবে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ শিরোপা পুনরুদ্ধারের এই যাত্রা শেষমেশ লক্ষ্যে ছুঁতে পারবে কি?