ভারতকে পথ দেখাচ্ছেন যিনি

ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ সবসময়ই  তাঁদের গর্বের জায়গা। তবে সেই ব্যাটিং লাইন আপই সম্প্রতি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের জন্য। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের সেরাটা দেখাতে পারছেন তাঁদের ব্যাটসম্যানরা। গত একবছরে কয়েকবারই কলাপ্স করেছে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ। এরমধ্যে দুইবার ১০০ রানের নিচেও অল আউট হয়েছে তাঁরা। ফলে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং নিয়ে চিন্তায় পড়েছে দলটি।

এই মুহুর্তে চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ বিরাট কোহলির বড় ইনিংস খেলতে না পারা। লম্বা সময় ধরেই সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছেন না। এখন অবধি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে রীতিমত ধুঁকছেন। ফলে ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরো গভীর হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্টেই মোটামুটি একই ফাঁদে পা দিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের বোলাররাও কোহলির সেই দুর্বলতা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন। কিন্তু এই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হওয়ার উপায় তবে কী।

তিন টেস্টেই ইংল্যান্ডের বোলাররা কোহলিকে চতুর্থ ও পঞ্চম স্ট্যাম্পে বল করে গিয়েছেন। বিরাটের কাভার ড্রাইভের প্রশংসা করেননি এমন কেউ বোধহয় নেই। তবে বিরাটের সেই শক্তির জায়গাকেই দুর্বলতায় পরিণত করেছেন ইংল্যান্ডের কন্ডিশন ও বোলাররা। এই কন্ডিশনে ফ্রন্ট ফুটে খেলতে গিয়ে বারবার পরাস্ত হচ্ছেন তিনি। ফলে বলগুলো এইজ হয়ে চলে যাচ্ছে কিপার কিংবা স্লিপে দাঁড়ানো ফিল্ডারদের হাতে।

তবে আরো দু:খজনক হচ্ছে এই কাজ শুধু বিরাট কোহলিই করছেন না। ভারতের মিডল অর্ডারের প্রায় সব ব্যাটসম্যানই একই ফাঁদে পা দিচ্ছেন। কাভার ড্রাইভের লোভে ফ্রন্ট ফুটে খেলছেন বারবার। কিন্তু ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে ইংল্যান্ডের পেসাররা বল যেভাবে স্যুইং করাচ্ছেন সেখানে ফ্রন্ট ফুটে খেলাটা যে কতটা বিপজ্জনক সেটা ভুলে যাচ্ছেন। অথচ এই ফাঁদে পা দেননি তাঁদেরই একজন।

ভারতের সেরা ওপেনার রোহিত শর্মার কথাই বলছি। এই তিন টেস্টে এখন পর্যন্ত তাকেই সবচেয়ে বেশি কার্যকর মনে হয়েছে। আসলে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে সফল হতে হলে পুরো দলকেই রোহিত শর্মার টেকনিক অনুসরণ করতে হবে। স্বভাবসুলভ ভাবে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হলেও ইংল্যান্ডে যথেষ্ট ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন।

রোহিত শর্মা ইংল্যান্ডের বোলারদের খেলছেন মূলত ব্যাকফুটে। ব্যাটে বল আসার জন্য অপেক্ষা করছেন। ফলে ইংল্যান্ডের পেসারদের স্যুইং তাঁকে মোকবেলা করতে হচ্ছেনা। এছাড়া কাভার ড্রাইভ করার চেষ্টাও করছেন না তিনি। আসলে তিনি এমনিতেও কাভার ড্রাইভের উপর নির্ভরশীল না। তিনি মূলত কাট, পুল ও হুক করতেই পছন্দ করেন। ফলে ইংল্যান্ডের পেসাররা তাঁকে স্লিপের ফাঁদেও ফেলতে পারছে না।

এছাড়া রোহিত শর্মার দারুণ ফুটওয়ার্কও এখানে তাঁকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। বলের লাইন আগেই পিক করতে পারার ক্ষমতাও তাঁকে এগিয়ে রেখেছে। ফলে অন্য ব্যাটসম্যানদের তুলনায় ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে স্বাচ্ছন্দে খেলছেন রোহিত শর্মা।

ওদিকে ভারতের এই হিটম্যান স্পিন বলেও যথেষ্ট শক্তিশালী। দারুন সুইপ শটও খেলতে পারেন। ফলে ইংল্যান্ড তাঁদের স্পিনার মঈন আলীকেও রোহিতে বিপক্ষে খুব একটা আনার চেষ্টা করছেনা। ফলে রোহিতকে নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।

ওদিকে ভারতের আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলও প্রথম দুই ম্যাচে এই টেকনিকে ব্যাট করে সাফল্য পেয়েছিলেন। তিনিও বলের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। ব্যাকফুটে গিয়ে খেলার চেষ্টা করেছেন। তবে তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের বোলারদের করা ফাঁদে পা দিয়ে আউট হয়েছিলেন।

ফলে সিরিজের বাকি টেস্টে ভারতকে ফিরে আসতে হলে অন্য ব্যাটসম্যানদেরও রোহিতের এই টেকনিক অনুসরণ করতে হবে। ইংল্যান্ডের এই কন্ডিশনে ভালো করতে হলে ব্যাকফুটে গিয়ে বলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ফলে এই কন্ডিশনে ভারতের পথপ্রদর্শক এখন রোহিত শর্মাই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link