২০১৮ সালে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ আর জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখকে সঙ্গে নিয়ে ’গোল ফর গোল্ড’ প্রজেক্টে হাত দিয়ে ছিল বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন। একবছর পরই হাতে নাতে ফলটা পেয়ে যায় তীর ধনুকের খেলাটি। বিশ্বকাপ আর্চারিতে ব্রোঞ্চ জিতে প্রথমবার সরাসরি অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন রোমান সানা।
এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নেপালের পোখরায় সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে ১০ টি ইভেন্টের সবকটিতে স্বর্ন জিতে নতুন দিগন্তে পা রাখে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। সেখানে তিন স্বর্নে সরাসরি অবদান দিন অলিম্পিয়ান রোমানের। এরপরই ছন্দপতন। জাতীয় আসরগুলোতে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ার কারণে রোমানের বিকল্পও চাওয়া শুরু হয়েছিল।
বিশেষত ফেডারেশন থেকেই বলা হলো, অলিম্পিকে রোমান নয় বাংলাদেশ কোয়ালিফাই করেছে। পরে আবারো ফেডারেশন তাকে সময় দিতে সম্মত হয়। কোচ ফ্রেডরিখও রোমানকে নিয়ে তাড়াহুড়ো না করে সময় দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এরপরই অনেকটা ’ফ্রি’ খেলতে দেওয়া হয় খুলনার এই তীরন্দাজকে। যার ফল কিছুটা বিলম্বে হলেও পেয়েছে বাংলাদেশ।
রিকার্ভের মিক্সড ইভেন্টে এখন ইতিহাসের দোড়গোড়ায় দাড়িয়ে বাংলাদেশ। রোমান সানা-দিয়া সিদ্দিকী জুটি এখন বিশ্বকাপ আর্চারীর ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। ‘গো ফর গোল্ড’ প্রজেক্টে স্বর্ন জয়ের খুব কাছাকাছি এখন বাংলাদেশের এই দুই আর্চার। রিকার্ভ এককে হতাশ করা এই দুই তারকা অনেকটা চমকে দিয়ে এই ইভেন্টের ফাইনালে উঠেন।
সুইজারল্যান্ডের লুজানে আর্চারী বিশ্বকাপ ষ্টেজ-২ এ ফাইনালে আগামী রবিবার মোকাবেলা করবেন নেদারল্যান্ডের ফন ডেন বার্গ-গ্যাব্রিয়েল স্কলসার জুটির বিপক্ষে। রোমানের কারণে প্রত্যাশার প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল রিকার্ভ একক ইভেন্ট। সেখানে চতুর্থ রাউন্ডের বেশি যেতে পারেননি তিনি। তবে পুরুষ রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে বাই পেয়ে এখনো টিকিয়ে রেখেছেন সম্ভাবনা। অন্যদিকে রিকার্ভ মেয়েদের এককে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল দিয়াকে। এককে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার এই জুটি এখন আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে বিশ্বসেরার এই টুর্নামেন্টে।
এককে ব্যর্থ হওয়ার পরই হয়তো পণ করেই মাঠে নেমেছিলেন। প্রথম রাউন্ডে ইরানকে ৫-৩ সেটে হারিয়ে শুভসূচনা করার পর দ্বিতীয় রাউন্ডে অনেকটা পরিস্কার ব্যবধানে ৫-১ সেটে জার্মানী হারিয়ে কোয়াটার ফাইনালে জায়গা করে নেয়। এই রাউন্ডে স্পেনকে হারাতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ ম্যাচে স্পেনকে ৫-৪ সেটে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা পায় রোমান-দিয়া জুটি।
শেষ চারে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে কানাডাকে ৫-৩ সেটে হারিয়ে এখন প্রথমবার ফাইনালে মঞ্চে বাংলাদেশের দুই প্রতিযোগী। সেমিফাইনালে প্রথম সেটে ৩৭-৩২ ব্যবধানে জয়ের পর দ্বিতীয় সেটে ৪০-৩৭ ব্যবধানে জেতেন এই জুটি। তৃতীয় সেট জিতে ম্যাচে ঘুড়ে দাড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছিল কানাডার দুই প্রতিযোগী। কিন্তু চতুর্থ সেটে ৩৫-৩৫ ব্যবধানে টাই হয়ে গেছে বাংলাদেশের ফাইনাল খেলা নিশ্চিত হয়ে যায়।
দুই বছর আগে নেদারল্যান্ডসে বিশ্ব আর্চারির রিকার্ভ এককে ব্রোঞ্চ জিতেছিলেন। এবার আরেকটি সাফল্যের সম্ভাবনায় রয়েছে তারা। এই আসরে খেলার আগে ঢাকা ছাড়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, সন্তোষজনক প্রস্তুতির কথা। একটা সোনার পদক হলেও জেতার আত্ববিশ্বাসের কথা শোনা গিয়েছিল দেশসেরা এই আর্চারের কন্ঠে। বিশ্বজয়ের জন্য এখন কয়েকটা দিনের অপেক্ষা।
আগেই অলিম্পিক খেলা নিশ্চিত হওয়ার রোমানের পাশে এবার ফাইনালে ওঠায় ওয়াইল্ড কার্ডের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে দিয়ার সিদ্দিকীর জন্যও। যদিও রির্কাভ ব্যক্তিগত ইভেন্টে রোমান ও দিয়া ফাইনালে উঠতে পারেননি বলে সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় আর্চারির মূল বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না।
এখন মিক্সড দলগত ইভেন্টের ফাইনালে ওঠাও অনেক বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এলিমিনিশন রাউন্ডে ইরানকে হারাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান রোমান ও দিয়া। এরপরের রাউন্ডে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা জার্মানিকে ৫-১ সেট পয়েন্টের ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ১৭ নম্বর র্যাংকিংয়ে থাকা বাংলাদেশ।
শেষ আটে ৯ নম্বরে র্যাংকিংয়ে থাকা স্পেনের সঙ্গে জিততে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে। জুন মাসে ফ্রান্সে বিশ্বকাপের স্টেজ -২ এর আরেকটি লড়াই অনুষ্ঠিত হবে। সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সের দুটি প্রতিযোগিতার পারফরম্যান্সের ওপরই এখন বাংলাদেশের আরেকটি অলিম্পিকের সরাসরি খেলার টিকিট প্রাপ্তি নির্ভর করছে। দলগত পর্যায়ে ওয়াইল্ড কার্ডের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
এখন ফ্রান্সে ভালো করলেই মিলে যেতে পারে টোকিও অলিম্পিকে খেলার টিকিট। এখন ফাইনালে জিতলেই ইউরোপের দেশে প্রথমবার বেজে ওঠবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। তখন ৬৫৯ স্কোর করে ৮০ প্রতিযোগীর মধ্যে ৩১তম হওয়া রোমান সানা আর ৬৩৪ স্কোর করে ৪৭তম হওয়ার দিয়া সিদ্দিকীর রিকার্ভ এককে ব্যর্থতার খবর কেউ রাখবে না।