ক্রিকেট দুনিয়ায় এখন টি-টোয়েন্টির জোয়ার চলছে। মোটামুটি প্রতিটি দলই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য একে অপরের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলছে। আগামী মাসেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের ক্ষদ্রতম এই সংস্করণের বিশ্বকাপ। এই আসরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই দলগুলো তাঁদের সেরা স্কোয়াড ঘোষণা করেছে।
বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হবেনা সেটা এক বিস্ময়কর ঘটনা। প্রতিটা দেশেই কেউ না কেউ থাকেই যারা জায়গা করে নিতে পারতেন বিশ্বকাপ দলে। তবে নানা হিসাব-নিকাশ, আলোচনার প্রেক্ষিতে তাঁদের আর জায়গা হয় না। বিশ্বকাপ দল থেকে থেকে বাদ পড়া এইসব ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি সেরা একাদশ করার চেষ্টা করেছে খেলা ৭১।
- তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)
তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার এটি নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড আছে তাঁর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর টি-টোয়েন্টি পারফর্মেন্স নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হলেও এই বিশ্বকাপ দলে তাঁর থাকার কথাই ছিল।
নির্বাচকরাও তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপে থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এই ওপেনার। ফলে আমাদের এই বাদ পড়া একাদশের ওপেনিং এর দায়িত্বে থাকবেন তিনি।
- শিখর ধাওয়ান (ভারত)
সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের সফল ওপেনারদের একজন শিখর ধাওয়ান। কিছুদিন আগেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।
ফলে বিশ্বকাপ দলে তাঁর জায়গা না পাওয়াটা বেশ বিষ্ময়কর। তবে তাঁর বদলে স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন ইষান কিষাণ। আমাদের একাদশে স্বাভাবিক ভাবেই তামিমের সঙ্গী হিসেবে থাকছেন শিখর ধাওয়ান।
- অ্যালেক্স হেলস (ইংল্যান্ড)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ধারাবাহিক পারফর্মার অ্যালেক্স হেইলস। বিশ্বজুড়ে নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে রান করে যাচ্ছেন তিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা ৬০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৩১.০১ গড়ে করেছেন ১৬৪৪ রান।
এই ফরম্যাটে একটি সেঞ্চুরিও আছে তাঁর। হেইলসের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইকরেট ১৩৬.৬৫। ফলে এই ফরম্যাটে যেকোন দলের জন্য কার্যকর হতে পারতেন তিনি। তবুও ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি তাঁর।
- শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিকও জায়গা করে নিতে পারেননি বিশ্বকাপ দলে। যদিও বিশ্বকাপে শোয়েব মালিকে ব্যাটিং পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপে বাড়তি শক্তি দিতে পারতেন।
পাকিস্তানের হয়ে খেলে ১১৬ টি-টোয়েন্টিতে রান করেছেন ৩১.১৩ গড়ে। এছাড়া আরব আমিরাতে খেলার অভিজ্ঞতাও তাঁর রয়েছে। এছাড়া বল হাতেও বেশ কার্যকর তিনি।
- ফাফ ডু প্লেসিস (দক্ষিণ আফ্রিকা): অধিনায়ক
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসেরই অন্যতম কার্যকর ব্যাটসম্যানদের একজন ফাফ ডু প্লেসিস। দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানও তিনি।
বিশ্বের নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন এই ব্যাটসম্যান। তবুও দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোয়াডে জায়গা হয়নি এই ব্যাটসম্যানের। তবে আমাদের এই একাদশের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম শক্তি হবেন ফাফ।
- টম ল্যাথাম (নিউজিল্যান্ড): উইকেটরক্ষক
সর্বশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও অধিনায়ক হয়ে এসেছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তবে, বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি তাঁর।
ল্যাথামের সবচেয়ে বড় গুণ হল তিনি এশিয়ান কন্ডিশনটা বুঝেন, যেটা আরব আমিরাতে কাজে লাগতো। আরেকটা সুবিধা হল তিনি যেকোনো পজিশনে ব্যাট করতে পারেন। তারপরও বিশ্বকাপ দলে তাঁকে রাখেনি নিউজিল্যান্ড।
- বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)
বেন স্টোকস এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার। তিন ফরম্যাটেই ইংল্যান্ডের ভরসার জায়গা স্টোকস। ব্যাট হাতে নানা পজিশনে খেলতে পারেন তিনি। এছাড়া বল হাতেও রয়েছে তাঁর কার্যকারিতা। ফলে এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ট্রাম্প কার্ড হতে পারতেন স্টোকস।
তবে, দুর্ভাগ্যবশত এই বিশ্বকাপে দেখা যাবে না এই অলরাউন্ডারকে। মানসিক অবসাদের কারণে ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছেন এই ক্রিকেটার।
- ক্রিস মরিস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
এই বাদ পড়া একাদশে আছেন আরেকজন দারুণ কার্যকর অলরাউন্ডার। ক্রিস মরিসের শক্তির জায়গা মূলত বোলিং। এছাড়া লোয়ার মিডল অর্ডারেও ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলতে পারেন তিনি।
এমনকি এই বছরই আইপিএলে ১৬.২৫ কোটি রূপিতে তাঁকে কিনে নিয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস। তবুও কার্যকর এই অলরাউন্ডারের জায়গা হয়নি প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে।
- জোফরা আর্চার (ইংল্যান্ড)
সাদা বলের ক্রিকেটে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস বোলার জোফরা আর্চার। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ডের পেস বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন এই পেসার।
ফলে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ডের পরিকল্পনার বড় অংশ জুড়ে ছিলেন আর্চার। তবে ইনজুরির কারণে এই বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছেনা তাঁর। তাই আমাদের এই একাদশে তিনি অটোমেটিক চয়েজ।
- ইমরান তাহির (দক্ষিণ আফ্রিকা)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনারদের একজন ইমরান তাহির। এই লেগ স্পিনারের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে বিশ্বের নামি দামি সব ব্যাটসম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা ৩৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিয়েছেন ৬৩ টি উইকেট।
এই ফরম্যাটে তাঁর বোলিং গড় মাত্র ১৫.০৪। দুইবার ৫ উইকেট সহ বোলিং করেছেন মাত্র ৬.৭৩ ইকোনমি রেটে। অসাধারণ এই লেগ স্পিনারও জায়গা করে নিতে পারেননি প্রোটিয়া স্কোয়াডে। এই নিয়ে প্রকাশ্যে নিজের আক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন ইমরান তাহির।
- যুজবেন্দ্র চাহাল (ভারত)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আরেক সফল স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল। ভারতের হয়ে এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ ৬৩ উইকেটের মালিক চাহাল। সাদা বলের ক্রিকেটে এই মুহূর্তে পুরো দুনিয়ার অন্যতম সেরা স্পিনার তিনি।
তবে, এই বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি এই স্পিনার। ফলে ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নিজের জায়গা হারিয়েছেন। তবুও আমাদের এই একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠতে পারেনা।
- দ্বাদশ ব্যক্তি: মোহম্মদ আমির (পাকিস্তান)
সাদা বলের ক্রিকেটে পাকিস্তানের অন্যতম সেরা পেসারদের একজন মোহম্মদ আমির। পাকিস্তানের হয়ে খেলা ৫০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ৫৯ উইকেট।
তবে দলে নানা দ্বন্দ্বের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন এই পেসার। পরে আবার ক্রিকেটে ফিরে আসার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ফলে এরমধ্যে আর পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলের জন্য বিবেচিত হননি তিনি।