পূর্ণতা আসুক ব্যাটে

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে খেলা ৭১-এর বিশেষ আয়োজন বিশ্বসংসারে বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপে পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন ১৫ জনের একটি দল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে এই দলের সাথে গেছেন একজন বিকল্প ক্রিকেটারও। সবমিলিয়ে ১৬ জনের এক খণ্ড বাংলাদেশ, যারা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন বিশ্ব সংসারে। তাঁদের নিয়েই ধারাবাহিক বিশ্লেষণের এবারের পর্বে থাকছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণার পর থেকে ওপেনিংয়ে ধারাবাহিক রান পেয়েছেন নাইম শেখ। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন ম্যাচজয়ী ফিফটিও। বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে যে সমস্যা সেখানে একপ্রকার স্রোতের বিপরীতেই আছেন তিনি।

লিটন-সৌম্যরা ব্যর্থতার চাদরে ঢাকা থাকলেও নাইম ছিলেন বেশ ধারাবাহিক। আর সেই ধারাবাহিকতা থেকেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে প্রশ্ন উঠেছে নাইমের স্ট্রাইক রেট নিয়ে! তাঁর ব্যাটিং টেকনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে মানানসই কিনা সে নিয়েও হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা।

গেলো দুই সিরিজে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মোট ১০ ম্যাচে প্রায় ২০ গড়ে ৮৮ স্ট্রাইক রেটে ১৯৬ রান করেছেন নাইম। রানের দিক থেকে বাংলাদেশের হয়ে করেছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ। স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও রান পেয়েছেন নিয়মিতই। অবশ্য মিরপুরের স্লো উইকেটে বাকিরাও কেউই ভালো স্ট্রাইক রেটে খেলতে পারেননি। তাই স্রেফ এই দুই সিরিজের পারফরম্যান্স দিয়ে নাইমকে বিবেচনা করাটাও বড্ড ভুল হবে।

নাইম শুরুতে বেশ কিছু বাউন্ডারি আদায় করে নিতে পারলেও অতিরিক্ত ডট বল খেলাটাই তাঁর স্ট্রাইক রেটে প্রভাব ফেলে। স্ট্রাইক রোটেট করতে না পারাটা নাইমের একটা দূর্বল দিক। তবে, সেটিও তিনি বিশ্বকাপের মঞ্চে কাটিয়ে উঠবেন এমনটাই সবার প্রত্যাশা। অবশ্য বর্তমানের বাংলাদেশের তিন ওপেনারের যে ফর্ম সেদিক থেকে নাইম শেখই মোটামুটি রানের ধারায় আছেন। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্ট্রাইক রেটে আরেকটু মনযোগী হতে পারলে ওপেনিংয়ে নাইমের কাছ থেকে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করাই যায়।

২২ ম্যাচে ২৭ গড়ে ১০৬ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৫৭০! যার মধ্যে ১০ ম্যাচই খেলেছেন সবশেষ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরের স্লো উইকেটে। ঘরের মাঠে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১১ ম্যাচ। যেখানে ২১ গড় আর ৮৯ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ২২৯।

তাঁর মধ্যে যে সামর্থ্য আছে সেটা বাইরের মাটিতে ক্যারিয়ারের ছোট্ট পরিসংখ্যানে একটু নজর দিলেই বোঝা যায়। মিরপুরের আলোচিত-সমালোচিত উইকেটে পারফরম্যান্সটা সেক্ষেত্রে বিবেচনায় না নেওয়াই ভালো। কারণ ব্যাট হাতে বাকিদের পারফরম্যান্সও যে ছিলো যাচ্ছেতাই। পুরো ক্যারিয়ারে নাইমের স্ট্রাইক রেট ১০৬! যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশ দৃষ্টিকটুই। কিন্তু দেশের বাইরে পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে স্ট্রাইক রেট এবং গড় সব দিক থেকেই বর্তমানে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।

 

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাকি ওপেনারদের সাম্প্রতিক যে ফর্ম সে অনুযায়ী বিদেশের মাটিতে নাইমের পরিসংখ্যান বাংলাদেশের জন্য হতে পারে কিছুটা স্বস্তির কারণও। এওয়েতে খেলেছেন ১১ ম্যাচ। যেখানে ৩৪ গড়ে ১২১ স্ট্রাইক রেটে ২ ফিফটিতে ৩৪১ রান করেছেন! এই পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই মিরপুরের উল্টো চিত্রই প্রকাশ করছে – তাই নয় কি?

ওপেনিংয়ে লিটন-সৌম্যর সাম্প্রতিক ফর্ম, ব্যাকআপ হিসেবে নেই আর কোনো স্বীকৃত ওপেনার! সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে নাইম শেখের সাথে ‘চলে না’ শব্দটি আসলেই বিলাসিতা নয় কি? ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের যে বেহাল অবস্থা সেদিক থেকে নাইম যে ধারাবাহিক রানে আছেন এটাও যে বেশ ইতিবাচক বাংলাদেশ দলের জন্য।

যেহেতু ব্যাকআপ নেই, পাইপলাইনেও অভিজ্ঞ কেউ নেই! বাকি ওপেনারদের ব্যর্থতার বৃত্তে থাকা। সব মিলিয়ে নাইম শেখই আপাতত ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের জন্য সেরা প্রাপ্তি। হ্যাঁ, স্ট্রাইক রেট নিয়ে কাজ করে সেদিকটায় উন্নতি করতে পারলে নাইম শেখ হতে পারেন লম্বা রেসের ঘোড়া।

আপাতত, লক্ষ্য বিশ্ব আসরে নিজের সেরাটা দিয়ে সামর্থ্যটা প্রমাণের। বাকি ওপেনারদের সাম্প্রতিক সময়ের ব্যর্থতায় তিনি হতে পারেন ওপেনিংয়ে দলের অন্যতম ভরসা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রায় বেশিরভাগ ম্যাচেই একাদশে থাকার সম্ভাবনাও আছে তাঁর। সব মিলিয়ে নাইমের জন্য এই বিশ্বকাপ হতে পারে ক্যারিয়ারে উপরে উঠার এক অদৃশ্য ‘সিঁড়ি’।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...