গত কয়েক দশক ধরেই দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় ‘খেলা’র নাম রেসলিং। তবে এটা কি শুধুই খেলা নাকি নিছক অভিনয়? আসলে খেলা বা অভিনয় – কোনোটাই না বলে স্রেফ বিনোদন বলাই শ্রেয়।
আন্ডারটেকার, জন সিনা থেকে শুরু করে হালের রোমান রেইন্স, সুপারস্টার আর চমকে ভরপুর ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট (ডব্লিউডব্লিউই)। রেসলিং ওয়ার্ল্ডের সাথে শখ্যতা আছে বাচ্চা, বুড়ো থেকে অনেকেরই! কিন্তু যা দেখা যায় তাই কি ঠিক নাকি সবটাই অভিনয়? কতটুকুই বা সত্য এই রেসলিং খেলা? নাকি নাটক সিনেমার মতো পুরোটাই সাজানো গল্প!
চলচিত্রের মতোই রেসলিং ব্যাপারটা পুরোটাই ঘেরা অভিনয়ের চাদরে। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ, সাপোর্ট কিংবা আহত সবই সাজানোই থাকে! একজন রেসলার কিভাবে আহত হবেন সেটিও স্ক্রিপ্টেই লিখা থাকে। চকচকে আলোর খেলা, অভিনব সব এন্ট্রি আর জাঁকজমকপূর্ণ ম্যাচ!
রেসলিং এর এই খেলা আকর্ষণ করে বাচ্চা থেকে বুড়া সব বয়সের মানুষকেই, যদিও ছোটরাই এর প্রতি বেশি আকৃষ্ট। ৯০ দশকে যারা বড় হয়েছেন তাদের মনে এই রেসলিং অনেকটাই বড় জায়গা জুড়েই ছিলো। রক, আন্ডারটেকার, ত্রিপল এইচ, বিগ শো, বাতিস্তাদের খেলা দেখার জন্য টিভির সামনে থেকে চোখ সরাতেন না ৯০ দশকের বাচ্চারা।
‘ডোন্ট ডু দিস অ্যাট হোম’ – কথাটি ফলক আকারে স্ক্রিনে লেখা থাকলেও কতজনই বা মানতেন এটি? বরং জনসিনা, আন্ডারটেকারদের ফলো করে তাদের স্টাইলেই মারপিট যেনো রেসলিংয়ের আরেক অংশ!
অথচ এই মহাআয়োজন বা চাকচিক্য সবই শুভঙ্করের ফাঁকি! সবই পান্ডুলিপির ফলক, ম্যাচের আগেই যা লেখা থাকে স্ক্রিপ্ট আকারে আর সে অনুযায়ী নিখুঁতভাবে অভিনয় করে যান এই খেলোয়াড়েরা। এতোটাই নিখুঁতভাবে তারা অভিনয় করেন যেনো দর্শকদের চোখে ধুঁলো দিতে তাদের কোনো সমস্যাই হয় না। এক প্রকার টাকা দিয়ে টিকেট কেটে মুভি দেখার মতোন বিষয়ই এটি। রেসলিং দুনিয়ার যা কিছু চোখের সামনে আমরা দেখি এর সবই মিথ্যে আর সাজানো নাটক।
ইতিবাচক আর নেতিবাচক! এই দুই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেন এই রেসলাররা। যার কারণে জনসিনা, রোমান রেইন্স, আন্ডারটেকারদের ভক্ত সমর্থক অন্যান্যদের তুলনায় অনেক! ইতোমধ্যেই বেশ কিছু মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে রেসলিং দুনিয়ার এই নকল পাণ্ডুলিপি।
এখানে প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্যই লিখা হয় আলাদা স্ক্রিপ্ট, প্রতিটি রেসলারের জন্যই আছে আলাদা আলাদা স্ক্রিপ্ট রাইটার। প্রায় ৩-৪ মাস আগেই নির্ধারণ করে ফেলা হয় পরের ধাপে কিংবা সিরিজে কিভাবে কে অভিনয় করবে! চেয়ারম্যান অনুমতি দিলেই সে অনুযায়ী শুরু হয় অভিনয়ের। একজন রেসলারের ক্যারিয়ার তাই অনেকাংশেই নির্ভর করে স্টোরি রাইটারের উপর!
এই অভিনয়ের মাঝে ঝুঁকি যে নেই তা কিন্ত নয়! মাঝে মাঝে ভুল অ্যাকশন আর টেকনিকের কারণে ঘটতে পারে মৃত্যুর মতো দূর্ঘটনা। এছাড়া ছোট-বড় আঘাত পাওয়া তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেটে রেসলিং দেখেননি এমন খুব কম লোকই আছে! অনেকের কাছেই এটি জনপ্রিয় প্রোগ্রাম।
মূলত সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই রেসলিং স্যাটেলাইট চ্যানেলে উপভোগ করে, যার ফলে মঞ্চের এই অভিনয় ধরতে পারেন না কেউই! এতো মার খাওয়ার পরেও তারা অনায়াসেই লড়াই করতে পারে, অনায়াসেই কিছুক্ষণ পর একদম ঠিক হয়ে যেতে পারে! এটা কি ম্যাজিক নাকি?
না এসব কিছুই না প্রতিনিয়ত মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে একের পর এক অভিনয় গড়ে যাচ্ছে এই রেসলিং খেলা। মঞ্চে অভিনয়ের মতো হওয়ায় টেলিভিশনে এর অভিনয় ধরতে পারেননা কেউই, যার কারণে আদি থেকেই মানুষের কাছে এতো জনপ্রিয় একটি বিনোদন হল রেসলিং।