২০২১-২৩ চক্রটি হলো টেস্ট ক্রিকেটকে ঘিরে চলমান আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসর। ৫ ম্যাচ বিশিষ্ট ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ বা পতৌদি ট্রফির মাধ্যমে এই টুর্নামেন্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এটি শেষ হবে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ। আইসিসির নয়টি পূর্ণাঙ্গ সদস্য এই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিচ্ছে।
চলমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এখনো মোট নয়টি সিরিজ বাকি আছে। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট টেবিলে দক্ষিণ আফ্রিকা ৭১.৪৩% পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ঠিক এরপর অস্ট্রেলিয়া, ৭০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আগামী মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেললে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবধান আরও বাড়ানোর কিংবা পয়েন্ট টেবিলে স্থান বদলের সুযোগ রয়েছে।
সদ্য শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি ১-১ এ ড্র হয়েছে। এই সিরিজ শেষে এখন শ্রীলঙ্কা ৫৩.৩৩ জয়ের শতাংশ নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ওদিকে পাকিস্তান ৫১.৮৫ শতাংশ জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বরে অবস্থান করছে।
ওদিকে পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টেস্ট সিরিজের ফলাফল পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলেছে ভারতের অবস্থানে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে ভারতের অবস্থান এখন চতুর্থ। ভারতের জয় এখন শতকরা ৫২.০৮ শতাংশ ম্যাচে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দলকেই আরও দুটি করে টেস্ট সিরিজ খেলতে হবে। এই টেস্ট সিরিজগুলোর ফলাফলের ওপর সম্ভবত আবার ওঠানামা করবে পয়েন্ট টেবিলে দলগুলোর অবস্থান।
শ্রীলঙ্কা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের তৃতীয় স্থানে দখল করলেও, তাদের পয়েন্ট শীর্ষ দুইটি দলের থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। শীর্ষ দুটি দলই তাদের জয়ের শতাংশ সত্তরের ঘরে রেখেছে। শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যেই এই চক্রে তাদের ছয়টি সিরিজের মধ্যে পাঁচটি খেলে ফেলেছে। এবং তাদের একমাত্র বাকি সিরিজটি নিউজিল্যান্ডে দুটি টেস্ট নিয়ে গঠিত। যদি তারা আসন্ন সিরিজটি জিততে পারে, তবে তারা ৬১.১% পয়েন্ট পাবে। কিন্তু যদি সিরিজটি ড্র তে শেষ হয়, তাহলে তাদের জয়ের শতাংশ ৫২.৭৮ এ নেমে যাবে।
এদিকে শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের শতাংশ বর্তমানে ৫০ থেকে ৫৩.৩৩ এর মধ্যে রয়েছে। পাকিস্তানের জন্য আশাজনক বাণী হলো তাদের বাকি দুটি সিরিজ ঘরের মাঠে হবে। একটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্টের সিরিজ এবং অন্যটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ।
যদি তারা পাঁচটি টেস্ট ম্যাচই জিতে নেয়, তাদের শতাংশ ৬৯.০৫ পর্যন্ত উঠে যাবে। ভিন্নভাবে চিন্তা করলে, যদি তারা এই দুটি সিরিজ (চারটি জয় এবং একটি হার) থেকে ৪৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করে তবে তাদের শতাংশ হবে ৬১.৯।
তাহলে ফাইনালের যোগ্যতা অর্জনের জন্য বর্তমান টেবিল–টপার দক্ষিণ আফ্রিকাকে কী করতে হবে? দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে কিছু কঠিন সিরিজ আসছে। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে তিন টেস্ট বিশিষ্ট দুইটি সিরিজ, তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুটি হোম টেস্ট আছে তাদের সামনে।
ভিনদেশের সব ম্যাচ হেরে যদি তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে উভয় টেস্টই জিতে নেয়, তবুও তাদের চূড়ান্ত শতাংশ ৬০ পর্যন্ত রাখতে তাদের আরও পয়েন্টের প্রয়োজন হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি তারা সেই বিদেশী সিরিজগুলির প্রত্যেকটি ১-২ তে হারে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ তে হারায়, তারা ৬০% নিয়ে শেষ করবে। যদি তারা এই সিরিজগুলির একটি ২-১ ব্যবধানে জিততে পারে এবং অন্যটি ১-২ তে হেরে যায়, তাহলে তারা ৬৬.৬৭ পর্যন্ত যাবে। যা তাদেরফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জনের জন্য মিশ্র অবস্থানে রাখবে।
এই চক্রে অস্ট্রেলিয়ার হাতে এখনো নয়টি টেস্ট বাকী আছে, যা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে যথাক্রমে দুইটি ও তিনটি করে মোট পাঁচটি টেস্ট। তবে, তাদের জন্য ভিনদেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে চারটি টেস্ট হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাহলে অস্ট্রেলিয়া কি ফাইনালে ওঠার ফেভারিটদের মধ্যে থাকবে? অস্ট্রেলিয়া যদি ঘরের মাঠে পাঁচটি জিতে এবং চারটি ভারতের কাছে হেরে যায়, তবে তারা ৬৩.১৬-এ নেমে যাবে।
অন্যদিকে ভারত বাদবাকি ছয়টি টেস্টে জিতলে তারা অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়িয়ে যাবে। অস্ট্রেলিয়া যদি এই নয়টি ম্যাচে ৬-৩ এ জয়–পরাজয়ের রেকর্ড পরিচালনা করে, তবে তাদের শতাংশ ৬৮.৪২ –এ উন্নীত হবে। যা অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালের যোগ্যতা অর্জনের জন্য একটি শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে।
- তাহলে ভারতের টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
ভারত বর্তমানে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। কিন্তু তাদের এই চক্রের তাদের শেষ দুটি সিরিজ – বাংলাদেশ (২টি টেস্ট) এবং অস্ট্রেলিয়া (ঘরের মাঠে চারটি টেস্ট) খেলবে। ভারত যদি ছয়টি টেস্টেই নিখুঁত জয় লাভ করে, তবে তাদের শতাংশ ৬৮.০৬-এ উঠে আসবে। যা অস্ট্রেলিয়ার স্কোরের চেয়েও বেশি হবে।
এর মানে হল যে ভারত এবং পাকিস্তান যদি তাদের বাকি সমস্ত খেলায় জয়লাভ করে এবং যদি দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে পয়েন্ট টেবিলে পিছিয়ে যায় তবে ২০২৩ সালের লর্ডসে একটি আন্তঃ মহাদেশীয় ফাইনাল হতে যাচ্ছে।
- ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কী হবে?
ইংল্যান্ড তাদের বাকি ছয় টেস্ট জিতলে, ৫১.৫২ শতাংশ পয়েন্ট পাবে, যেখানে নিউজিল্যান্ড মাত্র ৪৮.৭২% পর্যন্ত যেতে পারে। যদিও এই তিন দলের কারোরই বাস্তবে ফাইনালের সম্ভাবনা নেই । ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাত্ত্বিকভাবে ৬৫.৩৮ পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্তু যেহেতু তাদের বাকি চারটি টেস্ট অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে রয়েছে, তাই আদতে সব টেস্ট জেতা অসম্ভবই তাদের জন্য।