ইয়ানিক ক্যারিয়াহ, দ্য ক্যারিবিয়ান সারপ্রাইজ

শেষবার কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন সেই ২০১৬ সালে। অবশ্য পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে টি-টোয়েন্টি ম্যাচই খেলেছেন ৪ টা। সে ৪ ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে বল খেলেছিলেন মাত্র একটি। ঐ এক বলেই আবার আউট হয়ে ফিরেছিলেন শূণ্য রানে। অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখনো তাঁর উইলো থেকে কোনো রানই আসেনি।

এমন একজন অলরাউন্ডারকে নিয়েই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণায় চমক দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। দলে সুযোগ পাওয়া এ অলরাউন্ডারের নাম ইয়ানিক ক্যারিয়াহ। 

লাইফ ইজ সো আনপ্রেডিক্টেবল, এই কথাটা বোধহয় এখন সবচেয়ে বেশি চলনসই ইয়ানিক ক্যারিয়াহর ক্ষেত্রে। নিজেও হয়তো এখনো বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার আনন্দে ডুবে আছেন। চোখেমুখে অবিশ্বাস্য অনুভূতির রেশও বোধহয় এখনো কাটেনি। অবশ্য এর আগেও একবার বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ইয়ানিক। তবে সেটা ছিল বয়সভিত্তিক।

২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছিলেন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। ইয়ানিকের সাথে সে বিশ্বকাপে খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের বর্তমানে দুই পরিচিত মুখ, জেসন হোল্ডার আর ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। বলে রাখা ভাল, ইয়ানিক সেবার ৮ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকায় ছিলেন দ্বিতীয়।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেননি ৬ বছর। তারপরও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য কিভাবে বিবেচনায় এলেন ইয়ানিক ক্যারিয়াহ? মূলত গত মাসে নিউজিল্যাড সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ইয়ানিকের। ৩ ম্যাচের সে ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ম্যাচে বল হাতে ৪৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন এক উইকেট। তবে ব্যাট হাতে মূল চমকটা দিয়েছিলেন সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। 

নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২১৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৭ রানেই হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। এরপর ইয়ানিক ক্যারিয়াহ এক প্রান্ত ধরে রেখে সাময়িক বিপদ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রক্ষা করেন। নিজেও তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক। একই সাথে নবম উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গড়া রেকর্ড ৮৪ রানের জুটিতে আলজারি জোসেফের সাথে নিজের নাম লেখান ইয়ানিক ক্যারিয়াহ। যদিও দিনশেষে পরাজয়টা ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই ছিল। 

ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো থেকে উঠে আসা ইয়ানিক ক্যারিয়াহ প্রথমবারের মতো নজরে আসেন ২০১৯ সালে। সে বার সুপার ৫০ কাপে তাঁর দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইমার্জিং দল হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। অধিনায়কত্ব ছাড়াও ইয়ানিক ফাইনাল ম্যাচে ৩৪ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ৫ ওভারে মাত্র ৮ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।

সে ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচও  নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ মূলত এ ম্যাচের পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্বাচক ডেসমন্ড হেইন্সের নজরে পড়েন ইয়ানিক। এরপরেই তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড একাদশের হয়ে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। 

এ বারের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র। ২০১৯ সিপিএলে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার। সেই পারফরম্যান্সে সুযোগ পেয়েছিলেন আইপিএলেও। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই অফফর্মে আছেন এ স্পিনার। প্রতি ম্যাচেই প্রচুর রান লিক করছেন। তাই অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে এমন স্পিনারকে দলে ভেড়ানোর ঝুঁকি নিতে চায় নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

আর সুনীল নারাইন দলে থাকার আগ্রহ না দেখানোয়, নির্বাচক ডেসমন্ড হেইন্স এমন একজন স্পিনারকে খুঁজছিলেন যাকে আগে কেউ দেখেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন ব্যতিক্রমধর্মী চাওয়াতেই মিলে যায় ইয়ানিক ক্যারিয়াহর সুযোগ। 

টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কম থাকলেও ইয়ানিকের ব্যাপারে আশাবাদী প্রধান নির্বাচক হেইন্স। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দু:খজনক যে, তাঁর মতো লেগস্পিনার এতদিন সিপিএলে সুযোগ পায়নি। একই সাথে সে ভাল ব্যাট করতে পারে। এটা আমাদের জন্য বোনাস। আমরা তাঁর বর্তমান ফর্মে খুবই সন্তুষ্ট। সে এবারের বিশ্বকাপে আমাদের দলের জন্য বিশেষ কিছু হতে পারে।’

সপ্তাহ খানেক আগে ইয়ানিক ক্যারিয়াহ নিজেও হয়তো ভাবেননি, তিনি আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন। ৬ বছর ধরে যে ফরম্যাটটিই তিনি খেলছেন না, সেই ফরম্যাটের বিশ্বকাপ দিয়েই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শুরু হচ্ছে তাঁর। এ দ্বিতীয় শুরুটা নিশ্চয়ই রাঙাতে চাইবেন ইয়ানিক ক্যারিয়াহ। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link