স্বপ্নের পেছনে ছোটা যশস্বী

যশস্বী জয়সওয়াল; কে না চেনে তাকে? এখনও বড় কিছু করে ফেলেননি। কিন্তু ভারতের ক্রিকেটে এরই মধ্যে এক পরিচিত ও সম্ভাবনাময় নাম যশস্বী। মুম্বাইয়ের এই ক্রিকেটারের উঠে আসার গল্প কিন্তু খুব সহজ ছিলো না। কন্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে এসেছেন এই প্রতিভাবান ভারতীয় ব্যাটসম্যান।

ক্রিকেট বিশ্বকে ইতিমধ্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতীয় দলকে নিজের সামর্থ্যের কতটুকু দিতে পারবেন সেই উত্তরটা সময়ের অপেক্ষায় থাকলো। কিন্তু তার উঠে আসার গল্প টা যেকারো জন্যই হতে পারে অনুকরণীয়-অনুসরণীয়।

যশস্বী জয়সওয়ালের বাবা ছিলেন উত্তর প্রদেশের একজন মুদি দোকানদার। আর মা ছিলেন গৃহিনী। ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য মাত্র ১০ বছর বয়সে পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে । তার বাবার জন্য ক্রিকেটার হবার জন্য টাকা খরচ করার সামর্থ্য ছিলো না। তবুও আশায় বুক বেধে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমান যশস্বী জয়সওয়াল।

মুসলিম ইউনাইটেড ক্লাবের ম্যানেজার সন্তোষ। কিন্তু তাঁদের অবস্থাও খুব বেশি একটা ভালো ছিলো না। একজন অতিরিক্ত মানুষের খরচ কিংবা তাঁদের সাথে রাখার মত সামর্থ্য ছিলো না সন্তোষের জন্য। তাই তিনি যশস্বীকে থাকার বন্দোবস্ত করে দেন ক্লাবের গ্রাউন্ডস ম্যানদের সাথে তাঁদের তাবুতে।

এর আগে যশস্বী জয়সওয়াল ছিলেন এক দুধের খামারে। যেখান থেকে খামারের মালিক তাকে বের করে দেন।

যশ্বসীর জীবনের একটি গল্প হয়তো সবাই জানেন। তিনি ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি পানিপুরি বিক্রি করতেন। এই খবর যদি উত্তর প্রদেশে পৌছাতো তাহলে হয়তো ক্রিকেটার হয়ে উঠা হত না যশ্বসী জয়সওয়ালের জন্য।

যশ্বসী জয়সওয়ালের তাবু ছিলো মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানের মাঠ কর্মীদের সাথে। যে আজাদ ময়দানে খেলে গেছেন মুম্বাইয়ের বড় বড় তারকারা। সেখানেই ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয়েছে যশ্বসী জয়সওয়ালের। এখানে শুধু ক্রিকেটেই খেলেননি তিনি। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি বিক্রি করেছেন পানি পুরী। উত্তর প্রদেশ থেকে তার বাবা মা তার জন্য অর্থ পাঠাত। কিন্তু যে অর্থ পাঠাতো তাতে ক্রিকেটের মত বিলাসবহুল খেলা চালিয়ে যাওয়া ছিলো আসলেই কষ্টকর।

বছরের একটা সময় মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় রামলীলা অনুষ্ঠান। সেই সময়ে পানিপুরি বিক্রি করে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করতেন যশ্বসী জয়সওয়াল।

এছাড়াও যশ্বসী প্রতি সপ্তাহে ২০০-৩০০ রুপি পেতেন। কারণ তিনি সিনিয়রদের সাথে খেলতেন এবং তাঁদের সাথে খেলে রান করতে পারতেন।

যশ্বসী জয়সওয়াল দেখতেন তার সাথে খেলা অন্য ছেলেরা খাবার নিয়ে আসতো অথবা তাঁদের মা-বাবারা এসে খাওয়াতেন। আর ঐ সময়ে জয়স্বী কারো কাছ থেকে খাবার কিনে নিয়ে খেতেন।

মাঠকর্মীদের সাথে থাকা তাবুতে জশস্বী জয়সওয়ালে কাজ ছিলো রাতে রুটি বানানোর। রুটি বানাতে পারলে তবেই খাওয়া হত। এইভাবে এক দিন কিংবা দুই দিন নয়, তিনটি বছর কাটিয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল। অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডা, গরম সহ্য করে তাবুতে থেকেছেন দিনের পর দিন।

তার পরিশ্রম এবং ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা তাকে এতোদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে। এখন দেখার বিষয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কতটুকু কি দিতে পারেন। ভারতের জাতীয় দিলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে উত্তর প্রদেশ থেকে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমিয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল। ভারতের জার্সি গায়ে উঠলেই হয়তো তার স্বপ্নের কিছুটা পূরণ হবে। কিন্তু চারপাশের ক্রিকেট সমর্থকদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারবেন সেই অপেক্ষাতেই থাকবে ক্রিকেট বিশ্ব।

জয়সোয়ালের এই প্রবল কষ্টের ফল আসা শুরু হয় স্কুল ক্রিকেটে তার অপরাজিত ৩১৯ রানের ইনিংস খেলার ভেতর দিয়ে। ২০১৫ সালে বিশ্বরেকর্ড এই ইনিংস খেলে আলোচনায় চলে আসেন তিনি। এরপর ভারতের বয়সভিত্তিক দলগুলোতে সুযোগ পেতে থাকেন। অনুর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক রান স্কোরার হয়ে ওঠেন। ২০১৯ এশিয়া কাপ জয়ের পথে সর্বোচ্চ রান করেন। ২০২০ বিশ্বকাপেও সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন এবং সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। যদিও তার দল ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে হেরে যায়।

বিজয় হাজারে ট্রফিতে ১১২.৮০ গড়ে ৫৬৪ রান করেন।

আর এরপরই জীবনের সবচেয়ে বড় অর্থের সংবাদটা পান জয়সোয়াল। ২০২০ আইপিএল নিলামে প্রায় আড়াই কোটি রূপীতে তাকে কিনে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। এখনও সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারলেও অনেকেই মনে করছেন জয়সোয়াল ভারতের ‘নেক্সট বিগ থিং’। আর সেটা হলেই জীবনের প্রবল কষ্টটা সার্থক হয় তার।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link