ইয়াসির আলী রাব্বির জীবনটাই যেনো আক্ষেপেরে, অপেক্ষার। দীর্ঘ ৯১৮ দিন অপেক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশের হয়ে নিজের টেস্ট অভিষেক। এই সময়টায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের কত কী অদল-বদল হয়ছে। তবে একটা ধ্রুব সত্যের মত রাব্বির অপেক্ষা জারি ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই অপেক্ষার অবসান হলেও ১৯ বলেই থেমে যায় নিজের প্রথম ইনিংস। রাব্বির বাবা বলছিলেন, ‘ওর জীবনটা খুব স্মুথ না। ও সবই পায়। কিন্তু সে জন্য ওকে বাকিদের চেয়ে একটু বেশি পরীক্ষা দিতে হয়।’
রাব্বিদের জীবনে কোনকিছুই সহজে আসে না। লড়াই করে নিতে হয়। রাব্বি অবশ্য লড়াইটা করতে রাজিই ছিলেন। আজ আবারো দল যখন চূড়ান্ত বিপর্যয়ে তখনই প্রথম নিজের জাতটা চেনাতে চাইলেন রাব্বি। গতকালই মুশফিকুর রহিমের সাথে লড়াইটা শুরু করেছিলেন তবে দিনের তৃতীয় বলেই মুশফিক ফিরে গেলে রাব্বির সাথে হালটা ধরেন লিটন।
এই ম্যাচে কয়েকজন ব্যাটসম্যান ইতোমধ্যে দারুণ ব্যাটিং করেছেন। দুই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে সেঞ্চুরিও এসেছে। তবে যারা মাঠ থেকে রাব্বির ব্যাটিংটা দেখেছেন তাঁরা নি:সন্দেহে স্বীকার করবেন রাব্বির চেয়ে সুন্দর ও সাবলীল ব্যাটিং আর কেউ করেনি। সকালের কঠিন সময়টায় বাংলাদেশকে আগলে রেখেছিলেন এক বিশাল পাহাড় হয়ে।
তবে দিন যত গড়িয়েছে আস্তে আস্তে নিজেকে ভাঙতে শুরু করেছেন। তাঁর ব্যাটিং একটা সময় পাকিস্তানি বোলিং লাইন আপকেই উল্টো চাপে ফেলে দিল। ফ্লিক, ড্রাইভ কী না খেলেছেন। এতটা নির্ভুল ইনিংস এই ম্যাচে আর কাউকে খেলতে দেখা যায়নি। সবচেয়ে বড় কথা রাব্বিকে দেখে মনে হচ্ছিল কতকাল ধরে বুঝি টেস্ট ক্রিকেট খেলছেন। মনে হবেই না বা কেনো, তিনি যে এক অনন্ত অপেক্ষা পার করে এসেছেন।
প্রতিপক্ষের বোলারদের নূন্যতম কোন সুযোগ দেননি। নিজেও বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করেননি। রাব্বিরের পাওয়ার হিটিং এবিলিটি আছে আমরা সেটা জানি। তবে ডুবতে থাকা দলকে তুলে আনার সময় সেই পথে হাটেননি। একটা টেস্টে ম্যাচে একজন পরিপূর্ন টেস্ট ব্যাটসম্যান যেভাবে ব্যাটিং করেন সেই সলিড ব্যাটিংটাই করেছেন। সেজন্যই হয়তো রাব্বি যখন ব্যাটিং করছিলেন বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ কাভার করতে আসা দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে দেখা গেল একরাশ মুগ্ধতা। রাব্বির প্রতিটা শটের পর প্রেসবক্সে চলছিল তুমুল প্রশংসা।
তবে একটু পরেই সেটা রূপ নিল আক্ষেপে। হঠাত করেই আসা একটি বাউন্সার এসে হেলমেটে আঘাত করে। এরপরেও কিছুক্ষণ খেলার চেষ্টা করে গেলেন। রাব্বির বুঝতে পারছিলেন এই মুহূর্তে তাঁর বাইশ গজে থাকা বাংলাদেশের জন্য কতটা জরুরি। তবে মাথার আঘাতের পর ব্যাটিংটা বেশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারলেন না। মাঠ থেকে সরাসরি যেতে হলো হাসপাতালে। সেখানে স্ক্যান করা হল, কোনো জটিলতা না থাকলেও আপাতত পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।
খুব গুরুত্বর কিছু না হলেও এখনো দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। ফলে ৭২ বলে ৩৬ রানেই আপাতত তাঁকে থামতে হলো। তবে রাব্বিরের অপেক্ষার শেষ হলো না। রাব্বির বাবার কথা গুলো মনে পড়ছে। ছেলেটা সহজে কিছু পায় না, অনেক বেশি পরীক্ষা দিতে হয় তাঁকে।
তবে রাব্বির এই অপেক্ষার জীবনে নতুন একটা মাত্রা যোগ হয়েছে। এতদিন অপেক্ষাটা ছিল একান্তই রাব্বির। তবে নিজের ৭২ বলের এই ইনিংসে রাব্বি যে একাগ্রতাটা দেখিয়েছেন তাতে এখন আর আক্ষেপটা শুধু রাব্বির একার না। তিনি কেনো আরো খেলতে পারলেন না সেই আক্ষেপে এখন গোটা দেশ। রাব্বি তাঁর অপেক্ষা, আক্ষেপের জীবনটা এখন সবার মধ্যেই ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন।