২০১৪ সালের কথা। সেবার বিশ্বকাপে চমক দেখালেন কলম্বিয়ান তরুণ হামেস রদ্রিগেজ। বাঘা-বাঘা সব স্ট্রাইকারদের পেছনে ফেলে তিনি বনে গিয়েছিলেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা। সেবারের গোল্ডেন বুটটা নিজের দখলে নিয়েছিলেন পাঁচ গোল করে। এরপরই ইউরোপের মার্কেটে তাঁর দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিটা ক্লাব তাঁকে দলে নিতে মড়িয়া হয়ে ওঠে। তাঁর মূল্যও আন্দাজ করে বাড়াতে থাকে ফ্রেঞ্চ ক্লাব এএস মোনাকো।
সেবার অবশ্য এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে প্রায় ৬০ মিলিয়নের বেশি অর্থ ব্যয়ে দলে ভিড়িয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। এমন চিত্র অবশ্য প্রায় প্রতিটা বিশ্বকাপের। সাধারণত বিশ্বকাপের পরবর্তী সময়েই দলবদলের একটা হিড়িক পড়ে। এবার যদিও গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বহু পরে গিয়ে আয়োজিত হচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। তবে এবার সম্ভাবনা রয়েছে শীতকালীন দলবদলে ঝড় উঠবার। কেননা তরুণ তুর্কিরা তো মাঠ মাতাচ্ছেন, সব আলো নিজেদের করে নিচ্ছেন।
এদিক থেকে এগিয়ে অবশ্য স্পেনের পেদ্রি ও গাভি। এই দুই তরুণের কাঁধে ভর করেই মধ্যমাঠে ছড়ি ঘোড়াচ্ছেন স্পেনের কোচ লুইস এনরিকে। পেদ্রির বয়সটা ২০ অন্যদিকের গাভি এখনও ১৯ এর ঘরে। এই দুই তরুণ রীতমত বিশ্বকাপ শিরোপা প্রত্যাশী স্পেন দলটার মধ্যমাঠের পুরো দায়িত্বটা এই দুই তরুণ ভালভাবেই সামলে নিচ্ছেন। কোস্টারিকাকে বিধ্বস্ত করা হোক কিংবা জার্মানির সাথে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। সবখানেই এদের উপস্থিতি স্পষ্ট।
জার্মানির কথা উঠতেই আবার জামাল মুসিয়ালার কথা না বললেই নয়। ১৯ কোটায় বয়স তাঁর। স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচে পারফরমেন্স বিবেচনায় পেদ্রি আর গাভিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন জার্মান এই মিডফিল্ডার। তাঁর অসাধারণ ফুটবলীয় শৈলীতে মুগ্ধ করছেন সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকদেরও। এই তিন প্রতিভার বাজার মূল্য যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা আন্দাজ করে নেওয়াই যায়। তবে তাঁরা বিক্রি হবেন কি-না অদূর ভবিষ্যতে সে নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়।
কেননা এই তিন খেলোয়াড়দের ক্লাব যথাক্রমে বার্সেলোনা এবং বায়ার্ন মিউনিখ তাদের তারকা খেলোয়াড়দের বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী নয়। তাঁরা বরং তরুণদের সুযোগ দিতেই পছন্দ করেন। তাদের ক্লাবের জার্সি গায়ে মাঠ মাতাতে দেখতেই পছন্দ করেন। সেহেতু হয়ত প্রাইসট্যাগে সংখ্যাটা বাড়বে। তবে ক্রয়ের জন্যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইটা হবে না তাদেরকে ঘিরে।
তবে ভিন্ন চিত্র আবার জুড বেলিংহ্যামের ক্ষেত্রে। ইংল্যান্ডের এই তরুণের বয়সও ১৯ এর ঘরে। তিনি রীতিমত নিজের উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে। তিনি অবশ্য ক্লাব পর্যায়ে খেলছেন জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে। জোর গুঞ্জন রয়েছে শীতকালীন না হলেও আগামী গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ডর্টমুন্ড ছেড়ে দিতে পারেন বেলিংহ্যাম।
ইউরোপের বড় বড় দলগুলো তাঁকে দলে ভেড়াতে মুখিয়ে রয়েছে। সেদিক অবশ্য স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের এগিয়ে থাকার একটা বার্তা হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। আর এবারের ফর্ম বিবেচনায় রিয়াল মাদ্রিদকে চড়া দামেই কিনতে হবে বেলিংহ্যামকে। কেননা শিরোপা প্রত্যাশী ইংল্যান্ড দলের হয়ে দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছেন এই মিডফিল্ডার।
এরা ছাড়াও আর্জেন্টিনার এনজো ফার্নান্দেজও রয়েছেন তালিকায়। মেক্সিকোর বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের শেষ দিকে দুরন্ত এক গোল করেছেন তিনি। ২১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারকে ঘিরেও তৈরি হতে পারে জল্পনা-কল্পনা। যদিও সদ্যই এনজো বেনফিকার জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার বিশ বছর বয়সী সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জোসকো গাভার্দিওলও রয়েছেন আলোচনায়। গেল আসরের ফাইনালিস্টদের রক্ষণটা আগলে রাখছেন তিনি ভালভাবেই।
এবারের বিশ্বকাপে তারুণ্যের জয়গান শোনা যাচ্ছে বেশ তীব্রভাবেই। আর এই তরুণদের ঘিরেই যে আসছে ইউরোপীয়ান দলবদল জমে উঠবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখা যাক ঠিক কোন দল তাদের দলের তরুণদের উপর ভর করে জিতে নেয় এবারে বিশ্বকাপ।