অলিম্পিকের নব আকর্ষণ, কে এই ইউসুফ ডিকেচ?

সাকসেস ডাজেন্ট কাম উইথ ইউর হ্যান্ডস ইন ইউর পকেট – এই দর্শন তুর্কিশ শুটার ইউসুফ ডিকেচের; তিনি নিশ্চিত একেবারে একশ দশ ভাগ প্রস্তুতি নিয়ে খেলতে আসবেন সেটা মনে হওয়া তাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে আর হলো কই, পকেটে হাত রেখেই পদক জিতে নিয়েছেন। কিলার লুক, বোল্ড অ্যাপ্রোচ আর চোখেমুখে শান্ত স্নিগ্ধ ভাব – অলিম্পিক গেমসের শুটিং ইভেন্টের সব মনোযোগ এখন তাঁর দিকে।

এক হাতে পিস্তল, সেটা লক্ষ্যের দিকে ধরা; অন্য হাত পকেটে – বুম! মুহূর্তের মাঝে সেটা ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। কোরিয়ান শুটার কিম ইয়েজর এই ছবি দেখেনি এমন মানুষ বোধহয় পাওয়া যাবে না, ইউসুফ সেই বিস্ময়কে আরো বাড়িয়ে তুলেছেন; শৈল্পিক একটা ব্যাপার দিয়েছেন শুটিংকে।

এই বর্ষীয়ান শুটার কোন বিশেষ লেন্স ব্যবহার করেননি, কোন এয়ার ডিফেন্ডার ব্যবহার করেননি, চোখে লাগার মত কোন বাড়তি কিছু ছিল না – স্রেফ এক হাত পিস্তলে আরেক হাত পকেটে রেখেই এসেছেন তিনি; লক্ষ্য ভেদ করেছেন এরপর হেঁটে বেরিয়ে গিয়েছেন মঞ্চ থেকে – যা মনে করিয়ে দিয়েছে হলিউডের বিখ্যাত দৃশ্যকে, যেখানে দেখা যায় ধ্বংসস্তুপ পিছনে ফেলে নির্বিকার ভঙ্গিমায় এগিয়ে যান নায়কেরা।

৫১ বছর বয়সী এই তারকাকে অবশ্য কোনভাবে স্পোর্টসম্যান মনে হয়নি, মনে হয়নি তিনি কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রতিযোগিতা করতে এসেছেন। বরং মনে হয়েছে পাড়ার কোন আড্ডায় হয়তো অংশ নিয়েছেন, ট্রাউজারের সাথে টি-শার্ট গায়ে গলিয়ে চলে এসেছেন বিনোদন নিতে। সামাজিক মাধ্যমেও তাই তাঁকে নিয়ে চলছে বিভিন্ন আলোচনা, কেউ কেউ জেমস বন্ড রূপে দেখছেন তাঁকে।

তুর্কিশ শুটার স্রেফ শো-অফ করেননি, গুণের বিচারেও অনন্য। সেভভাল ইলাইদা তারহানের সঙ্গে যৌথভাবে রৌপ্য পদক জিতেছেন তিনি, তুর্কির ইতিহাসে যা প্রথম অলিম্পিক শুটিং মেডেল। মজার ব্যাপার, তাঁর সতীর্থ তারহানও এক হাত পকেটে রেখেই শুট করেছেন – এ যেন অ্যাটিটিউড দেখানোর দারুণ একটা মঞ্চ।

আদতে ইউসুফ একজন বিরল শুটার। অন্যদের মত এক চোখ বন্ধ করে নয়, বরং দু-চোখ ব্যবহার করেই শুট করেন। যদিও অলিম্পিক মেডেলের জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেক দিন, ২০০৮ সালে পাঁচটি অলিম্পিক আসরে অংশ নিয়ে এবারই প্রথম শিরোপা মঞ্চে উঠতে পারলেন।

কিম ইয়েজি কিংবা ইউসুফ ডিচেক প্রমাণ করেছেন খেলা স্রেফ একটা লড়াই নয়; এতে মিশে আছে প্যাশন, অ্যাটিটিউড আর পার্সোনালিটি। তীব্র বেগে ধেয়া আসা চাপ কিংবা সাগরসম প্রত্যাশা সত্ত্বেও তাঁরা যেভাবে নিজেদের উপস্থাপন করেছেন তা সত্যিই নতুন করে ভাবতে শেখাবে সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link