প্রতিটা ম্যাচেই তো রেকর্ড বইয়ের পাতায় কত ওলট-পালট হয়। তবে ক্রিকেটে এমন একটা কীর্তি করা যায় এটা বোধহয় এর আগে কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। যুবরাজ সিং ক্রিকেট দুনিয়াকে বিশ্বাস করিয়েছিলেন এমনটাও হয়। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের সাথে তর্কে জড়িয়ে ব্যাট হাতে সেই ঝাল মিটিয়েছিলেন। তবে তাঁর দাগ হয়তো আজীবন বয়ে বেড়াতো হবে অভাগা স্টুয়ার্ট ব্রডকে।
২০০৭ সালটা ভারতের ক্রিকেট জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির ক্রিকেটের একটা পালা বদল হয়েছিল সেই সময়। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির তখন মাত্র টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব পেয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যায় ভারত। ওই বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই মহেন্দ্রযুগে প্রবেশ করে ভারতের ক্রিকেট।
প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও ইংল্যান্ড। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে দারুণ শুরুও করেছিল ভারত। গম্ভীর ও শেবাগের ওপেনিং জুটি থেকে এসেছিল ১৩৬ রান। তবে মাঝে সেখান থেকে খানিকটা গুছিয়ে নিতে শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। ১৭ তম ওভারে ১৫৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। সেই সময় ব্যাট করতে নামেন যুবরাজ সিং। ইংল্যান্ড নিশ্চই জানতো না কি এক ঘুর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে তাঁরা।
তাও ১৮ ওভার শেষে সেই আগুনে ঘি ঢেলেছিলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। ফ্লিনটফকে দুইটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন যুবরাজ। এরপর যুবরাজকে উদ্দেশ্য করে কিছু একটা বলেছিলেন ফ্লিনটফ। তাতেই আতে ঘা লেগেছিল যুবরাজের। পরে যুবরাজ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তখন তাঁর মনে হচ্ছিল প্রতিটা বলে ছয় মেরেই এর জবাব দেয়া উচিৎ।
ফ্লিনটফের সেই জবাব পেয়েছেন অবশ্য স্টুয়ার্ট ব্রড। ১৯ তম ওভারে বল করতে এসেছিলেন সেই সময় মাত্র ২১ বছর বয়সী ব্রড। ব্রডের ওভারের ছয়টি বলের ঠিক প্রতিটাতেই ছয় মেরেছিলেন যুবরাজ। প্রথম বলটি যুবরাজ মেরেছিলেন ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে। দ্বিতীয়টি উড়ে গিয়েছিল স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে। তবে চতুর্থ ছয়টি নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল। কেননা সেটি গিয়েছিল পয়েন্টের উপর দিয়ে। একজন ব্যাটসম্যানের জন্য পয়েন্টের উপর দিয়ে ছয় মারাটা বেশ কঠিন কাজই।
এই নিয়ে যুবরাজ পরে বলেছিলেন যে তিনি এর আগে কখনো ডিপ পয়েন্ট দিয়ে ছয় মারেননি। তবে সেদিন তিনি প্রতিটা বলেই ছয় মারতে চাচ্ছিলেন। এছাড়া ব্রডও ফুলটস মেরেছিল। ফলে সেটিও বেশ বড় ছয় হয়। পরের দুটি বলেও যথারীতি ছয়ই মেরেছিলেন তিনি। সেদিন যুবরাজ যেন শুধু ছয় মারতেই নেমেছিলেন।
মাত্র ১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন যুবরাজ। যা এখনো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। তাঁর এই ঝড়ো ইনিংসে ভর করে শেষে ২১৮ রান বোর্ডে জমা করেছিল ভারত। যুবরাজ ছয় ছক্কা মারার পর ফ্লিনটফ নিশ্চই ভাবছিলেন কেন যুবরাজকে রাগাতে গেলেন তিনি।
ওদিকে ছয় ছক্কা খেয়ে স্টুয়ার্ট ব্রডের ক্যারিয়ারই হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। এটা নিয়েও বেশ মজার একটা ঘটনা ঘটেছিল। যুবরাজকে একবার স্টুয়ার্টের বাবা ক্রিস ব্রড বলেছিলেন,’ তুমি তো আমার ছেলের ক্যারিয়ার শেষ করে দিলে।‘ তবে এটা ঠিক যে সেদিনের ব্যর্থতাকে কাটিয়ে উঠে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা পেসারে পরিণত হয়েছিলেন ব্রড।