হোয়াই ডু উই হ্যাভ বাউন্ডারিস?
১১৯ মিটারের ছয়? তাও ব্রেট লিকে?
পনেরো বছর আগেকার কথা। আমি বলছি সেই স্মৃতিজাগানিয়া ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গল্পগুলো সেমিফাইনালে মুখোমুখি ভারত-অস্ট্রেলিয়া। সেমিফাইনালে রিকি পন্টিং খেলতে পারেননি। তাতে কি? ম্যাথু হেইডেন-অ্যাডাম গিলক্রিস্ট-মাইকেল ক্লার্ক-ব্র্যাড হজ-অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস-মাইকেল হাসি – কে নেই।
একবার বোলিং লাইন আপটাও চোখ বোলানো যাক—ব্রেট লি, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, মিশেল জনসন আর নাথান ব্র্যাকেন। গৌতম গম্ভীর আর বীরেন্দ্র শেবাগের ভালো শুরু দানা বাঁধতে পারেনি মিশেল জনসন নামক এক ভবিষ্যত তারকার মোচড়ানো বোলিংয়ে। ভারত কিছুটা চাপে। আট ওভার শেষে ভারতের স্কোর ৪১ রানে ২ উইকেট।
এরপর নামলেন যুবরাজ সিং। আর শুধুই কি নামলেন? স্টুয়ার্ট ক্লার্ককে লম্বা ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করলেন কাউন্টার অ্যাটাক, যোগ্য সঙ্গী হিসাবে পেয়ে গেলেন রবিন উথাপ্পাকে, এই একটা লোক যার নাম রবিন উথপ্পা যার কৃতিত্বটা সারাজীবন অনালোচ্যই রয়ে গেল, পাকিস্তান ম্যাচের সেই ইনিংস, সেই বোল-আউটে আম্পায়ারের দিকে টুপি নামিয়ে করা সেলিব্রেশন – উফফ!
যাই হোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
স্টুয়ার্ট ক্লার্ককে ছক্কা হাঁকিয়ে যে কাউন্টার অ্যাটাকের যে প্রক্রিয়াটা শুরু করলেন যুবরাজ সেটা ডারবানের শীতল রাত্রিকে ক্রমশ ছক্কাবর্ষণের উষ্ণতায় ভরিয়ে দিতে থাকলো। ব্রেট লি, জনসন, সাইমন্ডস কেউই বাদ গেলেন না। অত:পর ব্রেট লির একটা ওভারে ফ্লিকের স্টাইলে কব্জির মোচড়ে বলটা পাঠিয়ে দিলেন ১১৯ মিটার দূরে।
আজকের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) যুগেও কতজন মারতে পারবেন এমন ছয়? প্রশ্ন রইল। টাইমিং-ফুটওয়ার্ক-রিস্ট আর্ট – ডারবানের সেইরাতের মতো অনন্য মোহময়ী যুবরাজকে আমি আর দেখিনি, সে যতই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২৫ বলে ৭৫ থাক কিংবা স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় ছক্কা হাঁকানো থাক।
সাইমন্ডসের এরকমই এক রানবহুল ওভারে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে যুবরাজ আবার বল পাঠালেন বাইরে, হার্শা ভোগলে বলে উঠলেন— ‘Why do we have boundaries here? The boundaries roll in up minds, not on ground।’ বাউন্ডারির সত্যিই দরকার ছিল না সেই রাত্রে।
যুবরাজ সিংয়ের কব্জিশৈলীতে আবিষ্ট হয়ে রয়েছিলো ডারবানের দর্শক। রবিন উথাপ্পাও পিছিয়ে রইলেন নাকি? হেঁটে হেঁটে এসে রয়্যাল রবিনের সেই ট্রেডমার্ক সিক্স – তারপর আবার সিক্স, আবার চার। মনে পড়ছে, কেউ একজন হয়তো বলছিলেন – বাউন্ডারিস আর রেইনিং ইনটু দ্য গ্রাউন্ডস।
আর এরপরের চিত্রটা তো মহেন্দ্র সিং ধোনি আর রোহিত শর্মার জন্য তোলাই রইলো। মাসলম্যান ধোনি স্ট্রেটে যেভাবে খানদুয়েক চার হাঁকালেন, মনে হচ্ছিলো বলটা এক্ষুনি বোধহয় ফেটে গেলো, তারপরে লং অনে একটা ছক্কা। রোহিতও পিছিয়ে রইলেন না, ছয় মারলেন একটা। ওই ম্যাচে মহেন্দ্র সিং ধোনি আর রবিন উথাপ্পা দুর্ভাগ্যজনক রান আউট না হলে রানটা কতদূর অবধি যেত?
কি জানি, হয়তো ২০০ কিংবা তারও বেশি। ধোনির ধুমধারাক্কার সময় একজন কমেন্ট্রি করলেন — দ্যাটস নো ফিয়ার ক্রিকেট ফ্রম হিম। শুধুই কি ধোনি? পুরো ভারতীয় দলই কি নো ফিয়ার ক্রিকেট খেলেনি?
ম্যাচটা পুরোটা দেখতে পারিনি। পরের দিন ভোর রাতে বৃষ্টি পড়ছিলো। খবরে দেখলাম ভারত পনেরো রানে জিতে গেছে।বিশ্বাস হচ্ছিলো না। ভারত ফাইনালে, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে, কোনো এক বৃষ্টিমুখর ভোররাতের খবরে। শুধুমাত্র টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে নো ফিয়ার ক্রিকেটটা আরেকবার ব্র্যান্ডিং হোক না, ক্ষতি কি। সেই বৃষ্টিমুখর ভোর রাত, সেই মায়াবী যুবরাজ! উফফ আর ভাবতে পারছিনা! ভাবতে পারছিনা!