ক্যারিবিয়ান রূপকথা: ২০০৪ সংস্করণ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সোনালি সময় ততদিনে ইতিহাসের পাতায় জায়গা নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ লড়াই করতে হচ্ছিল দলটাকে, টিকে থাকার লড়াই। এরমাঝেও যেন এক বিস্ফোরণ ঘটালো ক্যারিবীয়রা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সোনালি সময় ততদিনে ইতিহাসের পাতায় জায়গা নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ লড়াই করতে হচ্ছিল দলটাকে, টিকে থাকার লড়াই। এরমাঝেও যেন এক বিস্ফোরণ ঘটালো ক্যারিবীয়রা। শক্ত সব প্রতিপক্ষকে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল ২০০৪ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। এরপর ক্রিকেটের আদিভূমিতে লিখেছিল এক রূপকথার গল্প।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে সেই সময় জয়টাই বেশ দুরূহ একটা ব্যাপার ছিল। তবুও ব্রায়ান লারার নেতৃত্বে বড় আশা নিয়েই ইংল্যান্ড গিয়েছিল দলটি। ২০০৪ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে। গ্রুপ পর্বের বাঁধা ডিঙিয়ে উঠেছিল সেমি ফাইনালেও। সেমিফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানকে বলে কয়েই হারায় উইন্ডিজরা।

তবে ফাইনাল ম্যাচে নি:সন্দেহে ফেভারিট ছিল স্বাগতিক দল ইংল্যান্ড। লন্ডনের খ্যাতনামা দ্য ওভালে নিজেদের ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারানোটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ক্যারিবীয়রা আরেকবার সাহসটা দেখিয়েছিল। আগে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডকে বেশ কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছিল উইন্ডিজ বোলারদের সামনে।

দ্য ওভালে ক্রমাগত আত্মসমর্পন করতে থাকে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। উইকেট হারাতে থাকে নিয়মিত বিরতিতে। যদিও একপ্রান্ত আগলে রাখেন ইংলিশ কিংবদন্তি মার্কাস ট্রেসকোথিক। তাঁর ১২৪ বলে ১০৪ রানের ইনিংসের পরেও মাত্র ২১৭ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ফলে লম্বা সময় পরে বড় কোন ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

তবে জবাবে ব্যাট করতে নামলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই আশাতেও গুঁড়েবালি পড়ে। মাত্র ৭২ রানেই পড়ে যায় প্রথম চার উইকেট। তবুও ক্রিজে আশা হয়েছিলেন ব্রায়ান লারা। তবে দলীয় ৮০ রানে লারা ফিরলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশাও শেষ হয়ে যায়।

তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বপ্নের নায়ক হয়ে সেদিন লড়ে যান শিবনারায়ন চন্দরপল। ৬৬ বলে খেলেছিলেন ৪৭ রানের ইনিংস। তবে দলীয় ১৪৭ রানে চন্দরপল আউট হয়ে গেলে আবারও জয়ের আশা নিভে যায়। তবে সেদিন নিজেদের দু:সময়ের ইতি টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা।

এক সময় ক্রিকেট দুনিয়ায় রাজত্ব করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুদিনের সাক্ষী হতে চেয়েছিল বোধহয় ক্রিকেটের আদি ভূমিও। নবম উইকেটে জুটি গড়েন দুই কিউই বোলার কোর্টনি ব্রাউনি ও ইয়ান ব্র্যাডশো। দুইজন যথাক্রমে খেলেন ৩৫ ও ৩৪ রানের ইনিংস। তাঁদের ব্যাটে চড়েই শেষ মুহূর্তে জয় পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল।

৪৮.৫ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে তাঁরা পেড়েছিল ২১৮ রানের টার্গেট। ব্রায়ান লারার দল প্রথমবারের মত জয় করে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা। দেশটির ক্রিকেটের দু:সময়ে দারুণ এক তৃপ্তি নিয়ে এসেছিল এই শিরোপা।

ব্র‍্যাডশো কিংবা ব্রাউনি কেউই কালক্রমে ক্রিকেটের পাতার স্থায়ী তারকা হতে পারেননি। তবে সেই দিনের সেই অতিমানব হয়ে ওঠা তাদের ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে। এই সম্মানটা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না কখনোই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link