বাঁহাতি স্পিনারদের উর্বর ভূমি হিসেবেই বাংলাদেশকে চিনতো সবাই। কিন্তু সেই বাংলাদেশেই কিনা সাকিব-মিরাজদের স্পিন সঙ্গী হিসেবে বাঁহাতি স্পিনার খুঁজে পেতে ঘাম ঝড়ছে টিম ম্যানেজমেন্টের! বিশ্বকাপের আর বাকি মাস চারেক।
কিন্তু বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে আরেকজন স্পিনার কে হবেন সেটি যেন এক বিরাট প্রশ্ন। অধিনায়কের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে তাইজুলকে দলে নেয়া হবে নাকি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করাদের বিবেচনা করা হবে?
গত কয়েক সিরিজ ধরেই নাসুম আহমেদ আর তাইজুল ইসলামের মধ্যে চলছে এক ইঁদূর বিড়াল খেলা। এই সিরিজে তাইজুল ইসলাম খেলছেন তো পরের সিরিজেই নাসুম আহমেদকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এদিকে অধিনায়ক তামিম ইকবালের অগাধ সমর্থন আবার তাইজুলের দিকে। তা নিয়ে সমালোচনা বা বিতর্ক কোনোটাই কম হয়নি। কিন্তু এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি বাংলাদেশের।
এদিকে সাদা বলে ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে তাইজুল ইসলামের চেয়ে ঢের এগিয়ে থাকেন অবশ্য নাসুম আহমেদ। এমনকি সাদা বলের ক্রিকেটে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম। কিন্তু সবশেষ কয়েকটি সিরিজে নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন তাইজুল।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেই তাইজুল ইসলামের দূর্বলতা গুলো যেন বেশি করে চোখে পড়েছে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বল করার জন্য লাইন এবং লেন্থই যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাইজুল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স করার পর তৃতীয় ওয়ানডের একাদশ থেকে বাদ পড়েন তিনি। সাকিব আল হাসান না থাকা সত্ত্বেও সেদিন তাইজুলকে বাদ দিতে একপ্রকার বাধ্য হয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
অথচ ওয়ানডে ক্রিকেটে গত বছর অভিষেকের পর থেকে খারাপ করেননি নাসুম। সাত ম্যাচ খেলে মাত্র আট উইকেট নিলেও চোখে পড়ার মত ছিলো নাসুমের ইকোনমি রেট। এই যুগের ওয়ানডে ক্রিকেটে নাসুমের ৩.৭৩ ইকোনমিটা অবিশ্বাস্যই বলতে হবে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও নিয়মিতই পারফর্ম করছেন নাসুম। ৭০ ম্যাচে ৪.৩৬ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৯৩ উইকেট।
ঘরোয়া ক্রিকেট বিবেচনা করলে নাসুমের চেয়েও বেশ এগিয়ে আছেন তানভির ইসলাম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেই বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হওয়া এই স্পিনার গত কয়েক মৌসুম ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা স্পিনারদের একজন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৮৪ ইনিংসে বল করে ১২৫ উইকেট শিকার করেছেন তানভির। ইকোনমিক রেটটাও দারুণ, ৪.২৪।
কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাজিয়ে দেখা হচ্ছে না ঘরোয়া ক্রিকেটের এই পারফর্মারকে। মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি খেলেই বাদ পড়েছেন টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড থেকেও।
ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করছেন অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের ক্রিকেটার রাকিবুল হাসান। ২০ বছর বয়সী এই স্পিনারের সামর্থ্য আছে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন সার্ভিস দেবার। এরই মধ্যে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪০ ম্যাচ খেলে ফেলা রাকিবুলের পরিসংখ্যানটাও বেশ ভালো। ৩৯ ইনিংসে বল করা রাকিবুল ৫৯ উইকেট শিকার করলেও বল করেছেন মাত্র ৪.১৩ ইকোনমিতে।
বয়সভিত্তিক দল থেকেই রাকিবুলের কিপ্টে বোলিংয়ের জন্য বেশ নামডাক আছে। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন ধরণের বোলারদেরই যেখানে চাহিদা বেশি সেখানে রাকিবুলরা এখনো জাতীয় দলের দরজা থেকে বেশ খানিকটা দূরে।
নাসুম,তানভির, রাকিবুলরা ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করছেন নিয়মিত। কিন্তু জাতীয় দলের সুযোগটা পাওয়া হচ্ছে না। লাল বলের ক্রিকেটে তাইজুল ইসলামের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই কারো। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে ততটা সফল না হবার পরেও অধিনায়কের ভরসার হাত কতদিন তাইজুলের কাঁধে থাকে সেটিই বড় প্রশ্ন।
বিশ্বকাপের বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্মারদের সুযোগ না দিয়ে তাইজুলকেই নিয়মিত খেলাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাইজুলের অতি খরুচে বোলিংয়ের পর এসব প্রশ্নই বারবার সামনে আসছে। কতদিন আর তানভির,নাসুম, রাকিবুলদের উপেক্ষা করবে টিম ম্যানেজমেন্ট?
শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সাকিব-মিরাজদের সাথে জায়গা পাবেন আর একজন স্পিনার। বিশ্বকাপের আগে খুব বেশি আর ম্যাচও বাকি নেই বাংলাদেশের। সামনের আফগানিস্তান সিরিজেই এই তিন স্পিনারের কাউকে বাজিয়ে না দেখলে আর খুব বেশি সময়ও নেই টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে।