‘চার দুগুণে আট’ ভার্সন

শক্ত এক মাটির স্তর। বাইশ গজ যার বিস্তৃতি। কতশত গল্প হয়, শতশত কাব্য হয় বাইশ গজের সেই শক্ত মাটিতে। কতসব রেকর্ডের ফুলঝুড়ি। এই বাইশ গজে মহারথী থেকে মুখ থুবড়ে পড়ার ঘটনাও তো কম নয়। আবার ধুলো ঝেড়ে সটান দাঁড়িয়ে পরার দৃশ্যপট যে নেই তা তো নয়। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে সেই বাইশ গজে রাজত্ব করে যাওয়া খেলোয়াড় দিয়ে ইতিহাস ঠাঁসা।

ব্যাট-বলে সমানতালে পারফর্ম করে তাঁরা নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন ক্রিকেট নামক ভদ্রলোকের খেলায়। অলরাউন্ডার বলেই ডাকা হয় তাঁদের। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাট মিলিয়ে আট হাজার রান ও চারশ উইকেট নেওয়া খেলোয়াড়দের সংখ্যা নেহায়েৎই হাতেগোনা। সে মাইলফলক ছোঁয়াদের নিয়েই থাকছে আজকের আলোচনা।

  • ক্রিস কেয়ার্নস (নিউজিল্যান্ড)

ইনজুরি বাগড়া হয়ে দাঁড়িয়েছিল বারংবার। তবুও ক্রিস কেয়ার্নস ছিলেন নব্বই দশকের সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের একজন। হয়ত নিজের ক্যারিয়ারটা আরও একটু সমৃদ্ধ করতে পারতেন ক্রিস কেয়ার্নস। তবুও তাঁর ক্যারিয়ার যে একেবারেই ফিঁকে তা নয়। আট হাজার রান ও চারশ উইকেটের মাইলফলক পার করেছেন কেয়ার্নস।

২৭৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি নিউজিল্যান্ডে হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। এ সময়ে তিনি নিজের অথবা দলের জন্যে সংগ্রহ করেছিলেন ৮২৭৩ রান। অন্যদিকে ডানহাতি পেসার উইকেট বাগিয়েছেন ৪২০টি। সর্বাধিক রান করেছেন ওয়ানডে ফরম্যাটে অপরদিকে সর্বাধিক উইকেট শিকার করেছেন টেস্টে। আট হাজার রান ও চারশ উইকেট ক্লাবের ষষ্ঠ সদস্য তিনি।

  • কপিল দেব (ভারত)

নিজের সময়ের সেরাদের একজন ছিলেন কপিল দেব। ভারতকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়কও তিনি। আট হাজারের বেশি রান করা ও চারশ’র বেশি উইকেট নেওয়া পঞ্চম ক্রিকেটার কপিল দেব। টেস্ট ক্রিকেট থেকে শুরু করে ওয়ানডে ক্রিকেট সবখানেই তাঁর দাপট ছিল বেশ। ভারত দলের স্তম্ভ ছিলেন কপিল দেব। দলকে প্রতিনিধিত্বও করেছেন লম্বা সময় ধরে।

দুই ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ম্যাচ খেলেছেন ৩৫৬টি। ওয়ানডেতে ২২৫ ম্যাচ ও টেস্টে ১৩১ ম্যাচ খেলেছেন। ৯০৩১ রান করেছেন এই দুই ফরম্যাট মিলিয়ে। সেই সাথে ৬৮৭টি উইকেট রয়েছে তাঁর নামের পাশে। টেস্ট ক্রিকেটটা সবসময়ই প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। সেখানটায় তাঁর রান এবং উইকেটের সংখ্যাও বেশি।

  • শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

প্রথম স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তানের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার নিজের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের জন্যে ‘বুম বুম’ তকমা পেয়ে গিয়েছিলেন। রঙিন পোশাকে তাঁর কার্যকারিতা যেন ছিল সবচেয়ে বেশি। ব্যাট হাতে ক্যামিও, বল হাতে ব্রেকথ্রু দেওয়াই ছিল যেন তাঁর কাজ। দীর্ঘকাল তাঁর সার্ভিস উপভোগ করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল আর বিনোদিত হয়েছে গোটা বিশ্ব ক্রিকেট।

এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার পাকিস্তানের হয়ে ৫২৪ ম্যাচে নেমেছিলেন সবুজ গালিচায়। যার মধ্যে ওয়ানডে ফরম্যাটের আধিক্যই বেশি। ১১১৯৬ রান করেছেন তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে। গুগলি আর লেগ স্পিনের মিশেলে তাঁর নেওয়া উইকেটের সংখ্যা ৫৪১টি। রান ও উইকেট বিবেচনায় তিনি চতুর্থ অলরাউন্ডার আজকের তালিকার।

  • সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

এই তালিকায় থাকা একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, যার ক্রিকেটের সূর্য স্তিমিত হয়ে যায়নি এখনও। বাংলাদেশের হয়ে এখনও তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন। মাঝেসাঝেই কোন কোন ফরম্যাট খেলার অনীহা জাগলেও তিনি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবার সুযোগ খুব একটা হাতছাড়া করেননা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব বহু জয়ের নায়ক।

এখন অবধি বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ৩৭৬ বার তিনি ময়দানে নেমেছেন। অধিকাংশ ম্যাচেই নিজের অলরাউন্ড পারফর্মেন্স দিয়ে দলকে জেতানোর চেষ্টা করে গেছেন। যার সুবাদের তিন ফরম্যাটে এখন তাঁর মোট রান ১২৫৯৭। এর পাশাপাশি ৬১৬টি উইকেটও বাগিয়েছেন তিনি।

  • সানাথ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)

তৃতীয় স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার ও রান এবং উইকেট বিচারে আজকের তালিকার দ্বিতীয় ক্রিকেটার সানাথ জয়াসুরিয়া। শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ছিলেন পুরোদস্তুর বা-হাতি। বোলিং, ব্যাটিং সবখানেই তিনি সমান মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা দলকে বাড়তি এক ভরসা জুগিয়েছেন তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে।

তাঁর ক্যারিয়ারে জয়াসুরিয়া মোট ম্যাচ খেলেছেন ৫৮৬টি। এ সময়ে তিনি রান করেছেন ২১০৩২। ভিন্ন এক রেকর্ডের তালিকায় নিজের নামটি আবিষ্কার করতেই পারেন তিনি। কুড়ি হাজার রান করা ছাড়াও ৪৪০ খানা উইকেট নিজের পকেটে পুরেছেন সানাথ জয়াসুরিয়া।

  • জ্যাক ক্যালিস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

এটা বিশ্বাস করা হয় যে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস। তিনি যেমন ব্যাট চালিয়েছেন ঠিক তেমনি বল হাতে প্রতিপক্ষকে কাবু করেছেন। প্রোটিয়া ক্রিকেটের ইতিহাসের কিংবদন্তি দলকে বহুবার একাহাতেই দলকে নিয়ে গিয়েছেন জয়ের বন্দরে। পরিস্থিতি বুঝে নিজের সেরাটা নিংড়ে দিয়েই তিনি আজ সেরাদের একজন।

প্রোটিয়া এই তারকা ক্রিকেটার তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৫১৯ ম্যাচ খেলে। সুদীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে তাঁর ব্যাট হেসেছে নিয়ম করে। রান এসেছে হাস্যজ্জ্বল ব্যাট থেকে। ২৫৫৩৪ এত বড় এক সংখ্যা রয়েছে তাঁর রানের ঘরে। অন্যদিকে তিনি উইকেট নিয়েছেন ৫৭৭টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link