বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই ব্যাঙ্গালুরুতে বৃষ্টি নেমেছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাসও অবশ্য সেটিই জানিয়েছিল যে, ব্যাঙ্গালুরুতে হতে পারে তুমুল বর্ষণ। তবে যে পূর্বাভাসটা পাওয়া যায়নি তা হলো— ফখর জামানের ছক্কাবৃষ্টি। ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্বাস্বামী স্টেডিয়ামের মাঠ বৃষ্টিস্নাত হওয়ার আগে এ দিন নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর একরকম ধ্বংসযজ্ঞই চালিয়েছেন ফখর জামান।
৮১ বলে অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংস খেলার পথে চারের চেয়ে ছক্কাই বেশি মেরেছেন পাকিস্তানের এই ওপেনার। ৮ চারের বিপরীতে হাঁকিয়েছেন ১১ টা ছক্কা! অবশ্য বাধ্য হয়েই তাঁকে এমন রূদ্রমূতি ধারণ করতে হয়েছিল। কেননা, আগে ব্যাট করে যে কিউইরা ৪০১ রানের রান পাহাড়ে চড়েছিল। আর সেই পাহাড়সম রান টপকাতে কোনো এক ব্যাটারকে মারমুখী ভূমিকায় আবর্তিত হতেই হতো। পাকিস্তানের হয়ে সেই কাজটাই করেছেন ফখর জামান।
ইনিংসের শুরু থেকেই চড়াও হয়েছেন কিউই বোলাদের উপরে। বোল্ট, সাউদির বোলিং আগ্রাসন ভেঙ্গে চুরমার করে রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন এ ব্যাটার। আর তাতে পাকিস্তানের রানও এগিয়েছে দুর্দান্ত গতিতে।
ফখর জামানের এমন বিধ্বংসী ব্যাটিং আটকাতে এ দিন কেন উইলিয়ামসন আগেভাগেই বোলিং প্রান্তে এনেছিলেন গ্লেন ফিলিপস, মিশেল স্যান্টনার আর ইশ সোধিকে। কিন্তু উইলিয়ামসনের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে ফখর জামান শুধু বাউন্ডারিতে চোখ রেখেছেন। পেসার কিংবা স্পিনার, পাকিস্তানি এ ওপেনারের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পাননি কেউ। রীতিমত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন ফখর জামান।
ব্যক্তিগত পঞ্চাশ ছুঁতে ফখর খেলেছিলেন ৪০ টা বল। তবে পঞ্চাশ পেরোনোর পর ফখর যেন হয়ে উঠেছিলেন রীতিমত ছক্কামানব। ফ্লিক, হাঁটু গেড়ে, কিংবা ডাউন দ্য উইকেটে এসে— অনায়াসেই বল পার করে দিচ্ছিলেন বাউন্ডারি লাইনের ওপারে। আর সেই বল গুলো বার বার আঁছড়ে পড়ছিল ব্যাঙ্গালুরুর গ্যালারিতে।
এমন তাণ্ডবে শতকের দেখাও পেয়ে যান ফখর জামান। ৪০ বলে ৫০ পূরণ করা পাকিস্তানি এ ওপেনার তিন অঙ্কে পৌঁছে যান মাত্র ৬৩ বলে। ফখরের সেঞ্চুরিতে ৪০২ রানে লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানও পার স্কোর বজায় রেখেছিল। ২০ ওভারেই তাঁরা টপকে গিয়েছিল ১৫০ রান।
তবে এরপরই শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি বাগড়ায় খেলা বন্ধ থাকে প্রায় ঘন্টা খানেক। আর তাতে অনুমিতভাবেই ওভার কমতে শুরু করে। বৃষ্টি থামার পর পাকিস্তান যখন ব্যাট করতে নামে, তখন তাদের লক্ষ্য গিয়ে দাঁড়ায় ৪১ ওভারে ৩৪২। অর্থাৎ পাকিস্তানকে জিততে হলে করতে হবে শেষ ১১৭ বলে ১৮২ রান।
বাবরকে সঙ্গে নিয়ে সেই কঠিন সমীকরণ টপকানোর লক্ষ্যেই মাঠে নামেন ফখর জামান। যেই ভাবা, সেই কাজ। ঠিক যেখানে শেষ করে এসেছিলেন, ফখর আবার শুরু করেন সেখান থেকেই। কারণ বৃষ্টি শঙ্কা, কিংবা ডাক ওয়ার্থ লুইস মেথডের বেড়াজালে ম্যাচ হাত ফসকে বেরিয়ে যেতে পারে যে কোনো মুহূর্তেই। তাই ছক্কার সেই রেশটা তিনি অটুট রাখেন বৃষ্টি থামার পরেও। ইশ সোধির এক ওভারে হাঁকান ২ ছক্কা। আর তাতেই ২৫ ওভার শেষে ২০০-এর দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় পাকিস্তান।
তবে ২৬তম ওভারে এসে আবারো শুরু হয় বৃষ্টি। তবে ততক্ষণে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে পাকিস্তান ২১ রানে এগিয়ে। নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায় সেখানেই। তুমুল বৃষ্টিতে আর খেলা মাঠে না গড়ালে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ২১ রান জয় পায়। বলাই বাহুল্য, ফখরের ছক্কাবৃষ্টিতেই এখন পর্যন্ত টিকে আছে পাকিস্তানের সেমিস্বপ্ন।