আরও একবার হোয়াইট ওয়াশ। সবাই হয়ত ব্যস্ত হয়ে যাবে দোষ কিংবা ভুল খুঁজতে। তবে এই লজ্জার লড়াই করতে না পারা টেস্ট সিরিজেও যে রয়েছে এক ক্ষুদ্র প্রাপ্তি। প্রাপ্তির জায়গাটা ব্যাট হাতে তাইজুল ইসলাম। তিন ইনিংসে পালন করেছেন নাইট ওয়াচম্যানের দায়িত্ব। কি অবলীলায় সামলেছেন তিনি!
বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য চরম হতাশার একটা সময় অন্তত কেটেছে তা বলতেই হয়। ব্যাট হাতে বলার মত পারফরমেন্স নেই। এক মুমিনুল হক সৌরভ ছাড়া কারও ব্যাটে রান ছিল না ধারাবাহিক। তাইজুলও যে খুব বেশি রান করে ফেলেছেন টেস্ট সিরিজে বিষয়টি তেমনও নয়।
তবে তিনি দেখিয়েছেন ঠিক কি করে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হয়ে। ঠিক কি করে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হয় বাইশ গজে। টেস্ট ক্রিকেট যে ধৈর্য্যের খেলা তিনি সেটাই যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন আরও একটিবার। গোটা সিরিজে বাংলাদেশী ব্যাটারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বল খেলেছেন তাইজুল ইসলাম।
চার ইনিংসেই ব্যাট হাতে নামতে হয়েছে তাকে। ১৮৪টি বল তিনি মোকাবেলা করেছেন। যেখানে বাংলাদেশের ওপেনার জাকির হাসান করতে পেরেছেন ১৭৬টি বল। তাইজুলের উপরে রয়েছেন স্রেফ মেহেদী মিরাজ ও মুমিনুল হক।
তাইজুল বাংলাদেশী ব্যাটারদের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ রানও করেছেন টেস্ট সিরিজে। তবে এই যে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার স্কিল, সেটা গেল এক দশক ধরেই দেখিয়ে যাচ্ছেন তাইজুল। গেল এক দশকে নিদেনপক্ষে ১৫০০ বল খেলেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যে তাইজুলের স্ট্রাইকরেট নিচ থেকে পঞ্চম স্থানে।
না এটা মোটেও তাকে খাটো করে দেখার মত কোন পরিসংখ্যান নয়। বরং বেশ প্রশংসনীয় এক পরিসংখ্যান। তাইজুল ইসলামের প্রধান কাজটা বল হাতে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিজ্ঞ এই স্পিনার নিরাশ করেছেন। উইকেটের ট্যালিটায় আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা যায়নি তাকে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাট হাতে তার কাছে প্রত্যাশা নগন্যই।
তবুও তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্বটা ভালভাবেই পালন করেছেন। এমনকি বিগত দশ বছর ধরেই করে আসছেন। গেল এক দশকে তাইজুল ইসলাম টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ৪৬টি। যার ৭৮টি ইনিংসে তিনি ব্যাট হাতে নেমেছিলেন বাইশ গজে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ মিলিয়ে মোট ১৭৩৩টি বল মোকাবেলা করেছেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটার।
এই সময়ে স্রেফ ৩৭.৭৩ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট চালিয়েছেন তাইজুল। ৪৬ টেস্টে তার সংগ্রহ ৬৫৪ রান। তবে উইকেটে দাঁড়িয়ে খুব বেশি কিছু চেষ্টা করবার প্রবণতা তাইজুলের কখনোই ছিল না। তিনিই স্রেফ টেস্ট ক্রিকেটটাই খেলতে চেয়েছেন বাইশ গজে। ব্যাট হাতে নিজের ইচ্ছেকে দীর্ঘায়িত হয়ত করতে পারেননি। তবে চেষ্টায় কমতি রাখেননি।
রানের বিচারে না হোক, নিজের ইনিংসকে সময়ের বিচারে বড় করতে চেয়েছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিচারে বড় ইনিংসই খেলেছেন তিনি। প্রয়োজনের মুহূর্তে তাইজুল যে একটা সেশন উইকেটে কাটিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন, সেটাই অন্তত শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশের প্রাপ্তি।