মানুষের জীবনের মত ক্রিকেট খেলাতেও জুটি বলে একটি বিষয় আছে। যেখানে ব্যাটসম্যানরা দুইজন পরস্পরের উপর আস্থা রেখে খেলে যায়। আর এই একটা জুটিই পারে ম্যাচ থেকে বিপরীত দলকে ছিটকে দিতে।
ক্রিকেট মাঠে বড় সংগ্রহের জন্য যেকোনো জুটির অবদান অনস্বীকার্য। জুটির গড়ে যত বেশি রান ব্যাটসম্যানরা সংগ্রহ করতে পারবে তত বেশি রান দলের স্কোর বোর্ডে যোগ হবে।
বিশ্বকাপের মঞ্চে সব দল যায়, ভালো খেলার প্রতিজ্ঞা নিয়ে। যে দল যত ভালো খেলবে তত তাঁদের বিশ্বকাপ পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যায়। দলের ভালো পারফর্মেন্সের জন্য ব্যাটসম্যানদের করা জুটিই সবচেয়ে বড় অবদান রাখে। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫০ বা তাঁর থেকে বেশি রানের জুটি করেছেন এমন ক্রিকেটারদের তালিকা নিয়ে খেলা ৭১ এর আজকের এই আয়োজন।
- অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং ম্যাথু হেইডেন (অস্ট্রেলিয়া)
এই ওপেনিং জুটি ছিলো সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা এক জুটি। তাঁদের সময়ের অন্যতম মারকুটে জুটি ছিলো গিলক্রিস্ট-হেইডেন জুটি। আগে যেখানে ডানহাতি-বামহাতি ওপেনিং জুটি নামিয়ে সব দল সাফল্য পেত সেখানে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেনিং জুটির দুই জনই ছিলেন বামহাতি ব্যাটসম্যান।
এই জুটি দুই বিশ্বকাপে দলের হয়ে ইনিংসের গোড়া পত্তন করেছেন। ২০০৩ এবং ২০০৭ এই দুই বিশ্বকাপে মোট ১২ বার ৫০ বা তাঁর চেয়ে বেশি রানের জুটি গড়েন তাঁরা। গিলক্রিস্ট এবং হেইডেন জুটির উপর করেই বিশ্বকাপের আসরে দূর্দান্ত সব জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
- বীরেন্দ্র শেবাগ এবং শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
এই জুটির দুই ব্যাটসম্যান দুই ধরনের ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত ছিলেন। শেবাগের আস্থা ছিলো মারকুটে ব্যাটিংয়ে আর ক্রিকেট ঈশ্বর শচীনের ভরসা ছিলো ক্লাসিক ব্যাটিংয়ে। শেবাগ সবসময় চাইতেন বোলারদেরকে তুলোধনা করতে আর শচীন চাইতেন ধীরে সুস্থে ইনিংস গড়ে তুলে কার্যকর এক ইনিংস খেলতে।
এই জুটি তিন বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে ইনিংসের শুরু করেছেন। ২০০৩,২০০৭ এবং ২০১১ এই তিন বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট ৮ বার বিশ্বকাপে ৫০ বা তাঁর চেয়ে বেশি রানের জুটি গড়েছেন তাঁরা। এই জুটির উপর ভরসা করেই ২০১১ বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছে ভারত।
- রিকি পন্টিং এবং স্টিভ ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া)
ডানহাতি দুই ব্যাটসম্যানের জুটি এটি। তাঁরা দুই জনই মূলত অস্ট্রেলিয়া দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। পন্টিং এবং স্টিভ ওয়াহ দুই জনই দলের প্রয়োজনে যেকোনো ভাবে নিজেদের ব্যাট চালাতে পারতেন। আর দুই জনই নিজের দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার।
তাঁরা শুধু ব্যাটিংয়ে নয় ফিল্ডিংয়েও ছিলেন দূর্দান্ত আক্রমণাত্মক। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের সঠিক বাহক ছিলেন রিকি পন্টিং এবং স্টিভ ওয়াহ। এই দুইজন বিশ্বকাপের মঞ্চে মোট ৭ বার ৫০ কিংবা তাঁর থেকে বেশি রানের জুটি গড়েন।
- অ্যারন ফিঞ্চ এবং ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া দলের ওপেনার। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর ওপেনিং জুটি হলো এই জুটি।
ক্রিকেটে ডানহাতি-বামহাতি ব্যাটিং জুটি বোলারদের লাইন লেন্থ সহজেই নষ্ট করে দেয়। এই সুযোগের সঠিক ব্যবহার করে বেশ আক্রমণাত্ম ক্রিকেট খেলে ফিঞ্চ-ওয়ার্নার জুটি।
এই জুটি অস্ট্রেলিয়ার ২০১৫ বিশ্বকাপ জয়ে বেশ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার পিছনে অবদান ছিলো এই জুটির। এখন এই জুটি দুই বিশ্বকাপ খেলে ৭ টি ৫০ কিংবা এর চেয়ে বেশি রানের জুটি গড়েছেন।
- ব্রেন্ডন ম্যাককলাম এবং মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)
বিশ্বের অন্যতম মারকুটে ওপেনিং জুটি ছিলো এটি। দলের প্রয়োজনে যেকোনো ধরনের ঝুকি নিতে পারতো এই জুটি। এই জুটি ২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওপেনিং করেছিলো।
এই জুটির ব্রেন্ডন ম্যাককলাম এবং মার্টিন গাপটিল দুই জন ছিলেন বিপরীত ধর্মী ব্যাটসম্যান। শুরু থেকেই বেশ আক্রমণাত্ম খেলতেন ব্রেন্ডন ম্যাককলাম এবং দলের প্রয়োজনে শেষের দিক বেশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতেন তিনি। এই জুটি দুই বিশ্বকাপ খেলে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৭ বার ৫০ কিংবা তাঁর থেকে বেশি রানের জুটি গড়েছে।
- সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার হলেন সাকিব এবং মুশফিক। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম ভরসার নাম তাঁরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে অনেক জয় এনে দিয়েছেন তাঁরা। বাংলাদেশের মিডল অর্ডারে সবচেয়ে বেশি ভরসা থাকে এই দুইজনের উপর। তাঁরা ভালো করলেই দল ভালো করে।
এছাড়াও এই দুই জনের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে কিছু কার্যকর জুটি আছে। সাকিব এবং মুশফিক বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ এবং ২০১৯ এই চার বিশ্বকাপ। এই চার বিশ্বকাপে মোট ৭ বার ৫০ কিংবা তাঁর চেয়ে বেশি রানের জুটি গড়েছে।