হেলমেট ছাড়া গতির মোকাবেলা

অপরাজেয় সেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন রিকি পন্টিং স্বয়ং নিজেই। ক্রিকেট পুল কিংবা হুক শট যদি শিল্প হয়ে থাকে পন্টিং ছিলের সেই শিল্পের শিল্পী। এবার সেই পন্টিংয়ের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অজানা এক কাহিনী শুনিয়েছেন তাঁরই এক সময়কার সতীর্থ ব্রেট লি।

১৯৯৯ থেকে ২০০৭- ক্রিকেট ইতিহাসে এই সময়কালে অপরাজেয় এক দলের নাম অস্ট্রেলিয়া। টানা তিন বিশ্বকাপ শিরোপা তো আছেই, সাথে টানা ১৬টি টেস্ট সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়েছিল তাঁরা। সেই অস্ট্রেলিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্যের আঁচ এখন কিছুটা কমলেও পুরনো আগ্রাসনটা ঠিকই তাদের মধ্যে আছে। শেষবার ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা গিয়েছিল এই অজিদের দূর্গেই।

তবে নির্দিষ্টভাবে রিকি পন্টিংয়ের অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়ার সে দলটাই সব চেয়ে বেশি সময় প্রতিপক্ষের কাছে ত্রাসের কারণ হতে পেরেছিল। কে ছিল না সেই দলে। ম্যাথু হেইডেন থেকে শুরু করে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, রিকি পন্টিং এরপর বোলিংয়ে ব্রেট লি, গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো তারকারা একই সাথে একই একাদশে খেলতেন। যারা তাদের নিজের জায়গার দিক দিয়ে ছিল ক্রিকেট বিশ্বেরই সেরাদের একজন। তাই পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া ছিল সময়ের সেরা এমনকি তর্কসাপেক্ষে সে দলটাকে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরা দল বলা যায়।

অপরাজেয় সেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন রিকি পন্টিং স্বয়ং নিজেই। ক্রিকেট পুল কিংবা হুক শট যদি শিল্প হয়ে থাকে পন্টিং ছিলের সেই শিল্পের শিল্পী। এবার সেই পন্টিংয়ের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অজানা এক কাহিনী শুনিয়েছেন তাঁরই এক সময়কার সতীর্থ ব্রেট লি।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে স্মৃতিচারণা করে সে সব গল্প শুনিয়েছেন ব্রেট লি। তিনি বলেন, ‘১৯৯০ এর দিকে রিকি পন্টিং আমাদের অ্যাকাডেমিতে আসে। আমরা তখন রডনি মার্শের অধীনে অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করি। তখন ব্যাটার কিংবা বোলার, সবাইকেই নেটে ক্রিকেটে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ১২টা করে বল খেলতে হতো। আমরা যারা বোলার ছিলাম তাদের জন্য এই ড্রিলটা খুব কঠিন ছিল। কারণ আমরা পুরোদস্তুর ব্যাটার ছিলাম না। এ কারণে ১৬০ কিমি গতিতে আসা সে সব বলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লাগত। কোনো কোনো সময় মাথাতেও আঘাত লাগত। এজন্য সবসময় হেলমেট লাগতো।’

তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো রিকি পন্টিং সে সব বল খেলতে নামতো শুধুমাত্র ক্যাপ পরে। রড মার্শ প্রথমদিকে নিজেও খুবই অবাক হতেন, একই সাথে রিকিকে নিয়ে ভয় পেতেন। কিন্তু পন্টিং  ১৬০ কিমি গতির বলকে ‘ইনফ্রন্ট অফ দি স্কোয়ার’ দিয়ে একের পর এক শট মারতে পারতো হেলমেট ছাড়াই। রড মার্শও অসাধারণ এক প্রতিভা পেয়ে যান। রিকি পন্টিংকে নিয়ে আলাদা কাজ করতেন। নিজেও কোচিং করার সময় রিকিকে নিয়ে সবার সামনে বলতেন,  এই ছেলেটা (রিকি) দীর্ঘ দিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলবে। ও আমাদের জন্য দারুণ একটা সম্পদ।’

রডনি মার্শের সে ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণ করেছিলেন রিকি পন্টিং। ওয়ানডে আর টেস্ট, দুই ফরম্যাটেই করেছেন ১৩ হাজারের বেশি রান। সবমিলিয়ে ৭১ টি শতকে ক্যারিয়ারকে আলোকিত করেছেন ২৭৪৮৩ রান করে। অজি ব্যাটার হিসেবে যা এখনো সর্বোচ্চ। আর অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছেন টানা দুই বিশ্বকাপ। এর মধ্যে ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি নিজেই। লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট বলতে যা বুঝায় তাঁর সবকিছুই ছিল রিকির মাঝে।

বাইশ গজ থেকে অবসর নেওয়ার পর এখনো ক্রিকেটের সাথেই আছেন তিনি। কোচিংয়ের সাথে যুক্ত হয়েছেন বেশ ক’বছর হলো। বর্তমানে আইপিএলের দল দিল্লী ক্যাপিটালসের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এর আগে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কোচ হয়ে দুই বার আইপিএল শিরোপা জিতিয়েছিলেন পন্টিং। ক্রিকেটার , অধিনায়ক, কোচ- সবকিছুতেই সফল এই অজি গ্রেট। দিনশেষে নিজের এত সব কীর্তির জন্য ঈশ্বরকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন রিকি পন্টিং।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...