কালো মেঘে ইতি ক্যান্ডি টেস্টের

ম্যাচের চার দিন শেষ, দুই দলের প্রথম ইনিংসই শেষ হয়নি। পালেকেল্লে টেস্ট যে ড্র হচ্ছে এটা গতকালই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত টেস্টের পঞ্চম দিনে তো কত কিছুই হয়; তাই শেষের অপেক্ষা তো ছিলই। তবে শেষ দিনে কোন রোমাঞ্চ ছড়ায়নি; ম্যাচের শেষ সেশনে বৃষ্টি নামায় দুই দলের সম্মতিতে নিষ্প্রাণ ড্র ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ।

ড্রয়ের দিকে এগিয়ে গেলেও পঞ্চম দিনে হতে পারতো অনেক কছুই। বৃষ্টি না আসলে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি মিস করার আক্ষেপ হয়তো দূর করতেন তামিম। ট্রিপল সেঞ্চুরি করার সুযোগ ছিলো দ্বিমুথ করুনারত্নের। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাতছানি দিচ্ছিল ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। টেস্টে প্রথম পাঁচ উইকেট পেতে পারতেন তাসকিন আহমেদ। কিন্তু এর কিছুই হয়নি।

তবে এই টেস্টে যেটা হয়েছে সেটাই বা কম কি। টেস্টে এর আগে চার বার দেড়শো ছুঁয়ে ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ না পাওয়া করুনারত্নে আক্ষেপ দূর করেছেন। ধারাবাহিক ভাবে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। মুমিনুল হক দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছেন।

শুধু ব্যাক্তিগত অর্জনই আসেনি; তিন ফরম্যাটে টানা হেরে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দলের কাছে এই ড্র হয়তো জয়ের থেকেও বেশি কিছু। কিছু না হোক ক্রিকেটারদের মানসিক প্রশান্তি অন্তত দিয়েছে। হারের বৃত্তে থাকা মুশফিক তামিমদের মনোবল একটু হলেও সতেজ করেছে।

তবে ১০৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল আক্রমণাত্মক শুরু করলেও ইনিংসের শুরুতে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সাইফ হাসান ১ রান করে ফিরে যাওয়ার পর আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরে যান কোন রান না করেই।

এরপর তৃতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকের ৭৩ রানের জুটিতে সব চাপ দূর করে বাংলাদেশ। এরপরই আসে বৃষ্টি। বৃষ্টি নামার আগে ২ উইকেট হারিয়ে ১০০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। তামিম ৯৮ বলে ৭৪ রান ও মুমিনুল হক ৮৬ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। তামিমের সেঞ্চুরি পাওয়ার সুযোগ ছিল, বৃষ্টির জন্য সেটা আর হয়নি।

এর আগে বোলাররা গতকাল হতাশাময় দিন কাটানোর পর আজ দিনের শুরুতেই সাফল্য পেয়েছেন। দিনের শুরুতে ৩ উইকেটে ৫১২ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে আজ আর বেশি দূর যেতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা।

দিনের শুরুতেই জোড়া আঘাতে তাসকিন আহমেদ ফিরিয়ে দেন গতকাল দাপট দেখানো দুই ব্যাটসম্যান দ্বিমুথ করুনারত্নে ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। ৪৩৭ বলে ২৪৪ রান করে টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলে আউট হন করুনারত্নে। আর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ফিরে যান ১৬৬ রান করে।

জোড়া আঘাতের পর পাথুম নিসানকা ফিরে গেলেও দ্রুত রান তোলে শ্রীলঙ্কা। ৮ উইকেটে ৬৪৮ রান করে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে গিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর ৩ টি উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। এছাড়া তাইজুল ইসলাম ২ টি ও ১ টি করে উইকেট শিকার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও এবাদত ইসলাম।

প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৫৪১ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৬৩ রান করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এছাড়া মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে আসে ১২৭ রান এবং হাফ সেঞ্চুরি করেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। মুশফিকুর রহিম ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন ও লিটন দাসের ব্যাট থেকে আসে ৫০ রান।

শ্রীলঙ্কার বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন বিশ্ব ফার্নান্দো। বাংলাদেশের রানের পাহাড় গড়ার ইনিংসে এই পেসার শিকার করেন ৪ উইকেট। এছাড়া ধনাঞ্জয়া, লাকমল ও কুমারা শিকার করেন একটি করে উইকেট।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৪১/৭ ডিক্লেয়ার, ওভার: ১৭৩ (তামিম- ৯০, সাইফ- ০, নাজমুল- ১৬৩, মুমিনুল- ১২৭, মুশফিক- ৬৬*, লিটন- ৫০*, মিরাজ- ৩, তাইজুল- ২, তাসকিন- ৬*; ফার্নান্দো- ৩৫-৯-৯৬-৪, কুমারা- ২৮-৪-৮৮-১,
লাকমল- ৩৬-১৪-৮১-১, ধনাঞ্জয়া- ৩০-১-১৩০-১)

শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৬৪৮/৭ (ডিক্লেয়ার ওভার: ১৭৯ (থিরিমান্নে- ৫৮, করুনারত্নে- ২৪৪, ফার্নান্দো- ২০, ম্যাথিউজ- ২৫, ধনাঞ্জয়া- ১৬৬; মিরাজ- ৫৮-৬-১৬০-১, তাসকিন- ৩০-৬-১১২-৩, তাইজুল- ৪৫-৯-১৬৪-২, এবাদত- ২১-১-৯৯-১)

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১০০/২ (ওভার: ৩৩; তামিম- ৭৪*, সাইফ- ১, নাজমুল- ০, মুমিনুল- ২৩*; লাকমল- ৮-২-২১-২)

ফলাফল: ড্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link