আসিফের ‘স্মরণীয়’ সেই ম্যাচ

মোহাম্মদ আসিফ – বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আক্ষেপের একজন তিনি, পাকিস্তান ক্রিকেটের তো বটেই। প্রবল সম্ভাবনা আর প্রতিভা জাগিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। তাঁর অসাধারণ স্যুইং ভেলকিতে নাচিয়েছেন তার সময়ের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের।

সর্বকালের সেরাদের একজন হবার সব কোয়ালিটি ছিলো তার মধ্যে। তবুও স্পট ফিক্সিং আর ইনজুরিতে নিজ হাত ধূলিসাৎ করে দেন সাজানো ক্যারিয়ার। যে মানুষটার সেরাদের কাতারে থাকবার কথা ছিলো সেই মানুষটাই এখন আক্ষেপের তালিকায়।

২০১০ সালে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে সাত বছরের নির্বাসনে যাবার আগে ২৩ টেস্টে নিয়েছিলেন ১০৬ উইকেট। ৩৮ ওয়ানডেতে ৪৬ আর ১১ টি-টোয়েন্টিতে ১৩ উইকেট। তার উইকেট আর পরিসংখ্যান দিয়ে তার প্রতিভা যাচাই করলে সেটা নেহাৎ ভুলই হবে।

তাঁকে একসময় ওয়াকার ইউনুস-ওয়াসিম আকরামদের সাথে তুলনা করা হতো। ২০০৫ সালে অভিষেক হবার পর ২০১০ সালে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে নিজের আশা জাগানো ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেন তিনি। এরপর অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফিরতে পারেননি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আসিফ তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বেশ কিছু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে করাচি টেস্টের কথা উল্লেখ করেন। সেই ম্যাচের পারফরম্যান্সই মূলত তাঁকে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি দেয়।

আসিফ বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের বেশ কিছু ভালো স্মৃতি আছে কিন্তু ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচটা আমার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ওই ম্যাচটা আমার ক্যারিয়ারের পথ সহজ করে দেয়। আমি ২০০৬ সালে করাচিতে ভারতের বিপক্ষে আমার খেলা ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় টেস্টেই ৭ উইকেট লাভ করেছিলাম! যার দলে পাকিস্তান ৩৪১ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায়।’

স্মৃতিচারণা করে আসিফ বলেন, ‘ওই ম্যাচের আগে আমি মাত্র দুই টেস্ট খেলেছিলাম। বেশ পারফরম্যান্স করেছিলাম এবং মাত্র এক উইকেট শিকার করেছিলাম। তখন আমার মাত্র ২৩ বছর হলেও অনেকেই মন্তব্য করা শুরু করে দেয় যে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত না। এরপর করাচিতে সেই টেস্টে আমি রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং এবং ভিভিএস লক্ষ্মণকে দুইবার করে আউট করি, এছাড়া শচীন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দ্র শেবাগের উইকেটও শিকার করেছিলাম। আমি ওই ম্যাচে প্রমাণ করেছিলাম যে আমার মধ্যে কতটুক সক্ষমতা আছে এবং পুরো বিশ্বই তখন সেটা দেখেছিলো।’

অবশ্য, সেই টেস্টে শুধু যে আসিফই পেস ভেলকি দেখিয়েছেন তা নয়। আসিফের দূর্দান্ত পারফর্ম করা সেই করাচি টেস্টেই প্রথম ওভারে হ্যাট্রিকের রেকর্ড গড়েন ভারতীয় পেসার ইরফান পাঠান। টসে জিতে সেই ম্যাচে ভারত প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৪৫ রানেই গুড়িয়ে যায়।

তবে ইউনুস খানের নেতৃত্বে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান অসাধারণ ভাবে ফিরে আসে এবং ভারতের সামনে ৬০৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যমাত্রা ছুঁড়ে দেয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে যুবরাজের ১২২ বলে ১৪৪ রানের অসাধারণ ইনিংসের পরেও ২৬৫ রানেই গুড়িয়ে যায় ভারত। পাকিস্তান ৩৪১ রানের দূর্দান্ত এক জয় পায়।

পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটা স্মরণীয়, স্মরণীয় ছিল আসিফের জন্যও। তবে, বলা বাহুল্য তিনি নিজেই নিজের ক্যারিয়ারটা বিসর্জন দিয়েছেন। এখন আঁর তাই তিনি কোনো আলোচনাতেই ঠাই পান না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link