বর্তমান গ্রহের তিন সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদো ও নেইমার জুনিয়র। সাফল্যের পাশাপাশি আয়ের দিক থেকেও খুব কাছাকাছি এই তিনজন। নেইমার বয়সে কিছুটা ছোট হলেও অর্থ কড়িতে খুব একটা পেছনে নেই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। তবে অনেকদিন ধরে আয়ে সবার উপরে থাকা মেসিকে পেছনে ফেলেছেন রোনালদো। এখন এই পতুর্গিজ সুপারষ্টারের আয়ের পরিমান ১১০০ কোটি টাকা।
মেসি-রোনালদো দুজনেই ক্লাব বদল করেছেন। সে হিসেবে কিছুটা উল্টো পথে রয়েছেন তারা। পুরনো ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে রোনালদো দারুণ ছন্দে থাকলেও পিএসজিতে এখনো নিজেকে ঠিকঠাক মেলে ধরতে পারেননি মেসি। এই সময়ে আবার ইনজুরিতেও পড়েছেন এলএম ৩০। যখন এই অবস্থা তখন সামনে এল মেসিভক্তদের মন খারাপ করে দেওয়ার মতো আরেকটি সংবাদ। আয়ের দিকেও আর্জেন্টাইন সুপারষ্টারকে পেছনে ফেলেছেন রোনালদো। ফোর্বসের প্রকাশিত এক আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে এ বছর রোনালদোর আয় ১২৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ১১০০ কোটি টাকা)।
প্রতিবেদন বলছে, রোনালদোর চেয়ে এ বছর ১৫ মিলিয়ন ডলার কম আয় মেসির। তালিকার দুইয়ে থাকা পিএসজি মহাতারকার আয় ১১০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা)। টাকার অংকে ১৫০ কোটি টাকা পেছলে রয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। রোনালদো আর মেসির পরে অবস্থান করছেন নেইমার জুনিয়র। এই তালিকার তিনে থাকা ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারের আয় ৯৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা)।
তালিকার এরপরের সাতজনের আয় ৫০ মিলিয়ন ডলারেরও নিচে রয়েছে। দলবদল নিয়ে অনেক নাটকের পর তালিকার চারে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পের বছরে আয় ৪৩ মিলিয়ন ডলার। লিভারপুল তারকা মোহামেদ সালাহর ৪১ মিলিয়ন ডলার, বায়ার্ন মিউনিখ তারকা রবার্ট লেভান্ডস্কি আয় বছরে ৩৫ মিলিয়ন ডলার। এদিকে তালিকার শেষ চারে আছেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, পল পগবা, গ্যারেথ বেল ও এডেন হ্যাজার্ড।
ফুটবলে মেসিকে ছাপিয়ে ২০২১ সালের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী হলেও সবমিলিয়ে রোনালদো সবার উপরে নন। এখানে বাণিজ্যিক উপার্জনের ক্ষেত্রে সিআর সেভেনের চেয়েও এগিয়ে আছেন মাত্র তিনজন সক্রিয় ক্রীড়াবিদ। তারা হলেন, রজার ফেদেরার, লেব্রন জেমস ও টাইগার উডস। রোনালদোর আয়ের মধ্যে ৭ কোটি ডলার (৫৯৮ কোটি টাকা) আসবে ইউনাইটেডে তার বেতন এবং বোনাস থেকে।
বাণিজ্যিক চুক্তি থেকেই ৫.৫ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আয় করা রোনালদো স্পনসরশিপের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আয় করা বৈশ্বিক ক্রীড়াবিদদের মধ্যেও একজন। বাণিজ্যিক উপার্জনের ক্ষেত্রে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকার চেয়ে এগিয়ে আছেন মাত্র তিনজন। রজার ফেদেরার (৯ কোটি মার্কিন ডলার), লেব্রন জেমস (৬.৫ কোটি মার্কিন ডলার) এবং টাইগার উডস (৬ কোটি মার্কিন ডলার) আয় করে রোনালদোর আশেপাশে রয়েছেন।
লিওনেল মেসির কাছে অবশ্য বিষয়গুলো খুবই স্বাভাবিক। কারণ ৩০ জুন চুক্তি শেষ হওয়ার পর দুই মাস চুক্তিবিহীন ছিলেন তিনি। এ সময়টাতে তার আয়ে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। কোপা আমেরিকা কাপ জেতার সময় কোন ক্লাবে খেলবেন সে বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি ভাববার সময়ও পাননি। তবে ইচ্ছে ছিল আরেকটি মৌসুম বার্সেরোনায় কাটিয়ে আসতে। কিন্তু সেটি আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ক্লাব বদল করা পর মেসি-রোনালদো দুজনকে নিয়েই কথা উঠেছে তারা কোন মানের ফুটবলার।
স্বভাবজাত প্রতিভা বলতে যা বোঝায় সেটি দুজনেই ছিলেন। সে কারণেই এত দিন ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে ছিলেন মেসি ও রোনালদো দুজনেই। মৌসুমের পর মৌসুম ধরে ক্লাব তাঁদের ঘিরে শিরোপা জেতার নানা পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি কিভাবে তাদেরকে ব্যবহার করে ক্লাবের আয় বাড়ানো যায় সেই চিন্তাও নিয়মিতভাবে করে গেছেন রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, জুভেন্টাসের মতো ক্লাবগুলো। মাঠে তাঁদের প্রাধান্য দিয়ে প্রতিপক্ষ বর্ধের ছক কষেছেন কোচরা। মহাতারকা না হলে এসব তো সম্ভব হয়না।
তবে জীবন একদিন শেষ হয়, সেটি হোক কিংবদন্তী কিংবা সাধারন কেউ। সে কারণেই কবি জীবনানন্দ দাসের ভাষায় ‘নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’। ৩৪ ও ৩৬ বছর বয়সে এসে মেসি ও রোনালদো পুরোনো সেই দিনগুলো মুঠো থেকে ক্রমশ বেরিয়ে যাচ্ছে। আগে যেখানে পুরো সময় নেতৃত্ব দিতে হতো মাঠে, এখন সেখানে দলের গোলের প্রয়োজনের সময়ও কোচরা তাঁদের তুলে বদলি হিসেবে অন্য কাউকে নামিয়ে দেন!
হয়তো ধার কমে যাওয়ায় প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বসেরা এ দুই ফুটবলারকে এখন আর দশজন সাধারণ খেলোয়াড়ের মতোই দেখছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ ওলে গুনার সুলশার এবং পিএসজি কোচ মরিসিও পচেত্তিনো। নইলে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেন এমনটি দেখা যাবে।
অথচ যে চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্রিস্টিয়ানা রোনালদোর টুর্নামেন্ট হিসেবে খ্যাত, সেখানে ইয়ং বয়েজের বিপক্ষে ম্যানইই ১-১ গোলে সমতায় থাকার সময়ে তাঁকে তুলে নেন সুলশার। ইউনাইটেডকে প্রথম গোলটা এনে দেওয়ার পরও তুলে নেওয়ায় রোনালদো মাঠ ছেড়েছেন কালো মুখে। ডাগআউটে মুখ ভার করে অনেকক্ষন বসেও ছিলেন। মেসির মুখের চিত্রও অবশ্য আলাদা ছিল না।
এদিকে ফরাসি লিগ ওয়ানে লিঁও’র বিপক্ষে ম্যাচে ১-১ গোলে সমতায় থাকার সময়ে মেসিকে তুলে নেন পিএসজি কোচ পচেত্তিনো। যোগ করা সময়ে মাউরো ইকার্দির গোলে পিএসজি শেষ পর্যন্ত জিতলেও পচেত্তিনোর বার্তাটা অনেকটাই পরিষ্কার ছিল, গোলের জন্য তিনি মেসির ওপর ভরসা রাখতে পারেননি বলেই তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন। অথচ গত মৌসুমেও পরিস্থিতি এমনটা ছিলনা।
পর্তুগিজ তারকার মতো আর্জেন্টাইন তারকাও এভাবে বদলি হিসেবে মাঠ ছাড়তে কোনভাবেই অভ্যস্ত ছিলেন না। তাই অঅগের সেই প্রয়োজনীয়তা কিছুটা হলেও যে কমেছে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। মেসি-রোনালদো দুজনকেই আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে। দলের একাদশে নিয়মিত থাকতে হলে নিজেকে আরও একবারের জন্য প্রমাণও করতে হবে।