সমান্তরাল সুনীল
তার চার মাস আগে ভারতের কাছে বিশ্বকাপ হারানো দোর্দন্ডপ্রতাপ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কয়েকদিন আগে কানপুরে প্রথম টেস্টে তুলোধোনা করে ইনিংসে হারিয়েছে ভারতকে। প্রয়াত ম্যালকম মার্শাল একাই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলেন, দুই ইনিংসেই আউট করেছেন এক ভারতীয় ওপেনারকে, যার ডাকনাম ছিল সানি, মানে সুনীল গাভাস্কার। তা দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগের দিন ২৮ অক্টোবর প্র্যাক্টিসে দিল্লীর সুসভ্য বোদ্ধা দর্শকরা বলে দিয়েছিলেন, ‘সানি, তেরে পিছে মার্শাল আ রাহা হ্যায়।’ এবং প্রচুর ‘আনন্দ’ পেয়েছিলেন।
পিওর জ্যামিতি যেন। নিচের ছবিতে ব্যাটার দু’জনের সঙ্গে তাদের ব্যাট দুটিকেও দেখুন। খাঁটি সমান্তরাল। জ্যামিতির শিক্ষা, সমান্তরাল রেখারা কখনো না মেলা রেখা হয়েই থেকে যায়।
ছবি দু’টো গুগল থেকে নেওয়া। ৩৮ বছর আগে আমাদের গুগল বলে কোন আত্মীয় ছিল না। তার বদলে ছিল একটা গল্প। ‘৩৮ বছর’ আগের অথবা ‘৩৮ বছর’ পুরনো একটা গল্প। না না, যা ভাবছেন তা না। আসলে গল্পও তো সত্যি হয় কখনো কখনো। এটা গল্প হলেও সত্যি। স্কিপ করবেন না লেখাটা।
২৯ অক্টোবর ২০২১। ঠিক ৩৮ বছর আগে ২৯ অক্টোবর ১৯৮৩ দিনটা ছিল শনিবার। আজও স্পষ্ট চোখের সামনে।মুখস্থ বলে যেতে পারি দিনটার কথা, কোনরকম গুগল রেফারেন্স ছাড়াই।
তার চার মাস আগে ভারতের কাছে বিশ্বকাপ হারানো দোর্দণ্ডপ্রতাপ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কয়েকদিন আগে কানপুরে প্রথম টেস্টে তুলোধোনা করে ইনিংসে হারিয়েছে ভারতকে। প্রয়াত ম্যালকম মার্শাল একাই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলেন, দুই ইনিংসেই আউট করেছেন এক ভারতীয় ওপেনারকে, যার ডাকনাম ছিল সানি, মানে সুনীল গাভাস্কার। তা দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগের দিন ২৮ অক্টোবর প্র্যাক্টিসে দিল্লীর সুসভ্য বোদ্ধা দর্শকরা বলে দিয়েছিলেন, ‘সানি, তেরে পিছে মার্শাল আ রাহা হ্যায়।’ এবং প্রচুর ‘আনন্দ’ পেয়েছিলেন।
সব অপমানের জবাব দিল একটি ব্যাট পরদিন, ২৯ অক্টোবর। সেদিন ধ্বংসযজ্ঞ চালালেন সেই ব্যাটের মালিক। এবং সেদিন উইন্সটন ডেভিস, মাইকেল হোল্ডিং বা ওয়েন ড্যানিয়েলের চেয়েও ওনার হাতে অনেক বেশি ‘মার’ খেয়েছিলেন যে বোলার, তার নাম ছিল ম্যালকম মার্শাল।
২৯ শতরানের মালিক স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড (সেই সময় এভারেস্ট মানা হত) স্পর্শ করলেন সানি সেদিন। সমান্তরাল জ্যামিতিক অবস্থানের মতই সেদিন কখনো না মেলা রেখা হয়ে থেকে গিয়েছিলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান এবং সুনীল গাভাসকার। শেষ পর্যন্ত সানি ২২৪ মিনিটে ১২৮ বলে ১২১ রান (২X৬ আর ১৫X৪) করে চা বিরতির মিনিট ১৬ আগে ল্যারি গোমসের বলে বোল্ড হয়ে গিয়েছিলেন সেদিন। সেদিনের ৯৪.৫৩-ই ছিল সানির ৩৪টি শতরানকারী ইনিংসের মধ্যে সর্বোত্তম স্ট্রাইক রেট।
ঐ সিরিজেই মাদ্রাজে (চেন্নাই হয়নি তখনো) ষষ্ঠ টেস্টে ডনকে শতরানের সংখ্যার নিরিখে পেরিয়ে যান ক্রিকেটে ইজ্জত রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া প্রণম্য ওপেনার সানি গাভাস্কার। কোনদিন হেলমেট না পড়েই। ‘হাফ প্যান্ট পড়া বালক’ থেকে আজ ‘বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া’ এই অধমের সব সময়ের ক্রিকেট হিরো সানি গাভাস্কারকে আজ ৩৮ বছরেরও বেশি সময় পরে ঐ দিনটার কীর্তির জন্য প্রণাম জানাই।
আমি চাই আমার জীবনের শেষ দিন অবধি এই সানি-আচ্ছন্নতা আমাকে আগলে রাখুক। সানিকে খেলতে দেখে ফেলার পরে এক জীবন আর কি চাইতে পারে?