মদ্যপান করেন না বলেই বৈষম্য!

আজিম রফিক ও ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের ফাটানো বোমার রেশ এখনও কাটেনি। বরং ক্রমেই যেন বিতর্কটা আরো প্রকট হচ্ছে।

ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট তাদের করা বর্ণবাদের অভিযোগে কাঁপছে। এই সময়ে সাবেক ক্যারিবিয়ান তারকা টিনো বেস্ট বললেন, এশিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে অবশ্যই ইংল্যান্ডের কাউন্টি দলগুলোতে বৈষম্য করা হয়। আর সেটার একটা বড় কারণ, এই এশিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়রা মদ্যপান করে না!

বর্ণবাদের অভিযোগ গত কিছুদিন ধরেই ক্রিকেটকে বেশ কাঁপাচ্ছে। সর্বশেষ এই অভিযোগ করেছিলেন সাবেক ইয়র্কশায়ারের ক্রিকেটার আজিম রফিক। তিনি বলেছিলেন, তাকে ক্লাবে থাকতে একজন খেলোয়াড় জোর করে গলায় রেড ওয়াইন ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও তিনি বর্ণবাদী বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

এই ঘটনার জের অনেক লম্বা হয়েছে। রফিক ইংল্যান্ডের সংসদীয় কমিটির সামনে গিয়েও জবানবন্দী দিয়েছেন। তার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে ইয়র্কশায়ারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নিজেদেরকে ক্লাব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্লাবটির কাছ থেকে আর্ন্তজাতিক ম্যাচ আয়োজনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পদত্যাগ করেছেন এক ঝাঁক ক্লাব কর্মকর্তা।

আজিমের অভিযোগের পর আরও অনেকে মুখ খুলেছেন। ইংল্যান্ডের সাবেক ও বর্তমান বেশ কিছু তারকা খেলোয়াড়ের বিপক্ষে বর্ণবাদী আচরণ বা বর্ণবাদকে সহ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

এর মধ্যে সাবেক ভারতীয় খেলোয়াড় ফারুক ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, তিনিও ইংল্যান্ডে বর্ণবাদী বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। সত্তরের দশকে ফারুক ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে লম্বা সময় খেলেছেন। পরে ইংল্যান্ডে ধারভাষ্যও দিয়েছেন। খেলার সময় না হলেও ধারাভাষ্যের সময় তিনি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

এর মধ্যে একেবারে নতুন একটা তত্ত্ব নিয়ে এসেছেন ফাস্ট বোলার টিনো বেস্ট। তিনি বলছেন, পার্টি করে না এবং মদ্যপান না বলে এশিয়ানরা (মুসলিমরা) ও কালোরা ক্রিকেটে প্রাপ্য সুযোগ পায় না। বেস্ট বলছিলেন, ‘ওখানকার ক্রিকেটের সংস্কৃতি হলো মদ খাওয়া। এটা বড় সমস্যা। কাউকে ক্লাব হাউজে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া উচিত নয়। এবং কাউকে তাদের দলের অংশ হওয়ার জন্য নয়টা পাইন্ট গেলার জন্যও বাধ্য করা উচিত নয়।’

আর বেস্টের দাবি, এসব না করলেও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠে, ‘আপনি যদি ওদের মদ্যপানের সংস্কৃতির অংশ হতে না পারেন, ওরা তাহলে আপনাকে পুরুষদের মধ্যে বিবেচনা করবে না। আর সে ক্ষেত্রে আপনি ক্রিকেটে আর সুযোগ পাবেন না। এটাই কালোদের এবং এশিয়ানদের জন্য ওখানে বড় একটা সমস্যা হয়ে উঠেছে।’

টিনো বেস্ট মনে করেন, রফিক যে মুখ খুলেছেন, এটাই বড় একটা কাজ হয়েছে। কারণ, কিছুদিন আগেও লোকেরা এসব নিয়ে মুখ খুলতে ভয় পেতো, ‘আমি অবশ্যই বলবো – ওয়াও। ২০১০ সালেও কেউ এরকম কিছু বলছে, শুনলে আমি অবাক হতাম। ওদের কথা বলার তো কোনো প্লাটফর্ম ছিল না। কারণ তারা কথা বললে এই খেলার সুযোগ হারিয়ে ফেলার ভয় ছিলো। সেই সাথে তাদের ক্লাব থেকে বের করে দেওয়া হতো হয়তো। ওরা এসব খুবই ভয় পেত।’

বোঝা যাচ্ছে, পরিস্থিতি এখানেই শান্ত হওয়ার নয়।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link