টেস্টের অনন্য বিজ্ঞাপন

৮৯.২ ওভার খেলা হয়ে গিয়েছে। নিউ জিল্যান্ডের ১৫৫ রানে ৯ উইকেট পড়লো। নিউজিল্যান্ড ইনিংসে ন্যূনতম ৯৮ ওভার ব্যাটিং করতে হবে। খেলা বাকি আর ৯ ওভার! কী কাকতালীয় ব্যাপার! নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাচিন রবীন্দ্র আর অ্যাজাজ প্যাটেল! তাঁদের হাতে দায়িত্ব নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ম্যাচটা বাঁচানোর। বোলিংয়ে ভারতের স্পিন ট্রায়ো – রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা আর অক্ষর প্যাটেল!

তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, নিউজিল্যান্ডের দুই ব্যাটারের চারপাশে ভারতীয় ফিল্ডাররা ঘিরে ধরে আছে। একেকটা বল তাঁরা সলিড ডিফেন্স করে যাচ্ছেন। হঠাৎ একেকটা বল কানায় লেগে যাচ্ছে হালকা বাতাসে ভাসছে, কিন্তু একটাও ক্লোজ ফিল্ডারদের হাতে যাচ্ছে না। ব্যাটারদের আশেপাশে ফিল্ডাররা কেবল আহা, উহু করছেন। ওদিকে একটা করে ওভার পার হচ্ছে আর আম্পায়ার নিতিন মেনন লাইট মিটার দেখছেন।

একেক প্রান্তে গিয়ে লাইট মিটার দেখেন, ব্যাটারদের দেখান, রাহানেকে দেখান। আবার খেলা শুরু করান। ৪ ওভার আগে খেলা শেষ হয়েই যাচ্ছিলো। নিতীন মেনন কনভিন্স হয়েই গিয়েছিলেন যে লাইটের অবস্থা ভালো না, খেলা সম্ভব না। ‘এটাই শেষ ওভার’ – বলে দিলেন।

কী আশ্চর্য্য! প্রকৃতি যেন ভারতীয় স্পিনারদের পুরো সুযোগটাই দিতে চাইলো। হঠাৎ মেঘের কোল থেকে সূর্য বের হয়ে গেলো। ডুবন্ত সূর্যের শেষ আলো লাইট মিটারের কাঁটাটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলো। নিতীন মেনন বললেন শেষ ৩ ওভারও হবে। রাচিন আর অ্যাজাজকে পেলেন নিজেদের বীরত্ব প্রকাশের আরও একটু সুযোগ। স্পিন ট্রায়োর তিনজনই এক ওভার করে করলেন।

ব্যাটিংয়ে অনেকক্ষণ ধরেই ছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ভারতীয় বাবা ক্রিকেটপাগল বলেই রাহুল আর শচীনের নাম মিলিয়ে ছেলের নাম লিখেছেন রাচিন! কাকতাল পুরো করতে রাচিন রবীন্দ্রের খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক টেস্টটা কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়েরও অভিষেক টেস্ট!

রাচিনের কাঁধে দায়িত্ব ছিল আট নাম্বারে নেমে ম্যাচটাকে বাঁচানোর! ৯১ বল অপরাজিত থেকে, প্রায় ২৯ ওভার ক্রিজে থেকে শেষ সেশনটা কাটিয়ে দিলেন নিউ জিল্যান্ডের ড্রয়ের জন্য! নিউ জিল্যান্ডের ওয়াল হয়ে রাচিন নামটার মান রাখলেন! ভারতীয় বাবার মনে নিউ জিল্যান্ডার ছেলের জন্য গর্বের অনুভূতিটা মিশ্র বলেই মনে হয়!

তবে সব নাটক নিয়ে টেস্টটা আবারও টেস্ট ক্রিকেটের চিরন্তন সৌন্দর্য বুঝিয়ে দিলো। একটা টেস্ট ম্যাচও কী অসাধারণ উত্তেজনা ছড়াতে পারে, নিজের হৃদকম্পন শোনাতে পারে। এই টেস্টেই রবীচন্দ্রন আশ্বিন টেস্টে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটশিকারি হয়েছেন।

সেই উপলক্ষ্যে অভিনন্দন শুনে ম্যাচ শেষে রাচিন আর আজাজকে বললেন, ‘এটা টেস্ট ক্রিকেট। এটা কেবল এসে ৪ ওভার বল করে দেবার ব্যাপার না! এটাতে সব ক্যারেকটারের পরীক্ষা হয়। রাহুল দ্রাবিড় তাঁকে বলেছেন, ২০ বছর পরে টেস্ট ক্রিকেট কেবল রানসংখ্যা আর উইকেটসংখ্যার ব্যাপার না। টেস্ট ক্যারিয়ার একেকটা স্মৃতি তৈরি করার ব্যাপার!’

সত্যিই তো! টেস্ট ক্রিকেট তো সেই মেমোরিই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে সৃষ্টি করেই যাচ্ছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link