চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল। ভেতরে শুয়ে আছে তার ছেলেটি।
এখন আর ছেলেটাকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। ডাক্তাররা বলেছেন, তার কোনো সমস্যা নেই। ছেলেও বারবার বলেছে, সে সুস্থ আছে। সব পরীক্ষার ফল ভালো এসেছে। তারপরও বাবার মন বলে কথা। ছেলেকে রেখে দূরে যেতে পারছেন না। কেবিনের সামনে পায়চারী করছেন। বারবার মনে পড়ছে সেই কনিষ্ঠ আঙুল ধরে মাঠে নিয়ে যাওয়া তিন বছরের ছেলেটাকে।
আজ ছেলেটা বড় হয়ে গেছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আবার লড়াইয়ে নামার প্রতীজ্ঞা করছে। হ্যা, আবারও মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন শওকত আলী চৌধুরীর জেদী ছেলেটা-ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি। জাতীয় দলও আছে এখন তার অপেক্ষায়।
ছোটবেলা থেকে বারবার পড়ে, আঘাত খেয়ে উঠে দাড়াতে শেখা রাব্বি গত তিন বছর ধরে জাতীয় দলের সাথে আছেন। অবশেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেক হয়েছে রাব্বির। প্রথম ইনিংসে ১৯ বলে ভেঙে গিয়েছিলো প্রতিরোধ। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে পাল্টা আক্রমণে নিজের হাজিরা প্রমাণ করছিলেন রাব্বি। ৭২ বলে ৩৬ রান করে ‘অপরাজিত’ ছিলেন। কিন্তু মাঠ ছাড়তে হয় মাথায় আঘাত পাওয়ায়।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিন সকাল থেকে বেশ কিছু বল ডাক করেন ইয়াসির আলী রাব্বি। কিন্তু সবসময়ই একটা সমস্যা হচ্ছিলো, বল থেকে মাথা সরিয়ে নেওয়ার সময়টায় চোখ সরিয়ে ফেলছিলেন। এটাই কাল হয়েছিলো। শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ৩০তম ওভারের পঞ্চম বলটাকে সেই হেলমেটেই আঘাত পান রাব্বি।
বলের আঘাত লাগার পরও রাব্বি হাল ছাড়েননি। এরপর নোমান আলীর আরও একটা ওভার ব্যাটিং করেছেন তিনি। এরপর ড্রেসিংরুমে নিয়ে খানিক সময় রাব্বিকে পর্যবেক্ষন করা হয়। প্রটোকল অনুযায়ী রাব্বি সুস্থ না হলে তার একজন ‘কনকাশন বদলি’হিসেবে নুরুল হাসান সোহান মাঠে নামেন। রাব্বিকে স্ক্যান করানোর জন্য নেওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে স্ক্যানে দেখা যায় রাব্বির কোনো সমস্যা নেই।
নির্বাচকরা তাই আজ তাকে দলে রেখেই দ্বিতীয় টেস্টের দল ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে রাব্বির এক দফা কোভিড টেস্টে নেগেটিভ ফল এসেছে। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন আরেক দফা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে আগামীকালই দলের সাথে বায়ো বাবলে ঢুকে পড়বেন রাব্বি, ‘ওর এখন কোনো সমস্যা নেই। ভালো আছে। ওর ফল ভালো এলে দলের সাথে অনুশীলন শুরু করবে।’
আর রাব্বির বাবা জানালেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে খুবই সুস্থ আছেন তার ছেলে, ‘কোনো সমস্যা নেই। একদম ফুরফুরে আছে। শরীরে তো কোনো সমস্যা নেই। মানসিকভাবেই ভালো আছে।’
এরকম মাথায় আঘাত লাগলে একটা বড় সমস্যা হয় মানসিক ট্রমা। একটা ভয় জমে যায় মনের মধ্যে। কিন্তু শওকম আলী বললেন, রাব্বির এই সমস্যা একেবারেই হচ্ছে না, ‘আমি তো সবসময় বলি, ও ফাইটার ছেলে। ছোটবেলায় খেলবো ওর চেয়ে অনেক বড়দের সাথে। সে সময় শরীরে কত পেস বলের আঘাত লেগেছে। এবার মাথায় লেগেছে বলে একটু সমস্যা। কিন্তু ও একটুও ভয় পায়নি। মজাই করছে সবার সাথে। ও প্যানিক করার ছেলে না। এখন আবার মাঠে নামার জন্য ব্যস্ত।’
তাই হোক। রাব্বির বাবার কথা সত্যি হোক। ধাক্কা যা হজম করার, তা তো করে ফেলেছেন রাব্বি। এবার মাঠে নেমে একটা গর্জন হয়ে যাক। চট্টগ্রাম থেকে মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ুক হুঙ্কার।