ভাল কাজের সম্মাননা কিংবা একটু প্রশংসা কে না পেতে চায় বলুন। বিশ্বের আনাচেকানাচে ক্রিকেট খেলতে থাকা প্রতিটা খেলোয়াড় চায়, তাঁর ভাল পারফর্মেন্সের প্রশংসা হোক, তা ফলাও করে প্রচার হোক সর্বত্র। তাইতো ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের হর্তাকর্তা প্রতি বছর খেলোয়াড়দের এই ইচ্ছে পূরণের দায়িত্ব নিয়েছে ২০০৪ সাল থেকে।
পুরো এক পঞ্জিকা বর্ষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাল করা খেলোয়াড়দের সম্মাননা জানিয়ে আসছে আইসিসি। সেটা ভিন্ন তিন ফরম্যাটে সেরা খেলোয়াড় ও সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের ক্যাটাগরিতে বিভক্ত, সাথে রয়েছে আরো নানা রকমের ক্যাটাগরির বিভাজন। তবে সবচেয়ে আকর্ষনীয় সম্মাননা হচ্ছে, আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার এওয়ার্ড। গেল বছর সেই পুরষ্কার জিতেছিলেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। বছর জুড়ে ভিন্নভিন্ন ফরম্যাটে তাঁর কার্যকরী সব অবদানের জন্যে।
২০০৪ সালের উদ্বোধনী আসরে আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মুকুট পড়েছিলেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটার রাহুল দ্রাবিড়। তারপর থেকে ১৪ জন ভিন্ন খেলোয়াড় জিতে এসেছেন এই সম্মাননা। এবারেও আইসিসি আয়োজিত এই সম্মাননা অনুষ্ঠানের ব্যতয় ঘটছে না। চলুন দেখে নেওয়া যাক কারার রয়েছেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার সম্মাননার দৌড়ে।
- ডেভন কনওয়ে (নিউজিল্যান্ড)
এক বছরের মধ্যেই নিজেকে জাতীয় দলের সব ফরম্যাটেই থিতু করেছেন এই বছরই অভিষিক্ত হওয়া নিউজিল্যান্ডের বা-হাতি ব্যাটার ডেভন কনওয়ে। শুধু যে থিতু হয়েছেন তা নয় বনে গেছেন দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০২১ সালে সবগুলো ফরম্যাটেই রানের দেখা পেয়েছেন তিনি। তাঁর পাশাপাশি তিনি ইনিংস গুলোও ছিলো বেশ কার্যকরী। তিনি বর্ষসেরা পুরষ্কার না পেলেও সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় তালিকার শুরুর দিকেই থাকবেন হয়ত।
এবছর তিনি টেস্ট খেলেছেন মাত্র তিনটি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত এক খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর ব্যাটিং গড় প্রশংসনীয়। তিনি ৬৩.২ গড়ে এ বছর রান করছেন ৩৭৯। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে তাঁর গড় ছিল ৭৬.৫০। এর পাশপাশি এ বছর অনুষ্ঠিত হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। স্বভাবিকভাবেই দলগুলো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বেশি খেলেছে। তাই ডেভন কনওয়ের খেলা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সংখ্যাও বেশি। তিনি ২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রায় ৫০ গড়ে রান করেছেন ৬০২। অন্যদিকে ৭৫ গড়ে তাঁর ওয়ানডে রান সংখ্যা ২২৫, তিনটি ম্যাচ খেলে।
- মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান)
এক বর্ষপঞ্জিকায় একহাজারেরও বেশি টি-টোয়েন্টিতে রান করার রেকর্ডের মালিক পাকিস্তানের উইকেট কিপার ব্যাটার মোহাম্মাদ রিজওয়ান। পুরো পাকিস্তান দল বছর জুড়েই ছিলো দারুণ ছন্দে। অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একেবারে অপ্রতিরোধ্য এক দল ছিল পাকিস্তান। এমন ছন্দের অধিকাংশ কৃতীত্বের দাবিদার মোহাম্মদ রিজওয়ান। ইনিংসের শুরুতে সবসময় রানে ছিলেন তিনি। যার ফলে ইনিংসের শুরুতে ম্যাচের মোমেন্টাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলো পাকিস্তান।
এ বছর রিজওয়ান টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মোট ২৩টি। প্রায় ৭৫ গড়ে তাঁর রান ১১২৩। অন্যদিকে টেস্টে তাঁর গড় ৪৫.৫০ গড়ে নয় ম্যাচে তাঁর রান এসেছে ৪৫৫ রান। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও রিজওয়ান ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। ছয় ম্যাচে ২৮১ রান করে ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকার তৃতীয়স্থানে। আইসিসির মেগা ইভেন্টেও তাঁর গড় ছিল ৭০ এরে ঘরে। সুতরাং তাঁর সামগ্রিক পারফর্মেন্স বিবেচনায় তিনি হতে পারেন আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার, নতুবা টি-টোয়েন্টির সেরা পারফর্মারের সম্মাননা তাঁরই পাবার সম্ভাবনা বেশি।
- দ্বিমুথ করুনারত্নে (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কান টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটার ও অধিনায়ক দ্বিমুথ করুণারত্নে এ বছর ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। গেল বছর কয়েক যাবৎ টেস্ট ক্রিকেটে লঙ্কানদের আস্থার আরেক নাম দ্বিমুথ করুণারত্নে। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে তিনি নিরাশ করেননি দলকে। এ বছর যেন একেবারে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তিনি।
বছর জুড়ে মাত্র সাত টেস্টে তাঁর রানসংখ্যা ৯০২। গড়টা ৬৯.৩৮। বিশ্বের টেস্ট খেলুড়ে দেশের সকল ব্যাটারদের মধ্যে তাঁর গড় সর্বাধিক। তাছাড়া লঙ্কান এই ব্যাটার ২০২১ সালে শতক হাঁকিয়েছেন চারটি যা কিনা তাঁর ক্যারিয়ারের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। তাছাড়া এ বছর তিনটি অর্ধশতকেরও দেখা পেয়েছেন তিনি টেস্টে ক্রিকেটে। অন্ততপক্ষে বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে সম্মাননার জোর দাবি জানাতে পারেন দ্বিমুথ করুণারত্নে।
- জো রুট (ইংল্যান্ড)
জো রুট ২০২১ সালের ছিলেন তাঁর ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে। টেস্টে নিয়মিত রান করে গিয়েছেন ডান-হাতি এই ইংলিশ ব্যাটার। এই বছরই তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ইংলিশ কিংবদন্তি ব্যাটার মাইকেল ভনকে। ইংল্যান্ডের হয়ে এক পঞ্জিকাবর্ষে টেস্টে সর্বাধিক রানের রেকর্ড এখন রুটের দখলে। দলে বিপর্যয় যেমন সামলেছেন ঠিক তেমনি তিনি দলে পক্ষে বড় রানের ভীতও মজবুত করেছেন লাল বলের ক্রিকেটে।
বছর জুড়ে রুট টেস্ট খেলেছেন মোট ১৩টি। প্রায় প্রতিটা ম্যাচে তাঁর ব্যাট হেসেছে, নামের পাশে যুক্ত হয়েছে রান। ২০২১ সালে জো রুটের অর্ধ-শতকের সংখ্যা দুইটি অন্যদিকে শতকের সংখ্যা ঠিক তাঁর তিন গুণ, ছয়টি। ৫৭.৬১ গড়ে তিনি রান করেছেন ১৫৪৪। যা এই বছরে টেস্ট ক্রিকেটেও সর্বাধিক রান সংগ্রহের পরিসংখ্যান। সুতরাং আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার কিংবা টেস্টে বর্ষসেরা ক্রিকেটার যেকোন এওয়ার্ডের বিজয়ীরুপে দেখা যেতে পারে জো রুটকে।
- রবিচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত)
ভারতের সাদা পোষাকের বনেদী ক্রিকেটের অন্যতম ভরসার নাম যেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধিদীপ্ততার মিশেলে তিনি প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করেছেন তাঁর স্পিন ঘূর্ণিতে। বছর জুড়েই তিনি ছিলেন ধারাবাহিক। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডে বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অশ্বিন নিয়েছেন সর্বাধিক উইকেট। সদ্য সমাপ্ত হওয়া নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজেও তিনি আলো ছড়িয়েছেন বলের প্রতিটি ঘূর্ণনে।
এ বছর আর কোন বোলার অশ্বিনের চাইতে বেশি উইকেট শিকার করতে পারনি আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে। মাত্র আটটি টেস্ট খেলে অশ্বিনের উইকেট সংখ্যা ৫২। গড় ১৬.২৩। তাছাড়া আইপিএলে করা ভাল পারফর্মেন্সের ফলস্বরুপ তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের দলে। সেই টুর্নামেন্টেও তিন ম্যাচে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ছয়টি উইকেট। ফরম্যাট যেন কোন বড় বিষয় নয় অশ্বিনের। সব ফরম্যাটেই উইকেট ক্ষুদা তাঁকে আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছে।