ব্যাট হাতে তাঁর ক্যামিও যেকোন ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। আবার বল হাতেও ছিলেন যথেষ্ট কার্যকর। যেকোন অধিনায়কই তাঁর দলে এমন একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার চাইবেন। যখন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে ছিলেন তখন বলা হতো যেকোনো দলেই ফিট থিসারা পেরারা। তবে শেষপর্যন্ত ফিটনেস ইস্যুতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আর ফিট করছিলেন না শ্রীলঙ্কান এই অলরাউন্ডার।
শ্রীলঙ্কার হয়ে দুই দুটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার যেই সোনালি প্রজন্ম ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল সেই দলের একজন ছিলেন থিসারা পেরেরা। তখন থেকেই রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার অন্যতম ভরসার নাম হয়ে উঠেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। এরপর ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেরও ফাইনাল খেলেছেন। এবার অবশ্য শিরোপা নিয়েই বাড়ি ফিরেছিলেন।
ফলে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় চরিত্র থিসারা পেরেরা। তবে একটা সময় মাঠের সেই পারফর্মেন্স কমতে থাকে। পেরেরাকে নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগের জায়গা ছিল তাঁর ফিটনেস। ফিটনেস নিয়ে নাকি একেবারেই মনোযোগ দিতেন না। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আস্তে আস্তে নিজের ধাঁর হারাতে থাকেন এই ক্রিকেটার।
গতবছরব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণাও দিয়েছেন। যেনো সবাই যে আঙুলটা তুলেছিল সেটা মেনে নিয়েছেন পেরেরা। তবে পেরেরা কী আসলেই মেনে নিয়েছিলেন। হয়তো নিজের আনফিট শরীর নিয়েই আরেকবার প্রমাণ করার শপথ নিয়েছিলেন। হয়তো নিজেকেই নিজে একটা বার্তা দিতে চেয়েছিলেন।
ক্রিকেট দুনিয়া পেরেরাকে ফেলে দিয়েছিল বুড়িয়ে যাওয়াদের কাতারে। সেই বুড়িয়ে যাওয়া পেরেরাই বিপিএল খেলতে এসে দেখালেন এখনো দলের সবচেয়ে কার্যকর ক্রিকেটার হতে পারেন তিনি। মিনিস্টার ঢাকার বিরুদ্ধে নিজের প্রথম ম্যাচেই দেখালেন ব্যাট-বলের সেই ম্যাজিক। সেই পুরনো থিসারে পেরেরা।
মিরপুরের উইকেটে বেশ বড় সংগ্রহই দাঁড় করিয়েছিল মিনিস্টার ঢাকা। আগে ব্যাট করে তাঁদের সংগ্রহ ছিল ১৮৩ রান। অন্য বোলাররা যখন তামিম, শেহজাদদের সামনে দাঁড়াতে পারছিল না তখন ইকোনমক্যাল বোলিং করে ঢাকার লাগাম টেনে ধরেছিলেন। চার ওভার বল করে মাত্র ২৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন এক উইকেট।
তবে পেরেরা তাঁর বড় জাদুটা দেখিয়েছেন ব্যাট হাতে। এত বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুটা অবশ্য করে দিয়েছিলেন রনি তালুকদার। তবে শেষ দিকে আবার পথ হারিয়ে ফেলে খুলনা টাইগার্স। সেই সময় আবার নিজের ক্যারিশমা দেখান থিসারা পেরেরা। মাত্র ১৮ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলে দলকে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন।
বিপিএলের প্রথম ম্যাচেই পেরেরা দেখালেন ব্যাট-বলে তাঁর পুরনো সেই জাদু। সবাই যখন তাঁকে বুড়িয়ে যাওয়াদের কাতারে ফেলে দিয়েছিল তখন আরেকবার পেরেরা প্রমান করলেন তিনি এখনো যেকোন ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারেন। এখনো দলের সবচেয়ে কার্যকর ক্রিকেটার হবার সবরকম রসদ তাঁর মধ্যে আছে।