মিরপুরে ইমরুল লিটন-শো!

একটি জুঁটি, শুরু থেকে খানিক মন্থর। সবাই হয়ত ভেবেছিলেন ম্যাচটা বুঝি হারাবে সেই জুঁটি। কিন্তু না সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দলকে একেবারে জয়ের বন্দরে নিয়ে যায় লিটল-ইমরুল ওপেনিং জুঁটি। মাঝে লিটন দাসের বিদায়েও চীনের প্রাচীরের মতো অনড় রইলেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। দলের জয় না নিয়ে মাঠ না ছাড়ার ব্রত নিয়ে নামা ইমরুলের দৃঢ়তা এবং বিচক্ষণ ব্যাটিং প্রদর্শনই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে এনে দিয়েছে এক সুবিশাল জয়।

ঢাকার ফিরতি পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। তিনি যে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছেন তাঁর প্রমাণ দিয়েছেন তাঁরই সতীর্থ নাহিদুল ইসলাম। ম্যাচের তিন বলের মাথায় নাহিদুল ফেরান চ্যাডউইক ওয়ালটনকে। ক্যাচ ধরেন অধিনায়ক ইমরুল। রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারিয়ে ফেলা চট্টগ্রাম ইনিংসের শুরুতেই পড়ে যায় বিপাকে।

প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নেন চট্টগ্রামের আরেক বিদেশি খেলোয়াড় উইল জ্যাকস। তাঁকে সঙ্গ দেন আফিফ হোসেন। ভাল একটা শুরু পেলেও আফিফ নিজের ইনিংসটা খুব বেশি লম্বা করতেন পারেননি। ২১ বলে ২৭ করে আউট হয়ে যান। কিন্তু উইল জ্যাকস আগের ম্যাচের ব্যর্থতার কাটিয়ে ওঠার দৃঢে প্রত্যয় নিজে যেন আজ মাঠে নেমেছিলেন। ব্যক্তিগত ইনিংসের শুরু থেকেই মারকাটারি ব্যাটিং করতে থাকেন জ্যাকস। তুলে নেন এবারের বিপিএলের নিজের দ্বিতীয় ফিফটি।

১২ ওভারে ১০০ রান টপকে যায় চট্টগ্রাম, মাত্র দুই উইকেট খরচায়। কুমিল্লাকে বড় লক্ষ্য সেট করে দিতে যেন বদ্ধপরিকর চট্টগ্রামের ব্যাটাররা। কিন্তু মাঝে বাঁধ সাধে শীতের রাতের বেরসিক বৃষ্টি। বৃষ্টি শেষ করে চট্টগ্রামের দুই ব্যাটার উইল জ্যাকস ও শামিম হোসেন পাটোয়ারী দ্রুতই ফিরে যান প্যাভিলনে। দুইজনকেই ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। চট্টগ্রামের অধিনায়ক নাঈম ইসলামও বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। বৃষ্টির পর চট্টগ্রামের ব্যাটিং অর্ডার একাই দুমড়ে মুচড়ে ফেলেন মুস্তাফিজুর রহমান। একাই নিয়ে নেন পাঁচটি উইকেট। নাঈমের পর নিজের খাতায় যুক্ত করেন বেনি হাওয়েল ও মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট।

বৃষ্টি আইনে ১৮ ওভারের খেলা শেষে চ্যালেঞ্জার্স তাঁদের স্কোর বোর্ডের যুক্ত করে ১৩৮ রান। বিনিময়ে তাঁদের খরচ হয় আটটি উইকেট। বৃষ্টির বাগড়া ও মুস্তাফিজের তাণ্ডবে বড় রান করার আশা ফিঁকে হয়ে যায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। বৃষ্টি আইনে কুমিল্লার টার্গেট গিয়ে দাঁড়ায় ১৪৪ রানে। এই রান তাড়া করতে নেমে দেখে শুনে খেলতে থাকেন কুমিল্লার দুই ওপেনার লিটন দাস ও ইমরুল কায়েস।

ধীর গতিতে শুরু করলেও কুমিল্লার দুই ওপেনিং ব্যাটার দলকে ক্রমশ জয়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। ধীরে তাঁরা দু’জন চট্টগ্রামের বোলারদের সমীহ করেই খেলতে থাকেন। দশ ওভার শেষে তাঁরা দুইজনই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। একেরপর এক চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দিতে থাকেন ইমরুল এবং লিটন। ইমরুল প্রথম বারের মতো এবারের বিপিএলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। অন্যদিকে লিটনের ব্যাটও হেসেছে আজ। তিনিও তুলে নেন ফিফটি।

শেষমেশ এই দুইজনের অসাধারণ ব্যাটিং প্রদর্শনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিশাল বড় এক জয়ের দিকে এগোতে থাকে। তবে ১৭তম ওভারে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর উইকেট হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন। ৩৭ বলে ৫৭ রান করা লিটনের উইকেট পতনে কুমিল্লার জয়ে কোন প্রভাব পড়েনি। ৮১ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। নয় উইকেটের বড় জয়ের সুবাদে  চার জয় নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করে নিলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অন্যদিকে টেবিলের পঞ্চম স্থানে চলে যাওয়া চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের প্লে-অফ খেলা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সংশয়। 

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৩৮/৮ (১৮ ওভার),  উইল জ্যাকস ৫৭ (৩৭), আফিফ হোসেন ২৭ (২১); মুস্তাফিজুর রহমান ৪-০-২৭-৫।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ইমরুল কায়েস ৮১ (৬২)*, লিটন কুমার ৫৩ (৩৭); মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ১.৩-০-২১-১।

ম্যাচ সেরা: মুস্তাফিজুর রহমান (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link