লিটন দাসের ব্যাটিং অদ্ভুত সুন্দর; তবে তিনি ধারাবাহিক নন- বছর ছয়েকের লম্বা ক্যারিয়ারে এটাই ছিল সারমর্ম। লিটনের তীব্র সমালোচকও কখনো বলতে পারেনি যে তাঁর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হননি। আবার লিটনের কোন অনুরাগীও তাঁর ধারাবাহিকতাও নিয়ে গর্ব করতে পারেনি কখনো। তবে লিটন এই তত্ত্বটাকে গত একবছরে যেন ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। নিজের ক্যারিয়ারটা লিখছেন নতুন ফ্রন্টে।
গত কয়েকবছরে বেশ কিছু ক্রিকেটারকে নিয়েই বাংলাদেশ বড় স্বপ্ন দেখেছে। তাঁদের কেউ হতাশায় ডুবিয়েছে, কেউ আবার নিজেদের প্রমাণও করেছেন টুকটাক। তবে বাকিদের সাথে লিটন দাসকে এক ছাঁচে ফেলে দিলে একটু ভুল হবে। লিটন যখন টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হলেন তখন নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক তারকার জন্ম হচ্ছে।
সেই সময় বাংলাদেশের রঙিন পোশাকের অধিনায়ক সেই ফতুল্লায় ছুটে গিয়েছিলেন লিটনের ব্যাটিং দেখবেন বলে। এরপর বাংলাদেশের মাশরাফি থেকে শুরু করে, ইয়ান বিশপ, হার্শা ভোগলেরা পর্যন্ত লিটনের ব্যাটিং দেখে অবাক বনে গিয়েছেন। কখনো লিটনকে তুলনা করা হয়েছে একটা ফুলের মত, কখনো আবার তাঁর ব্যাটিং হয়ে উঠেছে মোনালিসার মত কালজয়ী কোন চিত্রকর্ম।
লিটন তো বাংলার ক্রিকেটে এক ফুলই। তবে বাংলাদেশের ভক্তদের জন্য তিনি দেরিতে ফোঁটা এক ফুল। একেবারে পুরো ডাল পালা গুলো শুকিয়ে গিয়েছিল। শুকনো পাতা গুলো ঝড়ে বিবর্ন এক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন। গাছটাকে যে চেনে না, সে বলে দিত এ গাছ তো আর বেশিদিন বাচবে না। তবে লিটন বদলে গেলেন ফাল্গুনে। বসন্তের মত রঙিন হয়ে ফিরলেন।
শুরু করলেন টেস্ট দিয়ে। ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা। চট্টগ্রাম, মিরপুর, মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে, ক্রাইস্টচার্চ মাতলো লিটন বন্দনায়। টি-টোয়েন্টি থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপর বিপিএলেও লিটন বসন্ত নিয়ে এলেন, রঙিন হয়ে উঠলেন। লম্বা সময় পর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরেই বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচে ৪৭ রানের ইনিংস। এরপর চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৫৩ রানে।
এরপর আজ যেন লিটন নিজেকে আরেকটু ভাঙলেন। লিটন নামের ফুলটা একটা পুরোপুরি ফুটলো। মিরপুরের মরা পিচকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন। লিটন যে বসন্ত পার করছেন। আর কিছুতে যে কিছু যায় আসে না। ১৭ বলে খেললেন ৪১ রানের ইনিংস। খুলনার বোলারদের সীমানার ওপাড়ে আঁচড়ে ফেলেছেন তিনবার। মিরপুরের ঘাস ছুঁয়ে বল সীমানার বাইরে গেছে আরো চারবার। সবমিলিয়ে ২৪১.১৭ স্ট্রাইকরেটে খেলা বিধ্বংসী ইনিংস।
তবে আক্ষেপও রেখে গিয়েছেন একটা। লিটন টেস্টে এখন নিয়মিত বড় ইনিংস খেলছেন। শেষ দুই সিরিজেই দুটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। তবে টি-টোয়েন্টিতে সেটা হচ্ছেনা। টি-টোয়েন্টিতে সবসময় সেটা সম্ভবও না। তবে যেদিন সুযোগটা আসে সেদিন সবকিছু তছনছ করে যেতে হয়।
লিটন সেই সুযোগটা হেলায় হারালেন। পাওয়ার প্লেটা দারুণ কাটালো কুমিল্লা। লিটনও ঝড়ো শুরু করেছেন। লিটন যখন আউট হয়ে ফিরলেন তখন মাত্র ৬ ওভারের খেলা শেষ হলো। কিন্তু তখনো পাওয়ার প্লের মেজাজ থেকে বের হতে পারলেন না। আগের ওভারেও একটা জীবন পেয়েছিলেন। সেটাকেও কাজে লাগিয়ে ইনিংসটা স্মরণিয় করা গেল না।
লিটন জোর করে শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন। অথচ নিজের হাতের শট গুলো দিয়েই লিটন মোনালিসা আঁকতে জানেন। সে যাইহোক, এই আক্ষেপও হয়তো কাটবে দ্রুতই। লিটন যে মাত্র ফাল্গুনে প্রবেশ করলেন মাত্র। লিটনের এই ফাল্গুন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হোক। প্রতি ফাল্গুনে লিটনের ব্যাটের ফোয়ারাও দ্বিগুন হোক।