আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে। তিন উইকেট হারিয়ে তখন বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। চাপটা প্রতিপক্ষকে ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু, মুজিব উর রহমানের যে বলটাতে কাটা করতে গিয়ে ইনসাইড এজ থেকে বোল্ড হয়ে ফিরলেন, সেটা কি আদৌ ওই শটের বল ছিল?
এই মুজিব সর্বশেষ বিপিএলে খেলেছেন ফরচুন বরিশালে, যে দলের অধিনায়ক ছিলেন সাকিব নিজেই।
এবার তামিম ইকবালের প্রসঙ্গে আসি। দেশের সেরা ওপেনার খ্যাত তামিম যে ডেলিভারিটায় আউট হলেন, সেটা একদম সোজা হয়ে আসছিল। তামিম সামনের পায়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে বলের লাইনেই যেতে পারেননি, ফলে বল আঘাত হানে প্যাডে। বোলার ফজল হক ফারুকী, বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে খেলেছেন মাত্র একটা ওয়ানডে। এর চেয়েও বড় কথা হল – ফারুকী আর তামিম দু’জনই সর্বশেষ বিপিএলে খেলেছেন মিনিস্টার।
দেশের সবচেয়ে বড় দুই ব্যাটসম্যান নিজেদের সতীর্থদের ডেলিভারিই পড়তে ভুল করলেন। অথচ, নিশ্চয়ই নেটে বহুবার তাঁদের দেখা হয়েছে। কিন্তু, লাভ হয় নি। ফলাফল বাংলাদেশ দলকে বিরাট বিপদে ফেলে দু’জন ফিরে গেছেন সাজঘরে।
তামিম ইকবালের মত অনেকটা একই রীতিতেই আউট হয়েছেন মুশফিকুর রহিমও। সোজা বলটার লাইনে যেতে পারেননি সময়মতো। তাঁর ব্যাট হিট করে প্যাডে এবং ততক্ষণে বল প্যাডে লেগে যায়। ফলাফল এলবিডব্লিউ। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আউট হওয়ার ধরণও ঠিক সুখকর নয়।
আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ দলকে জিতিয়ে দিয়ে গেছেন, সাথে সাথে একটা বার্তাও দিয়ে গেছেন যে – দেখে শুনে খেললে এই আফগান বোলিং আক্রমণকে হেসেখেলেই সামলানো সম্ভব।
কিন্তু, বাংলাদেশ দলের এত দিনের অভিজ্ঞ সিনিয়র ক্রিকেটাররা সেটা পারেননি। ফলে, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বেশ ভাল ভাবেই উচ্চারিত হল সিনিয়রদের নাম। মুশফিক-তামিম নেটে লম্বা সময় কাটালেন। ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্ব নিয়ে আসা জেমি সিডন্সকেও সাথে পেলেন। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনাও চললো।
অনেক দিন ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আলোচিত সমালোচনার বিষয় হল তারুণ্যের দায়িত্ব নিতে পারার ব্যর্থতা। এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শুরুটায় চললো উল্টো হাওয়া। খুব বেশি আলোচনা না হলেও, এটা চোখ বন্ধ করেই বলা যায় যে, সিনিয়ররা বাজে ভাবেই ব্যর্থ হয়েছেন।
পঞ্চ পাণ্ডবের চারজন একাদশেই ছিলেন – মানে সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চারজনই ব্যর্থ ব্যাটিংয়ে। আউট হওয়ার ধরণ ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সাকিব বোলিংয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিলেও শুরুতে তাঁর বোলিংয়ে হাত খুলেই রান করেছেন আফগানরা। ফলে, তিনিও পুরোপুরি সমালোচনার বাইরে নন।
সব সিনিয়রকে এক যোগে কাঠগড়ায় তোলার এই ধারাটা বাংলাদেশে নতুন। সেটাই হল এবার। পঞ্চপাণ্ডবের আরেকজন মাশরাফি বিন মুর্তজা না থেকেও আসলেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে নিয়ে প্রশ্নও করা হল রাসেল ডোমিঙ্গোকে। সেটা তিনি এড়িয়ে গেলেন, বললেন মাশরাফিকে নিয়ে ভাবার সময় নাই। সে সময় না হয় সত্যিই নেই, কিন্তু দলে থাকা সিনিয়রদের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে তো নিশ্চয়ই ভাবতে হচ্ছে। এড়িয়ে এড়িয়ে আর কতকাল। ভাবনাটা এবার ফলপ্রসু হোক। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার তো এখনই সময়!