ক্রিকেটের টানে বাড়ি ফেরা

‘নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা’ – বাংলাদেশে দুই ঈদ মৌসুমে এর বাস্তব চিত্র যেন ফুঁটে ওঠে। একজন বাড়ি ফিরছেন, নাড়ির নয়, ক্রিকেটের টানে। বলছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খাজার কথা। জন্মস্থানে আবার ফিরছেন তিনি। ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল তারকা হয়ে। তিনি অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের সাথে পৌঁছে গেছেন পাকিস্তানে।

উসমান খাজা জন্মেছিলেন পাকিস্তানের ইসলামাবাদে। সময়টা ১৯৮৬। কেটে গেছে প্রায় ৩৬টা বছর। তাঁর জন্মের বছর চারেক বাদেই তাঁর পরিবার পাড়ি জমিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াতে। সেখানেই থিতু হন। অস্ট্রেলিয়াতেই নিজের জীবনের অধিকাংশ সময় কাটানো খাজার কাছে পাকিস্তানে খেলতে পারাটা বিশেষ এক মুহূর্ত।

খাজা দূর্দান্ত এক সময় পার করছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম মুসলিম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টের ‘ব্যাগি গ্রিন’ ক্যাপটি পেয়েছিলেন উসমান খাজা। তবে তিনি ছিলেন অবহেলিত। সুযোগ খুব একটা তাঁর কাছে ধরা দেয় না। গেলো বছর অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পেয়েছিলেন এক সুযোগ। আর হাত ছাড়া করেননি খাজা। চট করে লুফে নেন। আর করেন পরপর দুই ইনিংসে দুইটি শতক।

প্রমাণ করেন তাঁকে দরকার অজি টেস্ট দলে। সেই দূর্দান্ত পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতায় অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের সাথে পূর্ণাঙ্গ এক সিরিজ খেলতে এখন পাকিস্তনে অবস্থান করছেন খাজা। ‘সত্যি বলতে পাকিস্তানে খেলতে পারাটা আমার জন্যে বিশেষ এক অনুভূতি।’ খাজা বলে শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া টেস্ট ম্যাচের আগে।

পূর্ণাঙ্গ এক সিরিজ খেলতে দুই যুগ পর পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখেছে অজিরা। রাওয়ালপিন্ডিতে শুরু হওয়া টেস্ট ম্যাচসহ তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া। তাছাড়া সমান সংখ্যক ওয়ানডে ম্যাচ ও একটিমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচও রয়েছে এবারের সফরে। ‘রাওয়ালপিন্ডিতে খেলার জন্যে আমি মুখিয়ে আছি। আমি ছোটবেলায় পুরাতন স্টেডিয়ামে গিয়ে একদফা খেলেছিলাম।’

২০১০ সালে শেষ পাকিস্তানে এসেছিলেন খাজা। তবে সেবার নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষ হয়ে। এবার প্রতিপক্ষ হয় ক্রিকেট ময়দানে নামবেন তিনি। এ নিয়ে খাজা বলেন, ‘আমি সবসময়ই পাকিস্তানে খেলতে চেয়েছি। জন্মভূমির প্রতি বাকি সবার মতোই আমারও অনুভূতি কাজ করে। তবে একবার খেলার ভেতর ঢুকে গেলে সেসব অনুভূতি আর কাজ করে না।’

পাকিস্তান থেকে উন্নত জীবনযাপনের প্রত্যাশায় হয়ত তাঁর বাবা-মা একদিন পাড়ি জমিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াতে। তবে তাঁরা এখনও পাকিস্তানের প্রতি তাঁদের থাকা টানটা একেবারে ঝেড়ে ফেলে দিতে পারেননি। এমন কি ক্রিকেটে তাঁরা এখনও পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে যান, ছেলে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও। এ নিয়ে খাজা বলেন, ‘ক্রিকেটে আমার বাবা-মা পাকিস্তানকে সমর্থন করে, আর আমি অস্ট্রেলিয়াকে। তবে আমি পাকিস্তানের সংস্কৃতি মেনে চলার চেষ্টা করি এবং আমার মায়ের সাথে উর্দুতে কথা বলি।’

পাকিস্তানে জন্ম, সেখানকার সংস্কৃতির সাথে জন্ম থেকেই একটা সখ্যতা রয়েছে উসমান খাজার। তবুও তিনি দাবি করেন সর্বদা তিনি চেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেটটা খেলতে। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় অস্ট্রেলিয়ার হয়েই খেলতে চেয়েছি। যেহেতু আমি সেখানেই আমার জীবনটা কাটিয়েছি। এটা আমার সৌভাগ্য যে আমি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২০১১ সালে খেলার সুযোগটা পেয়েছিলাম।’

জীবনের পানে পিছে ফেলে যাওয়া দেশটিতে ছেলে খেলবেন সেই জন্মভূমির বিপক্ষে। বাবা-মা আসা করেছিলেন মাঠে বসেই খেলা দেখবেন ছেলের। তা আর হচ্ছেনা এবার। নানা জটিলতা তাঁরা আসতে পারেননি পাকিস্তানে। ‘আশা করি তাঁরা তাঁদের ড্রয়িং রুমে বসে আরাম করে খেলা দেখতে পারবেন।’ এমনটাই অভিমত প্রকাশ করেছেন উসমান খাজা।

হয়ত দূর দেশে বসেই তাঁর বাবা-মা দেখবেন তাঁর ছেলে তাঁর জন্মভূমির বিপক্ষে সেখানেই খেলবেন। হয়ত তিনি অনবদ্য কিছু করেও বসবেন। স্মৃতিতে রোমন্থন করার মতোই হয়ত কিছু একটা করতে মুখিয়ে থাকবেন উসমান খাজা। সময়ের অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link