বিরাট কোহলির সাথে অনিল কুম্বলের সম্পর্কের ফাটলটা লম্বা সময় ধরেই। বিরাটের সাথে দ্বন্দ্বের কারণেই প্রধান কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন কুম্বলে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। এবার সেই ব্যাপার খোলাসা করলেন সাবেক কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল (সিএজি) বিনোদ রাই। নিজের প্রকাশিত বইতে বিরাট ও কুম্বলের দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি খোলাসা করেছেন।
কোচ ও অধিনায়কের সম্পর্কে চির ধরায় অবসর নিয়েছিলেন কুম্বলে। সেই ঘটনা সম্পর্কে নিজের বই ‘নট জাস্ট আ নাইটওয়াচম্যান’ – এ লিখেছেন বিনোদ রাই। ২০১৭ সালে তিন বছরের জন্য বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) প্রশাসনিক পদের দায়িত্ব পান বিনোদ। ওই সময়েই বিরাট ও কুম্বলের দ্বন্দ্ব নিয়ে সমালোচনা ব্যাপক আকার ধারণ করে।
বিনোদ রাই তাঁর বইতে লিখেন, ‘অধিনায়ক আর টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলে বুঝতে পারি কুম্বলে বেশ শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিল। আর তাতে বাকি সদস্যরা খুশি ছিল না। আমি এই ব্যাপারে বিরাট কোহলির সাথেও কথা বলেছি। বিরাট আমাকে বলেছিল কুম্বলে যেভাবে কাজ করতো এতে তরুণ ক্রিকেটাররা অনেক ভয় পেত তাঁকে।’
বিরাটের পর কুম্বলের সাথেও এ ব্যাপারে আলোচনায় বসেন বিনোদ। তিনি লিখেন, ‘লন্ডন থেকে ফেরার পর কুম্বলের সাথেও কথা বলেছি। যেভাবে পুরো ঘটনা বলা হয়েছিল সে বেশ হতাশ হয়েছে। কুম্বলের মতে তাঁর সাথে ভাল ব্যবহার করা হয়নি। অধিনায়ক ও দলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত হয়নি। কুম্বলের মতে একটা দলকে পেশাদার ও শৃঙ্খলাপরায়ণ হিসেবে গড়াই একজন কোচের কাজ। সিনিয়র হিসেবে খেলোয়াড়দের উচিত ছিল তাঁকে সম্মান করা।’
ওই বইতে আরও লিখা ছিল সৌরভ গাঙ্গুলি, শচীন টেন্ডুলকার ও ভিভিএস লক্ষ্মণদের নিয়ে গড়া বিসিসিআই’র পরামর্শক কমিটি (সিএসি) ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময় ইংল্যান্ডে পরবর্তী প্রধান কোচ নির্বাচনের আগে বিরাট ও কুম্বলের সাথে আলোচনায় বসেন। এছাড়া বিসিসিআই’র তৎকালীন প্রধান নির্বাহী রাহুল জোহরি এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব অমিতাভ চৌধুরীও কোচ এবং অধিনায়কের সাথে আলাদা আলাদা সাক্ষাৎ করেন।
রাই লিখেন, ‘তাঁরা ভেবেছিল আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করা সম্ভব। তাঁরা দুইজনের সাথে আলাদা আলাদা দেখা করেছে। এমনকি তিনদিন আলোচনার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয় কুম্বলেকে পুনরায় প্রধান কোচ হিসেবে নির্বাচনের।’
কিন্তু এরপরই কুম্বলে নিজ থেকেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। ব্যাপারটা ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই। তাঁর পদত্যাগপত্রে কুম্বলে লেখেন, ‘আমি বিসিসিআইকে জানিয়েছি আমার কাজ করার ধরনে অধিনায়কের দ্বিমত আছে। একই সাথে প্রধান কোচ হিসেবেও আমাকে তারা মেনে নিবে না। আমি বেশ অবাক হয়েছি কারণ অধিনায়ক ও কোচের প্রতি আমার সবসময়ই সম্মান ছিল।’
এরপর ভারতের প্রধান কোচ হয়ে আসেন রবি শাস্ত্রী। তবে প্রধান কোচ হিসেবে সবার পছন্দের তালিকায় শুরুর দিকে ছিলেন না তিনি! এমনকি কোচ হিসেবে আবেদনের সময়সীমাও একদম অন্তিম মূহুর্তে বাড়ানো হয়। রাইয়ের মতে, ‘কুম্বলের এমন বিদায়ে অনেকেই তখন আর কোচের জন্য আবেদনই করেনি।’
ছেলেদের সাথে সাথে মেয়েদের দলেও কোচ নিয়ে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্বের। ভারতের নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মিতালি রাজও একবার প্রধান কোচ রমেশ পাওয়ারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। ফর্মে থাকার পরেও তাঁকে বাদ দেওয়ায় এমন অভিযোগ করেন মিতালি। অবশ্য রমেশ পরবর্তীতে অভিযোগ অস্বীকার করে লিখিত দেন যে, ‘তাঁর খারাপ স্ট্রাইক রেটের কারণেই টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’