রাব্বির কী চেহারা খারাপ!

গতবছর পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন সকাল। বাংলাদেশকে তখন বিশাল একটা পথ পাড়ি দিতে হবে। ম্যাচ বাঁচাতে হলে অন্তত সেদিন সারাদিন বাইশ গজে আঁকড়ে থাকা চাই। অথচ মাত্র ২৫ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ তখন যেন হারটাকে মাথা পেতেই নিয়েছে। তবে সেই ম্যাচেই অভিষিক্ত একজন হঠাতই যেন বিদ্রোহ করে উঠলেন। তাঁর ব্যাট যেন বলতে চাইছিল এভাবে তো হারতে শিখিনি।

ব্যাট হাতে সেদিন একমাত্র প্রতিরোধটা সেদিন করতে নিয়েছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। চট্টগ্রামের ঘরের ছেলে, ঘরের মাঠেই অভিষেকটা হয়েছিল। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই এমন কঠিন পরীক্ষার সামনে রাব্বি। তবে রাব্বির সাথে পরীক্ষা শব্দটার বন্ধুত্ব অনেকদিন ধরেই। একেবারে ছোটবেলা থেকেই নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ রাব্বি এই জায়গাটায় এসে পৌছেছন।

ইয়াসির আলী রাব্বির বাবা যেমন বলেছিলেন,’ ছেলেটা কোনকিছুই সহজে পায়না। ওকে অন্য সবার থেকে একটু বেশি পরীক্ষা দিতে হয়। তবে রাব্বি হারতে শিখেনি। ও জীবনটা বুঝে ফেলেছিল, লড়াই করতে শিখে গিয়েছিল।‘ রাব্বির লড়াই করেছিলেন সেদিন চট্টগ্রামেও। রাব্বি লড়াই করছেন এখনো।

ছয় নাম্বারে ব্যাট করতে নামা রাব্বির ব্যাটের দিকেই সেদিন তাকিয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশ। নিজের অভিষেক ম্যাচেই কোটি ক্রিকেট প্রেমির ভরসার নাম হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেদিন রাব্বি যেই ৭২ টা বল ব্যাটিং করেছিলেন সেটায় পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যাটিং করেছেন। মনে হচ্ছিল কতকাল ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন।

৩৬ রান নিয়ে ব্যাটিং করছিলেন তখন। তাঁর ব্যাটিং করার ধরণ কিংবা নিয়ন্ত্রণ দেখে মনে হচ্ছিল খুব সহজে থামছেন না তিনি। তবে ওইযে বললাম, রাব্বি সহজে কিছু পায় না। হঠাতই একটা বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেলেন। সাথে সাথে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। ফলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকা রাব্বিকে ৩৬ রানেই থেমে থাকতে হলো। এরপর খুব স্বাভাবিক ভাবেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ।

তবে সেই ম্যাচে এই ৩৬ রানের ইনিংসটাই হাইলাইট হয়ে রয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটের চতুর্থ দিনে এত নিয়ন্ত্রিত ইনিংস একজন অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে আসাটা মোটামুটি অবিশ্বাস্য ব্যাপারই। সেই ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান আবিদ আলী সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে সবার চোখ আঁটকে গিয়েছিল রাব্বির ব্যাটে।

বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান বলে বাড়তি ভালো লাগা কাজ করছে বলে মনে একটা সন্দেহ হচ্ছিল। তাই সেই সন্দেহ দূর করতে ইংল্যান্ড থেকে ম্যাচটা কাভার করতে এক সাংবাদিকের সাথে কথা বললাম। ভদ্রলোক বললেন,’ দলের এমন বিপর্যয়ে, টেস্টের শেষ দিক এতটা চাপ নিয়ে ছেলেটা যেভাবে ব্যাটিং করছিল, অসাধারণ। তাও আবার নাকি ছেলেটার মাত্র অভিষেক হলো। এই ম্যাচে সবচেয়ে উপভোগ্য ছিল রাব্বির ব্যাটিং।‘

তবে অবাক করা ঘটনা ঘটলো। মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে। সেই টেস্টে সাকিব ফিরবেন আর সেজন্য যার নামটা কাটা গেল তিনি ইয়াসির আলী রাব্বি। হ্যাঁ, অভিষেক টেস্টে এমন একটা ইনিংস খেলার পরেও বাদ পড়ে গেলেন তিনি। আবারো রাব্বির বাবার কথা গুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল। ছেলেটা কোনকিছুই সহজে যায় না।

এরপর আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে ৯৫ বলে ৫৫ রানের ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটে এই ইনিংস গুলোর পরেও তাঁকে কখনো টানা খেলানোর নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। কেননা রাব্বি জানতেন সাকিব ফিরলেই তাঁকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে। তবুও রাব্বি লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছেন।

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি এসব অনেক সাফল্যই এসেছে। রাব্বিকে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত ভাবা হচ্ছে। যেমন এবারো গত পরশুদিন অবধি একাদশে রাব্বিরই খেলার কথা ছিল। তবে হঠাত করেই সাকিব টেস্ট দলে যোগ দেয়ার বদলে গেল দৃশ্যপট।

সাকিব ফিট থাকলে নিঃসন্দেহে তিনি একাদশে থাকবেন। যেকোন ফরম্যাটেই তিনি বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার তা নিয়ে দ্বিধা নেই। তবে সাকিবের এমন যাওয়া-আসায় রাব্বিকে নিয়ে কোন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা যাচ্ছেনা। যেমন আজও একাদশ থেকে তাঁর নামটাই কাটা পড়লো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেও ছেলেটা সহজে কিছু পেল না। তবে রাব্বি লড়াই চালিয়ে যাবে নিশ্চয়ই।

 

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link