কাকতালীয় মাইলফলক

২০২২ সালের ২৪ জুলাই, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সাদা পোশাকের এই ম্যাচে স্বাগতিকদের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। আর এটিই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট ম্যাচ। এই উপলক্ষে একটি স্মারক ক্যাপ দেয়া হয়েছিল সাবেক লঙ্কান অধিনায়ককে।

ঠিক একই দিনে সুদূর ত্রিনিদাদে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ান একাদশের নিয়মিত মুখ সাই হোপ এদিনও মাঠে নেমেছিলেন। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের মত শাই হোপও এই ম্যাচ খেলার মধ্য দিয়ে গড়েছেন শততম ম্যাচ খেলার কীর্তি। তবে তিনি মূলত ওয়ানডে ফরম্যাটে এই রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। 

নিজের মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচে ব্যক্তিগত অর্জনের দিক থেকেও সফল শাই হোপ। শততম ওয়ানডে ম্যাচে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের তেরোতম শতক। তবে রান ফোয়ারার এই ম্যাচে তার ৮৫ স্ট্রাইক রেটের তিন অঙ্কের ইনিংস দলের জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। অক্ষর প্যাটেলের বিধ্বংসী ৬৪ রানে ভারত ম্যাচ জিতে নিয়েছিল শেষ ওভারে। 

এর আগে অবশ্য নিজের পঞ্চাশতম ওয়ানডে ম্যাচেও আয়ারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন উইন্ডিজ ওপেনার। 

অন্যদিকে চলমান পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ব্যাট হাতে ভাল শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। ১০৬ বলে ৪২ রান করে নোমান আলীর বলে আউট হয়েছেন তিনি। অবশ্য ভাল কিছু করার সুযোগ শেষে হয়ে যায় নি, দ্বিতীয় ইনিংসে হয়তো দুর্দান্ত কিছু করে এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রাঙিয়ে রাখবেন নিজের শততম টেস্ট ম্যাচ। 

তবে একই তারিখে দুইজন খেলোয়াড়ের শততম ওয়ানডে এবং শততম টেস্ট ম্যাচ খেলার কীর্তি এবারই প্রথম নয়। ক্রিকেট বিশ্ব এর আগেও দু’বার এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল। যার একটি ২০০০ সালে এবং আরেকটি ২০০৬ সালে। 

২০০০ সালের ২ জানুয়ারি, সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে লাল বলের লড়াইয়ে নেমেছিল স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া। সেই অজি দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন মার্ক ওয়াহ। জাস্টিন ল্যাঙ্গারের ডাবল সেঞ্চুরি আর গ্লেন ম্যাকগ্রার দুই ফাইফারের কল্যানে সেই ম্যাচে ভারতকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছিল ক্যাঙ্গারুরা। 

নিজের শততম টেস্ট ম্যাচে এক ইনিংস ব্যাট করা মার্ক ওয়াহ ৭০ বলে ৩২ রান করেছিলেন। অবশ্য সেট হয়েও পার্ট টাইমার সৌরভ গাঙ্গুলির বলে বোল্ড হয়ে সাঁজঘরে ফিরে যান এই ব্যাটার। 

২০০০ সালের ঠিক একই দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অকল্যান্ডে মাঠে নেমেছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ক্যারিবীয় দলের হয়ে সেদিন খেলেছিলেন বামহাতি অর্থোডক্স বোলার জিম্মি ক্লাইভ অ্যাডামস। আর এটিই ছিল এই ক্রিকেটারের শততম ওয়ানডে ম্যাচ। তবে নিজের এই রেকর্ড গড়ার দিনে ম্লান ছিলেন অ্যাডামস। ব্যাট হাতে গোল্ডেন ডাক পেয়েছিলেন, আর বোলিংয়ে তাঁর উপর ভরসাই করেনি অধিনায়ক। 

ছয় বছর পর ২০০৬ সালে একই ঘটনা ঘটেছিল অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেও। সেই বছরের ৩১শে মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ। সেই ম্যাচে অজি ব্যাটসম্যান জাস্টিন ল্যাঙ্গার তাঁর ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। 

অন্যরকম সেঞ্চুরি গড়ার দিনে অবশ্য ল্যাঙ্গারের মত দুর্ভাগ্য কাউকে ছুঁয়ে যায়নি। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসের প্রথম বলেই রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। সেই টেস্টে আর খেলতেই নামতে পারেননি তিনি। যদিও অজিরা দুই উইকেটে জয় নিয়েই ম্যাচ শেষ করেছিল। 

অন্যদিকে সেই ৩১ মার্চে ইংল্যান্ড মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক ভারতের। কিংবদন্তি ইংলিশ ফাস্ট বোলার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ফরিদাবাদে নিজের একশতম ওয়ানডে ম্যাচ খেলার কীর্তি অর্জন করেন। সফরকারী দলের অধিনায়কও সেদিন ছিলেন ফ্লিনটফ।

ব্যাট হাতে মাত্র পাঁচ রানে ফিরলেও বোলিংয়ে ২৯ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, ৬ বল আর চার উইকেট হাতে রেখেই ফ্লিনটফকে শততম ওয়ানডেতে পরাজয় উপহার দিয়েছিল ভারত। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link