মার্কিনমুল্লুকের এতিহ্যবাহী ক্রিকেট আড্ডা

কারো কারো মনে হতে পারে, ক্রিকেট বিশ্বের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের পরিচয় খুব বেশিদিনের নয়। কথাটা ঠিক কাগজে কলমে ভুলও নয়। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর তালিকা করার সময় তাদের নামটা সহজে ভাবনায় আসে না। কিছুটা নীরবেই অবশ্য এই দেশে ক্রিকেট সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, এবং সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে তারা।

কিন্তু যদি বলা হয়, এই একুশ শতাব্দীতে নয়; যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের প্রচলন ঘটেছে আরো একশ বছর আগেই। অবাক হলেও এটাই সত্যি। বেসবল আমেরিকানদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় খেলা ঠিকই, কিন্তু এরই পাশাপাশি নিউ ইয়র্কে আছে একটি বৃহৎ ক্রিকেট ক্লাব।স্ট্যালেন আইল্যান্ড ক্রিকেট ক্লাব (এসএলসিসি) নামের এই ক্লাবটি সম্প্রতি ১৫০ নট আউট উৎসব পালন করেছে ৷

কারন ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ক্রিকেটের কাল্পনিক বাইশ গজে এখনো অপরাজিত এই ক্লাব। চলতি সপ্তাহে এসআইসিসি একটি ফলক উন্মোচন করবে। এবং ফিলাডেলফিয়া দলের বিরুদ্ধে ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিজেদের এই মাইলফলক ছোঁয়ার কীর্তি উদযাপন করবে।

১৮৭২ সাল, বিশ্বে তখনও ক্রিকেট খেলা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল না। ছিল না ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল। এতকিছুর পরেও একদল ব্রিটিশ আর্মি এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাত ধরে নিউইয়র্কে গড়ে ওঠে এসআইসিসি। এরপর থেকে প্রতি বছর নিয়ম করে এই ক্লাবে ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আর এত লম্বা সময় ধরে এটি টিকে থাকার পেছনে মূল অবদান অভিবাসী সম্প্রদায়ের।

সক্রিয় ক্রিকেট ক্লাবগুলোর মধ্যে এসআইসিসি এখন নিউইয়র্কের সবচেয়ে পুরোনো। অতীতের স্মৃতিবিজড়িত এই ক্লাবের মাঠে খেলেছেন ডন ব্র্যাডম্যান, জিওফ্রে বয়কট, স্যার গ্যারি সোবার্সের মত কিংবদন্তিরা। 

গ্রীষ্মকালে নিউইয়র্ক সিটিতে সপ্তাহে প্রায় ১০০টি ম্যাচ আয়োজিত হয়। আর এটির মূলে রয়েছে এসআইসিসি। ঘরোয়া লিগে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ক্লাবটি বাইরের দলগুলোকে আতিথেয়তা দেয়। আবার কখনো কখনো নিজেরা সফর করে ক্রিকেট খেলতে যায়। 

গত দেড়শ বছরে আমেরিকান ক্রিকেট ক্লাবটির উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছে। বিশ শতাব্দী দুইটি বিশ্বযুদ্ধ আর ক্লাবহাউজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সর্বশেষ করোনা মহামারির সময়েও ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।

এত সব প্রতিকূল মুহূর্ত সামলে আমেরিকার মত দেশে একটি ক্রিকেট ক্লাবের টিকে থাকা নি:সন্দেহে ক্রিকেটভক্তদের জন্য গর্বের। গর্ববোধ করেন ক্লাবের ৯২ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট ক্লেরেন্স মোডেস্টে নিজেও।

১৯৩০ সাল থেকে ক্লাবের স্টেডিয়াম ওয়াকার পার্কে প্রতিটি ম্যাচ খেলার আগে খেলোয়াড়দের ক্যানভাসের পিচ এবং স্ট্যাম্প স্থাপন করতে হয়। এছাড়া অন্যান্য মাঠের তুলনায় এখানে ঘাস বেশ কয়েক ইঞ্চি বড়। তাই ড্রাইভ খেলার চেয়ে লফটেড শট খেললে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। ওয়াকার পার্কে খুব নান্দনিক কভার ড্রাইভ করলেও বল খুব বেশিদূর যাবে না। 

একটি ফুটপাত দিয়ে মূলত ঐতিহাসিক এই মাঠের বাউন্ডারি চিহ্ন দেয়া হয়েছে। ফুটপাতের বড় গাছগুলোতে বল উঠে গিয়ে পড়লে ছয় রান হিসেব করা হয়। আবার বোলিংয়ের সময় কেবল এক প্রান্ত ব্যবহার করা হয়। কেননা মাঠের আশেপাশে থাকা বাড়িওয়ালারা তাদের ভবনে বলের আঘাত নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকেন। 

তবে ৪০ ফুট অর্থাৎ ১২ মিটার উঁচু নেট স্থাপন করে পিচের উভয় প্রান্ত ব্যবহার করার কথা ভাবছেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট মোডেস্টে।

ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোতে জন্মগ্রহণ করা মোডেস্টে যখন এসআইসিসি-তে যোগ দিয়েছিলেন তখন প্রায় বেশিরভাগই ক্লাব সদস্য ছিলেন ব্রিটিশ, অস্ট্রেলিয়ান, কিউই এবং দক্ষিণ আফ্রিকান। অবশ্য বর্তমানে, ভারত ও শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত ক্রিকেটপ্রেমী দেশগুলোর মানুষ বেশি। 

বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসআইসিসিতে ক্রিকেট খেলতে আসেন। এমনকি ষাট বছরের প্রবীণদেরও ব্যাট বল হাতে ছুঁটতে দেখা যায় এখানে। এছাড়া পাঁচ থেকে আঠারো বছর বয়সের শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।  

তারা বিশ্বাস করে এমন প্রোগ্রাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে শুরু হলে স্থানীয় নাগরিকেরা ক্রিকেট খেলায় সাফল্য অর্জন করবে।  

১৮০০ সালের পর থেকে আমেরিকাতে ক্রিকেট জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু বেসবলের আগমন ঘটায় ধীরে ধীরে ক্রিকেটের প্রতি আমেরিকানদের আগ্রহ কমে যায়। তবে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করার পরে দেশে আবার ক্রিকেটপ্রেমীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করে ইউএসএ ক্রিকেট। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link