ডিয়েগো ম্যারাডোনা- বলা হয়ে থাকে তিনি নাকি জীবন সম্ভোগের পুরোটাই উপভোগ করেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন? ম্যারাডোনা সবসময়ই বলতেন, তাঁর ভয় মানুষ তাকে সবসময়ই ভালবাসবে না!
এই লেখাটা যখন লিখছি তার ঘণ্টা দশেক আগে ডিয়েগো মারাডোনা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন নদীর ওপারে চলে গেছেন, আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন।
দিয়েগো ম্যারাডোনাকে তাঁর ৬০ তম জন্মদিনের দিন অসুস্থাবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেই ৩০ অক্টোবরের কিছুদিন আগে ‘ক্লারিন’-কে নিজের জীবনের শেষ সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
সেই সাক্ষাৎকারে ভরাট কণ্ঠেই বলেছিলেন ম্যারাডোনা, ‘জিমনেশিয়া’ র ম্যানেজার হিসেবে ফুটবলে ফিরে মানুষের কি অফুরন্ত ভালবাসা পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু তিনি সংশয়ে ছিলেন, ‘মাঝেমাঝে আমি ভাবি, মানুষ এমনভাবেই আমাকে ভালবাসবে তো!’
তবে তিনি সাক্ষাৎকারের শেষে নিজেই নিজের উত্তর দিয়ে দিয়েছিলেন, ‘নাহ, মানুষ আমাকে ভালবাসবেই! আমি মানুষকে দেখে অবাক হই । এখনও এত বছর পর মানুষ আমাকে ঠিক প্রথম দিনের মতই ভালবাসে। আর্জেন্টিনার ফুটবলে ক্লাব ফুটবলে দায়িত্ব নেওয়ার সময়ই আমার এটা মনে হয়েছে।’
‘সত্যি বলতে, এসব আমার কল্পনারও বাইরে। কারণ জিমনেশিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার আগে আমি লম্বা সময়ের জন্যে ফুটবলের বাইরে ছিলাম । আমি সেই দিনগুলিতে সংশয়ে ছিলাম, মানুষ আমাকে মনে রাখবে তো? ভালবাসবে তো? কিন্তু যেদিন জিমনেশিয়ার ম্যানেজার হিসেবে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল, আমি টের পেলাম, মানুষ আমাকে আগের মতই ভালবাসে’, যোগ করেন তিনি।
জীবনের পুরোটা সময় উপভোগ করা ম্যারাডোনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, জীবন নিয়ে তার কোন অসন্তোষ আছে কিনা। ম্যারাডোনা উত্তর দিয়েছিলেন এক বাক্যে, ‘আমি খুশি’
সাথে লেজুড় জুড়ে বলেছিলেন ফুটবলের প্রতি তাঁর অসীম কৃতজ্ঞতার কথা, ‘ফুটবল আমাকে সবকিছু দিয়েছে। যেটা আমি কোনদিন কল্পনাতেও আনি নি, সেটাও!’
ম্যারাডোনা বলেছিলেন তিনি খুশি। তবে ক্লারিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের একাংশে আক্ষেপ লুকাতে পারেননি তিনি, ‘আমি যদি মাদকাসক্ত না হতাম, আমার অনেক কিছু দেওয়ার ছিল আরো। তবে আজ আর এসব ভেবে লাভ নেই। আক্ষেপ যদি কিছু থেকে থাকে, তবে তা হল আমার বাবা মা আর আমার সাথে নেই।’
ম্যারাডোনা শেষে বলেছিলেন, ‘আমি জানি স্বর্গ থেকে আমার মা আমাকে দেখছে, আশীর্বাদ করছে। আমি জানি তিনি আমাকে নিয়ে গর্বিত।’
মা দালমা সালভাদোরা ফ্রাংকো আসলেই গর্বিত কিনা এতক্ষণে হয়তো ম্যারাডোনা তাঁকে জিজ্ঞেস করে ফেলেছেন!
– মিরর অবলম্বনে